|
|
|
|
মমতা দেখুন |
‘ভাগ্যের ভরসা’য় চোখ অস্ত্রোপচার ন্যাশনালে |
সোমা মুখোপাধ্যায়² কলকাতা |
হতবাক হয়ে তাকিয়েছিলেন প্রশান্ত পাল। ৭৫ বছরের বাবার চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করাতে এসেছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর পরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের কাছে তিনি যা জেনেছেন তাতে মনে হচ্ছে, না এলেই হয়তো ভাল হত!
দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্তবাবু কী জানলেন হাসপাতালে এসে? জানলেন, যে সব সরঞ্জাম ব্যবহার করে তাঁর বাবার চোখের অস্ত্রোপচার হচ্ছে সেগুলি জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়াটাই হাসপাতালে অকেজো হয়ে রয়েছে। অর্থাৎ সঠিক পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত না করেই প্রতিদিন রোগীদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে এখানে। চোখের অস্ত্রোপচারে সংক্রমণের অর্থ নিশ্চিত অন্ধত্ব। কলকাতার এক নামী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেটা ঠেকানোরই ব্যবস্থা নেই?
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যে তথ্য সামনে এল, তা আরও ভয়ঙ্কর। শুধু চক্ষু বিভাগ নয়, একসঙ্গে জেনারেল সার্জারি, ইমার্জেন্সি, গাইনি এবং অপথ্যালমোলজি বিভাগে সরঞ্জাম সংক্রমণ-মুক্ত করার যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে ছিল। অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম অর্থাৎ ছুরি-কাঁচি থেকে শুরু করে গজ, তুলো, ব্যান্ডেজ, গ্লাভ্স, এমনকী চিকিৎসক-নার্সের গাউনও জীবাণুমুক্ত করা হয় যে যন্ত্রে, তার নাম অটোক্লেভ। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র এটাই।
হাসপাতালের সুপার পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “অপথ্যালমোলজি বাদ দিয়ে বাকি বিভাগগুলির জন্য নতুন অটোক্লেভের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু অপথ্যালমোলজি অর্থাৎ চক্ষু বিভাগে অটোক্লেভ আসতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে।”
তত দিন কী হবে? বিভাগের চিকিৎসকদের উত্তর, “তত দিন ভাগ্যের ভরসায় অস্ত্রোপচার!” চক্ষু বিভাগে কাগজে-কলমে তিনটি অটোক্লেভ যন্ত্র রয়েছে। তার একটি ’৯৫ সাল থেকেই খারাপ। বাকি দু’টি যন্ত্রের একটি গত মার্চ মাস থেকে অকেজো। আর সবেধন নীলমণি অন্য যন্ত্রটি থেকে ক্রমাগত জল বেরোচ্ছে। যে যে জায়গায় ফুটো, সেখানে কাপড় গুঁজে রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই অস্ত্রোপচারের পরে সংক্রমণের অভিযোগ তুলে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন দুই রোগীর আত্মীয়। তাঁদের অভিযোগ, বড় হাসপাতালে সুচিকিৎসার আশায় এসেছিলেন। কিন্তু এখানে এসে দৃষ্টিশক্তি খোয়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাঁদের রোগীর। এক রোগীর আত্মীয় লিখেছেন, “অস্ত্রোপচারের পরদিনই আমার মায়ের চোখ থেকে পুঁজ বেরোতে শুরু করে। পরে জানতে পারি সংক্রমণ হয়েছে।”
আগে যেখানে চক্ষু বিভাগে দিনে গড়ে ৩০-৩৫টি অস্ত্রোপচার হত, এখন সেখানে হচ্ছে বড়জোর ১৫টি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত মার্চ মাসে একটি অটোক্লেভ খারাপ হওয়ার পরে প্রশাসনিক কর্তাদের এখনও পর্যন্ত আটটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির ন্যূনতম পরিবর্তনও হয়নি।
বিভাগীয় প্রধান জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, “খারাপ কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেও তো দায় এড়াতে পারব না। কর্তৃপক্ষকে বলেছি, পুরনো যন্ত্র যখন সারানো যাচ্ছে না, তখন নতুন যন্ত্র দিন। এ ভাবে চলার চেয়ে অস্ত্রোপচার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়াই হয়তো ভাল হবে। রোগীদের নিয়ে এ ভাবে ছেলেখেলা চলতে পারে না।” ’৯৫ সাল থেকে যে যন্ত্রটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে, ১৬ বছরেও সেটা সারানোর কথা মনে পড়ল না? বিভাগীয় প্রধানের জবাব, “আমি বিষয়টা জানতাম না। এত বড় একটা তথ্য আমাকে জানানোর প্রয়োজনই মনে করেননি কেউ।” |
|
|
|
|
|