|
|
|
|
সচেতক করে রেজ্জাককে লাগামের চেষ্টা সিপিএমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²কলকাতা |
বারবার ‘তিরস্কারে’ কাজ হয়নি। মুখ বন্ধ করতে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে এ বার ‘পুরস্কার’ দিল সিপিএম!
বিধানসভায় সিপিএমের পরিষদীয় দলের সচেতক করা হল প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী রেজ্জাককে। দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিধানসভায় ‘পার্টি টিম’ গড়ে তোলা হবে। বিরোধী দলনেতা হিসাবে ওই ‘টিমে’র আহ্বায়ক হচ্ছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই টিমে’র দায়িত্ব হবে বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে দলের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা। ‘পরিবর্তনে’র প্রবল হাওয়ায় যে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গুরুত্বপূর্ণ বিধায়কেরা এ বারেও জিতেছেন, তাঁদের রাখা হয়েছে ‘টিমে’। দলে রয়েছেন রেজ্জাক, আনিসুর রহমান, সুশান্ত ঘোষেরা। পাশাপাশি, বিধানসভার বাইরে থেকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব, প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমকে দলে রাখা হয়েছে।
তবে এই উদ্যোগের মধ্যে সব চেয়ে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত রেজ্জাককে দলের সচেতক করা। বিধানসভায় বামফ্রন্টের সচেতক ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক। রেজ্জাক হবেন সিপিএম পরিষদীয় দলের সচেতক। পরিষদীয় রাজনীতিতে সচেতকের দায়িত্ব পালন করতে হওয়ায় রেজ্জাকও আর প্রকাশ্যে বেফাঁস মন্তব্য করতে পারবেন না বলে মনে করছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব! রাজ্য কমিটির বৈঠকে রবিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বিধানসভায় ‘পার্টি টিম’ গঠন এবং রেজ্জাককে সচেতক করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। পরে রেজ্জাক বলেছেন, “দল যা দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করব।” সিপিএমের এক নেতার কথায়, “হুইপ মানে চাবুক। রেজ্জাককে হুইপের (সচেতক) চাবুক দেওয়া হল!” |
এর আগে একাধিক বার দলের নানা সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন রাজ্য কমিটির সদস্য রেজ্জাক। তাঁকে তার জন্য ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে, রাজ্য কমিটির আগের বৈঠকেই কঠোর ‘ভর্ৎসনা’ করা হয়েছে। তার পরেও তিনি মুখ খোলায় তাঁকে আলাদা করে ডেকে বোঝানোও হয়েছে। জোর করে মুখ বন্ধ করতে গেলে কাজ হচ্ছে না দেখেই শেষ পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্বশীল পদে বসানো হল বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। রেজ্জাক অবশ্য ইতিমধ্যেই দলীয় নেতৃত্বের পরামর্শ মেনে দলীয় মঞ্চকে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছেন। এ বারের রাজ্য কমিটির বৈঠকেই তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও নিরুপম সেনের প্রবল সমালোচনা করেছেন। কিন্তু দলের বাইরে নয়। বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের মধ্যেও ক্যানিং পূর্ব থেকে ২১ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন রেজ্জাক। বরাবরই ‘বাস্তববাদী’ নেতা বলে তিনি পরিচিত, ভাল বক্তা হিসাবে সহজে মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছতে পারেন। তাঁকে বিরোধী দলনেতা কেন করা হল না, তা নিয়ে ক্ষোভ ছিল দলের একাংশের। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই ক্ষোভ প্রশমনেরও চেষ্টা হল বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক পরে সিপিএম এ বার বিরোধী ভূমিকায়। বামফ্রন্টের ৬১ জন (মোস্তাফা বিন কাশেমের মৃত্যুতে ৬২ থেকে এক জন কমে গিয়েছে) বিধায়কের মধ্যে ৩১ জনই নতুন। এই অবস্থায় বিধানসভার ভিতরে এবং বাইরে ‘দায়িত্বশীল’ ভূমিকা পালন করতে চাইছেন বিমানবাবুরাই। সেই জন্যই তৈরি হয়েছে ‘পার্টি টিম’। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “সরকারে থাকার সময়েও এই ধরনের টিম আগে ছিল। সংসদে যেমন সংসদীয় বোর্ড হয়, এটাও অনেকটা সেই রকম। বিধানসভার বাইরে দল যে সব আন্দোলনের কর্মসূচি নেবে, যে পথে চলবে, তার সঙ্গে বিধানসভার অন্দরের ভূমিকার সমন্বয় সাধন করবে এই ‘টিম’। বলা যেতে পারে ‘পরিষদীয় টিম’।” বিধানসভায় বিরোধী বেঞ্চের সামনের সারিতে যাঁরা আসন পেয়েছেন, তাঁরা এই ‘টিমে’র সদস্য হিসাবে রবীনবাবু, হালিমদের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মসূচি ঠিক করবেন। |
|
|
|
|
|