|
|
|
|
মহাকরণে বৈঠক আজ : গোর্খাল্যান্ড নিয়ে জেদ নয় |
পাহাড়ের উন্নয়নই লক্ষ্য এখন মোর্চার |
কিশোর সাহা ² শিলিগুড়ি |
গোর্খাল্যান্ডের দাবি আপাতত সরিয়ে রেখে দার্জিলিং পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়নে জোর দিতে চাইছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কারণ, গোর্খাল্যান্ডের দাবি মানেই বন্ধ, বিক্ষোভ-অবরোধ। পরিণতিতে বিপর্যস্ত হবে জনজীবন ও অর্থনীতি। যা কি না মোর্চার বিরুদ্ধে পাহাড়বাসীর ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। মোর্চার অন্দরের খবর, তাই আজ, সোমবার মহাকরণে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে পাহাড়ের উন্নয়নের টাকা জোগাড়কেই ‘পাখির চোখ’ করবেন নেতারা। সেই লক্ষ্যেই দ্রুত অন্তর্বর্তী স্বশাসনের প্রক্রিয়া শুরুর আর্জি জানাবেন তাঁরা। মোর্চা সূত্রের খবর, দুই বিধায়ক-সহ সাত সদস্যের যে প্রতিনিধি দল যাবেন, তাঁরা পাহাড়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশেষ ‘প্যাকেজ’ ঘোষণার জন্য রাজ্য সরকারকে অনুরোধও জানাবেন।
মোর্চার অন্দরের খবর, দলের নেতা-কর্মীরাও বুঝতে পারছেন, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে জেদ ধরে থাকা মানেই রাজ্যের নতুন সরকারের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে পাহাড়বাসীকে ‘ভাইবোন’ বলে সম্বোধন করে মিলেমিশে সার্বিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, সেখানে বঞ্চনার অভিযোগ এখনই বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব নয়। এ কথা স্বীকার করছেন মোর্চা নেতাদের অনেকেই। তা ছাড়া, ‘হৃদয়ে’ গোর্খাল্যান্ডের দাবি থাকলেও জনবিরোধী ওই আন্দোলন পাহাড়বাসী যে মেনে নেবেন না, সেই উপলব্ধিও মোর্চা নেতাদেরও হয়েছে। কেননা, বন্ধ-হরতালের রাজনীতি যে মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে, তা মোর্চা নেতারা ভাল মতোই বুঝেছেন। হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পাহাড় থেকে কার্যত নির্বাসিত সুবাস ঘিসিং এ বারের বিধানসভা ভোটে ৫০ হাজার ভোট পাওয়ায় মোর্চা নেতাদের সেই উপলব্ধি আরও দৃঢ় হয়েছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন, পাহাড়ের মানুষ এখন ‘গোর্খাল্যান্ড’-এর চেয়েও বেশি জোর দিচ্ছেন, শান্তি, সুস্থিতি, নিয়মিত রোজগারের নিশ্চয়তাকে। মোর্চা নেতাদের একাংশ তাই ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছেন, নিয়মরক্ষার জন্যই এখন মাঝেমধ্যে গোর্খাল্যান্ডের দাবির কথা বলতে হবে। যেমন, বিজেপি রামমন্দিরের কথা বলে। তবে সব দিক ভেবেই আজ মহাকরণের বৈঠকে উন্নয়নের উপরে জোর দেওয়ার ব্যাপারে মোর্চার মধ্যে মোটামুটি ঐকমত্য হয়েছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন নানাবিধ আন্দোলনে বিপর্যস্ত পাহাড়ের আম-জনতার ক্ষোভ ও হতাশার কথা পৌঁছেছে মহাকরণেও। রাজ্য সরকারও বুঝতে পারছে, মোর্চা নেতাদের প্রতি পাহাড়বাসীর ক্ষোভ ও তাঁদের হতাশাকে কাজে লাগানোর এটাই উপযুক্ত সময়। তাই চাই উন্নয়ন। সেই কাজে রাজ্যের নতুন সরকার আন্তরিক ভাবে সামিল। উল্লেখ্য, রেলমন্ত্রী থাককালীন গত বছরের শেষে পাহাড়ে গিয়ে দার্জিলিঙের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ ‘প্যাকেজ’ আদায় করার আশ্বাস দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে রেলের তরফেও পাহাড়ে একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
এই মুহূর্তে রাজ্য সরকার ও মোর্চার তরফে অনেকেই মনে করছেন, সমস্যার জট ছাড়িয়ে পাহাড়ের উন্নয়ন চালু করতে মোর্চার ৪ বিধায়ককে সামনে রাখা যেতে পারে। যে-হেতু মোর্চার বিধায়করা তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকারকে সমর্থন করেছেন, তাই পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে তাঁদের বিশেষ দায়িত্ব নেওয়ারও অনুরোধ করতে পারে রাজ্য সরকার। মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেছেন, “আমরা খোলামনে সব বিষয়েই আলোচনা করব। আলোচনার পরে যা বলার বলব।” আশাবাদী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেছেন, “আমরা আশাবাদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিক প্রয়াসে আমরা সকলে মিলে পাহাড়ের সব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারব।” |
|
|
|
|
|