|
|
|
|
|
সংগ্রহশালা |
|
ছবি: অনিতা দত্ত |
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ১৯৬২ সালে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় হেরিটেজ মিউজিয়াম রাজা রাজারাম সংগ্রহশালার জন্ম। নতুন মিউজিয়াম ভবনটি তৈরি হয় ২০০৬-এর ২৮ ডিসেম্বর। যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মিউজিয়ামটি আজ পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি অন্যতম বিশিষ্ট মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য বি কে ঘোষ, উপাচার্য পি কে সাহা প্রমুখ। নির্মলচন্দ্র চৌধুরি, শান্তিপ্রিয় রায়চৌধুরি এবং আরও অনেকে তাঁদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ দান করে সমৃদ্ধ করেছেন মিউজিয়ামটিকে। ভবনটি দোতলা। প্রবেশপথে চোখে পড়ে গোসানিমারি থেকে সংগৃহীত দ্বাদশ শতাব্দীর দ্বারপালের মূর্তি। একতলার তিনটি কক্ষের দু’টি গ্যালারি। রয়েছে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর পাল-সেন যুগের পাথরের মূর্তি। অন্য কক্ষটিতে গ্রন্থাগার অফিস এবং ক্লোজড সার্কিট টিভি। দোতলার তিনটি কক্ষের একটিতে দেখা যাবে টেরাকোটার সংগ্রহ, অন্যটিতে রয়েছে মুদ্রা, পুথি আর উত্তরবঙ্গ-হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির নিদর্শন মুখোশ, বাদ্যযন্ত্র, অলঙ্কার, মাছ ধরার যন্ত্র। মিউজিয়ামের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফজলুর রহমান জানান, সম্প্রতি খড়িবাড়ি থেকে চারটি বিরল মূর্তি আনা হয়েছে মিউজিয়ামে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ আসেন মিউজিয়ামে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার। সোমবার ছাড়া প্রতিদিনই মিউজিয়াম খোলা থাকে সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশ বর্ষ পূর্তিতে বিশেষ কোনও পরিকল্পনা? ফজলুর রহমান বলেন, চেষ্টা করছি উত্তরবঙ্গের অন্যান্য মিউজিয়ামের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটা প্রদর্শনী করার। অতীত থেকে বর্তমানের উত্তরবঙ্গকে মানুষ যাতে একই ছাদের তলায় দেখতে পান, প্রচেষ্টা রয়েছে তারও।
|
অবহেলিত |
|
ছবি: বৃন্দাবন ঘোষ |
রামাবতী থেকে আমাতি নামের উৎপত্তি। আমাতি উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার থানার একটি গ্রাম। অদূরে মহানন্দা নদী। কথিত আছে, পাল যুগে সেখানে ভীমাখালে রামপাল কৈবর্তরাজ ভীমকে পরাজিত করে নিহত করেন, তার পর তিনি সেখানে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। আর সেই নগরের প্রবেশদ্বারে স্থাপিত ছিল সেনাশিবির, যা আজ কোটবাড়ি নামে পরিচিত। সে দিনের উত্তর হট্ট, পূর্ব হট্ট ও মদৈহট্টে প্রচুর জিনিসপত্র আমদানি-রফতানি হত। আজকের উত্তরহাট, পূর্বহাট ও মাধাইহাট তার নামান্তর। সেখানে হাট আর বসে না। নগরে দোসতীনো, কাজলদিঘি, গাবরা নামে ছোট বড় বহু জলাশয় খনন করা হয়েছিল। আমাতি গ্রামের বহু পুরনো মাটির ঢিবির পাশে সে-সব জলাশয় আজও দেখা যায়। নগরের মন্দিরে মন্দিরে পূজিত হত বহু দেবদেবীর মূর্তি। অবহেলায় পড়ে থাকা বৌদ্ধ চক্রটি তার পরিচয় বহন করে থাকে। সে কালের চাষবাস, শিক্ষাদীক্ষা, ধর্মচর্চা, রাজ্য শাসনের কেন্দ্রটি আজ পুরোপুরি অবহেলার শিকার। তার পরেই দিনে দিনে যে যার মতো করে অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি আত্মসাৎ করছে। চেষ্টা করলে এ নগরীর হৃত গৌরব কি রক্ষা করা যায় না?
