|
|
|
|
অভিযোগ ফাঁসিদেওয়ায় |
অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের টাকায় চা বাগানের রাস্তা |
সঞ্জয় চক্রবর্তী ² খড়িবাড়ি |
অনগ্রসরশ্রেণি কল্যাণ দফতরের বরাদ্দ প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। ওই টাকায় শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের কর্তাদের ঘনিষ্ঠ দুই ঠিকাদারের চা বাগানে যাওয়ার রাস্তা ও ২টি কালভার্ট তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ঘোষপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাপাতি সেতুর কাছে। ওই চা বাগান থেকে কাঁচা পাতা ঘোষপুকুর কিংবা খড়িবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ঘুরপথে একটি রাস্তা রয়েছে। অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের বরাদ্দ টাকায় যে রাস্তা ও কালভার্ট তৈরি হচ্ছে তাতে সহজেই চা বাগান থেকে কাঁচাপাতা ঘোষপুকুর-খড়িবাড়ি সড়কে আনা যাবে। প্রকল্পটি মঞ্জুর হয়েছে অবশ্য এই যুক্তি দেখিয়ে যে ওই রাস্তা এবং কালভার্ট তৈরি হলে চা বাগান লাগোয়া ধূমপুর গ্রামের বাসিন্দারা সহজেই ঘোষপুকুর-খড়িবাড়ি সড়কে উঠতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা হয়েছে ধূমপুর গ্রামের বাসিন্দারা আপত্তি তোলায়। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার বক্তব্য, ওই রাস্তার কোনও প্রয়োজন নেই তাঁদের। এলাকার অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা কেন চা বাগানের রাস্তা তৈরি করা হবে সেই প্রশ্ন তুলে তদন্তও চেয়েছেন তাঁরা।
অনগ্রসর কল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তা ও কালভার্ট তৈরির ওই প্রকল্পটি সরাসরি দফতরের কলকাতা অফিস থেকে মঞ্জুর করা হয়েছে। টেন্ডার না-করে কাজটি সরাসরি ম্যাকিনটোস অ্যান্ড বার্ন সংস্থাকে দেওয়া হয়। ওই সংস্থা আবার কাজটি করার দায়িত্ব দেয় চা বাগান মালিক তথা মহকুমা পরিষদের ঠিকাদার বিকাশ রায় এবং তাঁর সহযোগীকে। দফতরের শিলিগুড়ির আধিকারিক সুনীল অগ্রবাল বলেন, “প্রকল্পটি যে হেতু কলকাতা অফিস থেকে মঞ্জুর করা হয়েছে তাই বিস্তারিত জানা নেই। খোঁজ নেব।”
ওই চা বাগানের মালিক ও মহকুমা পরিষদের ঠিকাদার বিকাশ রায়ের দাবি, “প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি করলে সভাধিপতি এবং স্থানীয় সিপিএম নেতারা কথা বলে তো সব মিটিয়ে দিয়েছেন। ঘোষপুকুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান কারলুস লাকড়াও সব জানেন। এখন আবার এসব কথা কেন উঠছে? ওই রাস্তাটি চা বাগানের ভিতর দিয়ে লাগোয়া ধূমপুর গ্রাম পর্যন্ত গিয়েছে। রাস্তা এবং কালভার্ট হওয়ায় ওই গ্রামের বাসিন্দারাও উপকৃত হবেন। অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।” শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি জ্যোতি তিরকি বলেন, “এমন কোনও ঘটনা জানা নেই। খোঁজ নেব।”
ঘোষপুকুরের প্রাক্তন প্রধান কারলুস লাকড়াও বলেন, “বিকাশবাবু ভুল তথ্য দিচ্ছেন। ওই রাস্তা এবং কালভার্ট চা বাগানের জন্যই তৈরি করা হচ্ছে। আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম। এলাকায় আরও অনেক কাজ রয়েছে। ওই টাকায় সেসব করা যেত।” রাস্তার একাংশ এবং একটি কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে লাগোয়া সোনাচাঁদি চা বাগানের জমিতে। ওই চা বাগানের ম্যানেজার রাজেন্দ্র শর্মাও বলেন, “ওই রাস্তা দিয়ে কারা যাতায়াত করবে জানি না। আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম। বাগানের মালিককেও জানাই। তার পরে কী হয়েছে জানি না।” এলাকার কংগ্রেস নেতা সদানন্দ রায়চৌধুরী বলেন, “ওই ঠিকাদার এলাকার সিপিএম নেতাদের ঘনিষ্ঠ। সিপিএম নেতাদের প্রভাবিত করে ওই প্রকল্পের মঞ্জুরি আদায় করা হয়েছে। অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রীকে বিষয়টি জানাব।”
ধূমপুর গ্রামের বাসিন্দা উদয় রায় এবং দিলীপ সিংহ বলেন, “গ্রাম থেকে আমাদের প্রতিদিন ফদিজোত বাজারে যাতায়াতের রাস্তা আছে। সরকারি টাকায় চা বাগানের ভিতরে রাস্তা হবে জেনে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আমরা ফাঁসিদেওয়ার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং বিডিওকে স্মারকলিপি দিয়ে আপত্তি জানাই। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” ফাঁসিদেওয়ার সভাপতি প্রণবেশ মণ্ডল এবং বিডিও বাদশা ঘোষাল স্মারকলিপি হাতে পাননি বলে দাবি করেছেন। বিডিও বলেন, “কী ভাবে রাস্তা তৈরি হচ্ছে সেটা খোঁজ নিচ্ছি।” |
|
|
|
|
|