|
|
|
|
সব হামলা রোখা যায় না, বিতর্ক রাহুলের মন্তব্যে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মুম্বই বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলে বিতর্ক উস্কে দিলেন রাহুল গাঁধী!
ভুবনেশ্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আজ রাহুল বলেন, “সব সন্ত্রাসবাদী হামলা রুখে দেওয়া খুবই কঠিন।” সঙ্গে এ-ও বলেন, “৯৯ শতাংশ জঙ্গি হামলা ঠেকানো যায়। কিন্তু এক শতাংশ হামলা হয়তো ঘটেই যাবে।”
কালকের মুম্বই সন্ত্রাসের পর কেন্দ্রের সামগ্রিক নিরাপত্তা নীতি নিয়ে আজ এমনিতেই সরব ছিল বিজেপি। সে ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য সনিয়া-মনমোহন-রাহুল। তার ওপর গাঁধী পরিবারের তরুণ প্রজন্মের এই মন্তব্য রাজনৈতিক বিতর্কে অক্সিজেন জুগিয়েছে। যদিও মুম্বইয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে যখন রাহুল বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, “সন্ত্রাস মোকাবিলায় ব্যর্থ সরকার। তবু তাদের অহঙ্কার যায়নি। রাহুলের মন্তব্যে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।” এখানেই থেমে না থেকে আরও চাঁছাছোলা ভাবে বিজেপি বলেছে, রাহুলের এই মন্তব্য সন্ত্রাসবাদীদের মনোবল বাড়াবে বই কমাবে না।
স্বাভাবিক ভাবেই রাহুলকে আড়াল করতে নেমে পড়েছেন তামাম কংগ্রেস নেতারা। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “মুম্বইয়ের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবশ্যই নিশ্ছিদ্র হওয়া উচিত। কিন্তু এটাও ঠিক যে, কখনও সখনও সন্ত্রাসবাদীরাও সফল হতে পারে। তাই রাহুলের মন্তব্যে কোনও ভুল নেই।” অভিষেকের উল্টে বিজেপিকে দোষারোপ করে বলেন, সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে ওরা খামোখা রাজনীতি করছে।
রাহুলের সাংবাদিক বৈঠকে এর পর প্রশ্ন ওঠে, তা হলে আমেরিকা কী ভাবে সন্ত্রাসের ঘটনা রুখতে সফল হচ্ছে? জবাবে রাহুল বলেন, “মার্কিন সেনাবাহিনীও কিন্তু ইরাক বা আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের ঘটনা পুরোপুরি রুখতে পারেনি।” এই মন্তব্যের আবার তীব্র সমালোচনা করেছেন রাজ ও উদ্ধব ঠাকরে। বস্তুত, রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে রাহুলের সমালোচনায় আজ এক সুর দুই ঠাকরে ভাই। তাঁদের বক্তব্য, মুম্বই আর আফগানিস্তান এক নয়। কিন্তু ঠাকরেদের আবার পাল্টা আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। বলেছেন, “মুম্বইতে যখন পাক সন্ত্রাসবাদীরা আক্রমণ হেনেছিলেন, তখন কোন গর্তে লুকিয়েছিলেন রাজ ঠাকরে?”
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, রাহুলের মন্তব্যে কিন্তু এমনিতে ভুল নেই। আসলে শাসক দলের নেতারা এ ধরনের মন্তব্য করেই থাকেন। কিন্তু এই কংগ্রেসই বিরোধী দলে থাকাকালীন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেই সরকারের বিরুদ্ধে রে রে করে উঠতো। যেমনটা আজ বিজেপি করেছে। এক রাজনীতিকের কথায়, রাহুল এই মন্তব্য না করলেই ভাল করতেন। সব সন্ত্রাসের ঘটনা যে রোখা যায় না, সেটা ঠিক কথা। কিন্তু গত কাল মুম্বইয়ে সন্ত্রাসের শিকার যাঁরা, তাঁদের পরিবার বা আত্মীয়-পরিজনদের এ ধরনের মন্তব্য শুনতে কি এখন ভাল লাগবে?
সরকারকে আক্রমণের ক্ষেত্রে বিজেপি এ বার কৌশল কিছুটা বদলেছে। আর পাঁচটা সন্ত্রাসবাদী হামলার সময় বিজেপি নেতৃত্ব যে ভাবে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তোপ দাগেন, এ বারে তেমনটা করেননি। বরং গোটা আক্রমণের অভিমুখটি নিয়ে গিয়েছেন গাঁধী পরিবার ও মনমোহনের দিকে। আডবাণী থেকে অরুণ জেটলি, সকলেই কংগ্রেস নেতৃত্ব ও সরকারের সমালোচনা করে বলেন, সন্ত্রাস
মোকাবিলায় ভুল নীতিরই খেসারত দিতে হচ্ছে। বিজেপিকে বিপাকে ফেলতে সনিয়া গাঁধীর জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ বিল আনে, অথচ সন্ত্রাস বিরোধী কড়া আইন তৈরির জন্য পাঁচ মিনিট সময় বের করতে পারে না। বিরোধীদের ফোনে আড়ি পাততে গোয়েন্দাদের সময় কেটে যায়। এমনকী, মন্ত্রীদের বিবাদের জেরে এক মন্ত্রী আর এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আড়ি পাতেন! এই সময় ও শক্তি যদি তারা সন্ত্রাস মোকাবিলায় দিত, তা হলে অনেক ভাল কাজ হত। এমনকী, আড়াই বছর আগেকার ২৬/১১-র পরও যে সরকারের চোখ খোলেনি, সে কথা উল্লেখ করে তাঁরা বলেছেন, তখন ঢাকঢোল পিটিয়ে একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করা হলেও তার অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়নি।
পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রসঙ্গ তুলেও আডবাণী এবং জেটলি তীব্র কটাক্ষ করেন সরকারকে। বলেন, মুম্বইয়ের ঘটনার পিছনে যদি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন থাকে, সেই গোষ্ঠীও পাকিস্তানের প্রশ্রয় পায়। তারা ছায়া-যুদ্ধ চালাচ্ছে। আর পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ না করলেও ভারত অনায়াসে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে! শর্ম-অল-শেখ থেকে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রতি নরম মনোভাব দেখাতেও শুরু করেছেন। এখনও পর্যন্ত আফজল গুরুর ফাঁসি নিয়ে টালবাহানা করছে কেন্দ্র। দিগ্বিজয় সিংহ সন্ত্রাসবাদীদের হাত শক্ত করতে তাদের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন! কংগ্রেস নেতৃত্ব ও সরকার যদি সন্ত্রাস নিয়ে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করে, তা হলে ভবিষ্যতে আরও বেশি মূল্য দিতে হবে।
এই সমালোচনার সঙ্গেই যোগ হয়েছে রাহুলের প্রতি কটাক্ষ। |
|
|
|
|
|