|
|
|
|
জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ |
ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হস্টেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²জলপাইগুড়ি ও বসিরহাট |
হায়দরাবাদে চাকরি পাকা হয়ে গিয়েছিল। শনিবার রাতে ট্রেনে ওঠারও কথা ছিল বাড়ি ফেরার জন্য। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক তরুণ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার।
জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মনোজিৎ রায়ের (২২) মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। শনিবার রাতে কলেজ হস্টেলের কয়েক জন আবাসিক মনোজিৎকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার চাঁদনগর গ্রামে বাড়ি এই তরুণের। পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পনা করে ওই ছাত্রকে খুন করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন বাড়ির লোকেরা।
পুলিশ ও হস্টেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৬ মে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে হস্টেল থেকে চতুর্থ বর্ষের অধিকাংশ ছাত্র বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। শনিবার মনোজিতেরও বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তার আগে সন্ধ্যায় তিনি ‘বহিরাগত’ কোনও এক জনের সঙ্গে হস্টেলের বাইরে গিয়েছিলেন। রাতে হস্টেলের কোনও এক ঘরে মনোজিৎ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন বলে সহপাঠীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। তার পরেই তাঁকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা ওই ছাত্রকে মৃত ঘোষণা করলেও হস্টেলের সদস্যরা তা মানতে চাননি। তাঁরা মনোজিৎকে শহরের রায়কতপাড়া এলাকার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানেও চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করায় ফের মনোজিৎকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। |
|
বসিরহাটে শোকগ্রস্ত পরিবার। নির্মল বসু |
কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি নিরঞ্জন সরকার বলেন, “আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃতের পরিবারের লোকেদের খবর দেওয়া হয়েছে। সোমবার তাঁরা জলপাইগুড়িতে পৌঁছলে ময়নাতদন্ত হবে।” এখন মনোজিতের দেহ রাখা আছে সদর হাসপাতালের মর্গে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মনোজিতের বাড়ি থেকে তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। এক সহপাঠীই ফোন ধরে জানান, মনোজিৎ এক ব্যক্তির সঙ্গে বাইরে গিয়েছেন। বহিরাগতের সঙ্গে কেন মনোজিৎ হস্টেল ছেড়ে গেলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই হায়দরাবাদের একটি সংস্থায় চাকরি পেয়েছিলেন মনোজিৎ। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ জ্যোর্তিময় ঝম্পোটি বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই আমরা চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের হস্টেল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তার পরেও ওই ছাত্র কেন হস্টেলে ছিলেন, সেটা আমাদের কাছেও স্পষ্ট নয়।
বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” ঘটনার পর থেকে মনোজিতের মোবাইলের হদিসও মিলছে না। তিনি হস্টেলের যে ঘরে থাকতেন, সেটি ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। ওই ঘরের দরজায় লাল কালিতে কিছু লেখাও পেয়েছে পুলিশ। তলায় নাম‘মুন্না’। হস্টেল সূত্রের খবর, সেখানে মনোজিৎকে ওই নামেই ডাকা হত।
মনোজিতের বাবা মধুসূদন রায় অটো চালক। কষ্ট করে তিনি ছেলের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ভেঙে পড়েন। হস্টেলের আবাসিকেরাই রাতে ফোন করে খবর দেন।
মধুসূদনবাবুর কথায়, “হস্টেলে ওকে জোর করে মাদক খাওয়ানোর চেষ্টা হত বলে বারবার মনোজিৎ অভিযোগ করেছে। অগস্টে চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা। বাড়ি ফেরার আগে এমন কী হল যে, বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়ে মারা গেল? আমার সন্দেহ, ওকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।” এ দিন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুরুল ইসলাম মনোজিতের বাড়িতে যান। ঘটনার তদন্তে সরকারের তরফে সমস্ত সাহায্য করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। |
|
|
|
|
|