স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখুন কর্মী-ডাক্তার কিছুই নেই,
মেলে না সর্পদষ্টের চিকিৎসাও
²
হাসপাতালের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সের একটি খারাপ। অন্যটি ব্যবহার করতে গেলে দিতে হয় তেলের ভাড়া। তিনটি নলকূপের মধ্যে দু’টিই বিকল। ফলে ভর্তি থাকা রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজনকে জল আনতে হয় হাসপাতাল চত্বরের বাইরে থেকে। অভিযোগ, সারা দিনে অন্তত ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং চলে। রোগীদের যে পাত্রে খেতে দেওয়া হয় তা এতটাই নোংরা যে অনেকে খেতে অস্বীকার করেন। সন্ধ্যা ৬টার পরেই বন্ধ হয়ে যায় হাসাপাতলের মূল ফটক। আরও অভিযোগ, রোগীকে ভাল ভাবে না দেখেই চিকিৎসেকরা তাঁদের পাঠিয়ে দেন বর্ধমান মেডিক্যাল হাসপাতালে। প্রায়শয়ই গরহাজির থাকেন চিকিৎসক, সেবিকা থেকে সাফাই কর্মীরা। দুর্দশার এই চিত্র ভাতারের চিত্তরঞ্জন গ্রামীণ হাসপাতালের।
শনিবার ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক বনমালি হাজরা হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে খোঁজ নিতে যান। বিএমওএইচ হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত প্রতিটি অভিযোগ মেনে নিয়ে বলেন, “এখানে পরিকাঠামো সত্যিই দুর্বল। প্রচুর অব্যবস্থা ও বিশৃঙ্খলা রয়েছে।” তিনি জানান, যেখানে ৮ জন চিকিৎসক প্রয়োজন, সেখানে রয়েছেন মাত্র তিন জন। দশ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর জায়গায় আছেন পাঁচ জন। এক্স-রে, প্যাথলজির কাজ করতে যে কর্মীদের দরকার তাঁরা আদৌ নেই। তাই হাসপাতালে এ সব কাজ বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু দিন ধরে। তাঁর স্বীকারোক্তি, “চিকিৎসক, সাফাইকর্মীর অভাবে হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা, চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব।” সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে নিয়ে যাওয়ার আইন থাকলেও, কী করে তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএমওএইচ-এর সাফাই, “দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রথা চলছে
নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে। আমাদের পক্ষে তা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।”
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে রয়েছে মোট ছ’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এরুয়ার, নাসিগ্রাম, বলগনা, বনপাস কামার পাড়া, বিজিপুর ও সাহেবগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রতি দিনই আসেন বহু অসুস্থ মানুষ। তার সঙ্গে যোগ দেন এলাকার অন্য জায়গাগুলি থেকে আসা রোগীরা। ফলে রোগীর চাপে চিত্তরঞ্জন গ্রামীণ হাসপাতালের নাভিশ্বাস ওঠে। বিএমওএইচের দাবি, এই হাসপাতালে দিনে প্রায় ৫০ জনের মত রোগী আসেন। কিন্তু স্থানীয় মানুষের দাবি, কম করে শতাধিক রোগীকে এখানে আসতে হয়। কিন্তু অধিকাংশকেই কার্যত চিকিৎসা না করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বিধায়ক বলেন, “এখানে অবিলম্বে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার শুরুর দাবি জানিয়েছি আমরা।”
তড়িদাহত হয়ে ২৪ মে হাসপাতালে ভর্তি হন স্থানীয় আলিনগরের বাসিন্দা চম্পা বেগম। অভিযোগ, ভর্তি হওয়ার পরে তাঁকে যে দুধ খেতে দেওয়া হয়েছিল তাতে ভাসছিল প্রচুর পোকা। রাধানগরের বাসিন্দা বৃদ্ধ শেখ লুৎফর রহমান বুকে যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়, তাঁর হৃদযন্ত্রে গোলমাল রয়েছে। কিন্তু ইসিজি-সহ প্রায় কোনও পরীক্ষাই করা হয়নি। শুধু স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে। হাসপাতালের এক কর্মীর কথায়, “যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা বর্ধমানে চলে যান। যাঁরা পারেন না, এই হাসপাতালে পড়ে থাকেন।”
হাসপাতালের ভবনের চারি দিক আগাছায় ভর্তি। চিকিৎসকদের আবাসনও বেহাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতালের পুরনো ভবনের ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ে। নিকাশি নেই বললেই চলে। রাতে হাসাপাতাল চত্বর দিয়ে হেঁটে যেতেও ভয় করে, জানালেন এক নার্স। তিনি জানান, ঝোপঝাড়ে সাপ থাকে। সাপের ছোবলের চিকিৎসাও তো এখানে মেলে না। যেতে হয় বর্ধমানে।
বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির ভবন, পাঁচিল ইত্যাদি নতুন করে গড়তে হবে তাদের প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে সাপে ছোবলের সিরাম ভাতারে কেন নেই তা খোঁজ নিতে হবে।”

Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.