|
নিবেদিতপ্রাণ |
|
ছবি: গোবিন্দ তালুকদার |
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বংশীহারি ব্লকের সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম চটকাহার। এই গ্রামেরই বাসিন্দা ভোজরাই হেমরম আদিবাসী সমাজে শিক্ষার প্রসারে কাজ করে চলেছেন বহু বছর। প্রচারবিমুখ মানুষটি রাজ্য সরকারের নদীসেচ প্রকল্পের এক জন কর্মচারী, অবসরের দুয়ারে। বাড়ির সামনে বলিপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট মাঠের এক কোণে আমগাছের ছায়ায় সকাল-বিকাল তাঁকে দেখা যায় সৃষ্টির নেশায়, কবিতা-প্রবন্ধ-গল্পের আঙিনায়। সাঁওতালি ভাষায় লিখেছেন কবিতা ও গানের বই ১২টি। প্রবন্ধের বই তিনটি। ছোটদের ছড়ার বই ‘গিদা’। কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁদেশ’ স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার সিলেবাসভুক্ত। রাঁচি (ঝাড়খণ্ড) বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কবিতা পাঠ্য। বাংলা ভাষাতেও তাঁর দখল অপূর্ব। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কিছু কবিতার অনুবাদ করেছেন সাঁওতালি ভাষায়। সাম্প্রতিক প্রকাশিত বাংলা ভাষায় তাঁর কবিতার বই কালের প্রবাহে। স্থানীয় কয়েকটি সংস্থা তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছে। ২০০৪-এ রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে তাম্রপত্র ও সাম্মানিক দিয়ে সংবর্ধিত করেন। এই লেখকের লেখা প্রকাশ করতে কোনও প্রকাশনই এগিয়ে আসেনি। নিজের টাকায় এবং নিজের উদ্যোগে স্থানীয় প্রেস থেকে নিজের সৃষ্টি প্রকাশ করেন মাঝে মাঝে। কোনও রকম অভিমান নয়, ক্ষোভ নয়, আপনভোলা এই আদিবাসী লেখক জীবনযাপন করেন অতি সাধারণ ভাবে। দক্ষিণ দিনাজপুর সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চাকেন্দ্র বুনিয়াদপুর সাহিত্যবাসর-এর সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তাঁর কবিতা ইত্যাদি প্রকাশিত হয় কবিতাজগৎ, চষেল, রুদোক প্রভৃতি পত্রিকায়। সাহিত্যচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ এই প্রবীণ আদিবাসী লেখক।
|
চড়কমেলা |
|
ছবি: সুশীল ভৌমিক |
এ বছরেও কোচবিহার জেলার মাঘপালা অঞ্চলের ঝাউবাড়ি গ্রামে চড়ককে কেন্দ্র করে সাত দিন ব্যাপী ৬৫ বছরের বিশাল ঐতিহ্যবাহী মেলা অনুষ্ঠিত হল। মেলা স্থানের উত্তরপ্রান্তে গৌরীপাটে শিবমূর্তি শয়ান ও ত্রিশূল উন্মোচিত পাটমন্দির অবস্থিত। কথিত আছে, মেলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক স্বর্গীয় গঙ্গাচরণ সরকার ও ভবানী হালদার ১৯৫৬-য় গৌরীপাটটি সুদূর নবদ্বীপ থেকে আনয়ন করেন। গৌরীপাটটি নিম কাঠের, কারিগর মনোহর সূত্রধর। মেলায় সাত দিনে প্রায় দেড় লক্ষ লোকের সমাগম ঘটে, মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের নাচ-গানের আসর বসে, যেমন বাউল, পদাবলি, যাত্রা ইত্যাদি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও ভিন রাজ্য থেকেও গায়কেরা এই মেলায় এসে থাকেন। সাধারণত চড়কের গাছ শিমুল কাঠের হয়, ি এ মেলায় চড়কগাছটি তেঁতুল কাঠের তৈরি এবং সেটি চড়কের পর একটি জলা জায়গায় ডুবিয়ে রাখা হয় এবং পরের বার তুলে এনে আবার চড়কে লাগানো হয়। মেলার আকর্ষণ এতটাই যে, এলাকার মেয়েরা পুজোয় বাপের বাড়ি না এসে এই মেলার সময় আসেন।
|
উত্তরের কড়চা বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে
পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|
|
|
|
|
|