|
|
|
|
উত্তরপাড়ায় ফিল্ম সিটি গড়বে রাজ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²উত্তরপাড়া ও কলকাতা |
এ রাজ্যে ফিল্ম সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। উত্তরপাড়ায় গঙ্গা ঘেঁষা চারশো বিঘা জমিতে তারা প্রস্তাবিত ফিল্ম সিটি গড়তে চায়। ওই জমির মালিক কলকাতা পুরসভা। রবিবার ওই জমি দেখতে আসেন কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, দীপঙ্কর দে এবং চিত্র পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী। সেখানে দাঁড়িয়েই মেয়র তথা বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভনবাবু সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বলতে পারেন কাজ শুরু হয়ে গেল। কাগজপত্র তৈরি করা শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
পুরসভা সূত্রের খবর, মহানগরের কাছাকাছি ফিল্ম সিটি তৈরির ইচ্ছে মমতার। সেই কারণেই উত্তরপাড়ায় পুরসভার হাতে থাকা ওই জমি বেছে নেওয়া হয়েছে। জমি দেখার পরে রঞ্জিত মল্লিক বলেন, “এ রাজ্যে ফিল্ম সিটি না থাকায় বাংলা ছবির শু্যটিংয়ে হায়দরাবাদ, মুম্বই প্রভৃতি রাজ্যে ছুটতে হয়। তাই, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলা ছবি তৈরির খরচ কমে যাবে। তা ছাড়া ওড়িষা, আসামের মতো রাজ্যগুলি ছবি তৈরি করতে এখানে আসবে।” টলিউডের শিল্পীরা মনে করেন, হুগলি নদীর কোল ঘেঁষা এই ফিল্ম সিটি আকর্ষণীয় হবে ছায়াছবির আন্তর্জাতিক বাজারেও। এটি চালু হলে টলিউডে আউটডোর শু্যটিংয়ের প্রয়োজনীয়তাও বহুলাংশে কমে যাবে। দীপঙ্কর দে বলেন, “এখন বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে হবে।” ফিল্ম সিটি গড়ার টাকা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সুদীর্ঘ আলোচনা করা হবে বলে দীপঙ্করবাবু জানান। |
|
এলাকা ঘুরে দেখছেন দীপঙ্কর দে, রঞ্জিত মল্লিক, হরনাথ চক্রবর্তী ও শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছবি: প্রকাশ পাল। |
এ দিন দুপুর পৌনে একটা নাগাদ উত্তরপাড়ায় জমি পরিদর্শনে আসেন শোভনবাবুরা। বেশ কয়েকটি ভাঁটা তাঁরা ঘুরে দেখেন। গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা ওই সমস্ত জায়গা দেখে দৃশ্যতই উচ্ছ্বসিত রঞ্জিতবাবুরা। শোভনবাবুদের সঙ্গে ছিলেন উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকি ধামালি, তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদবেরা।
পুরসভা সূত্রের খবর, উত্তরপাড়ার কোতরং বটতলা থেকে ধারসা পর্যন্ত জিটি রোডের ধারে গঙ্গা লাগোয়া প্রায় সাড়ে ৪শো বিঘা জমি রয়েছে কলকাতা পুরসভার হাতে। ওই সমস্ত জমির সিংহভাগ অংশেই আপাতত ইটভাটা রয়েছে। অন্তত ১১টি ইটভাঁটা ছাড়াও ৩টি বালিখোলা (গঙ্গা থেকে বালি তোলা) রয়েছে। শোভনবাবুর দাবি, প্রত্যেকটি ভাঁটাই বেআইনি ভাবে চলছে। সেগুলি খালি করার জন্য আগেই পুরসভার তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ না মেনে কয়েকজন আদালতে মামলা করেন। আদালত পুরসভার পক্ষেই রায় দেয়। তবে ভাঁটা ছাড়াও জিটি রোড লাগোয়া ওই জমির একাংশ দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দোকানপাটও। তাই জমি দখলমুক্ত করতে গেলে উচ্ছেদ সমস্যায় পড়তে পারে পুরসভা। যদিও মেয়র এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “উচ্ছেদের কোনও প্রশ্নই নেই। আদালতের নির্দেশে ১৯৯০ সালের গোড়াতেই ওই জমি দখল মুক্ত করার সময়ে দখলদারদের ক্ষতিপূরণ পুরসভা মিটিয়ে দিয়েছিল। তাই নতুন করে উচ্ছেদের কোনও সমস্যা নেই। তবে ক্ষতিপূরণ নিয়ে ফের কেউ জায়গা দখল করে বসলে তাঁকে তো সরতেই হবে।” মেয়র জানান, ওই জমির কিছুটা উত্তরপাড়া পুরসভার পানীয় জলের প্রকল্প এবং দমকল কেন্দ্রের জন্য দেওয়া হবে। বাকী ৪০০ বিঘায় ফিল্ম সিটি গড়া হবে।” পুরসভা জমি নিয়ে রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেবে। রাজ্য সরকার পরবর্তী পরিকল্পনা করবে।
রঞ্জিত মল্লিক বলেন, “জায়গাটা অসাধারণ। ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে এখানে চমৎকার একটা ফিল্ম সিটি তৈরি করা যাবে। মেয়র বা রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানোর ভাষা নেই।” দীপঙ্কর দে-ও বলেন, “জমিটা খুবই ভাল। যে প্রদীপ আজ প্রজ্জ্বলিত হল, বাংলা ছবির শিল্পকে তা আলোকিত করবে।”
তবে, প্রস্তাবিত ফিল্ম সিটি প্রকল্প রূপায়ণের কাজ কী ভাবে হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে পুরসভা যৌথ উদ্যোগে এই কাজ করবে কি না, জানতে চাইলে মেয়র বলেন, “বিষয়টি একান্তই মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা। ফিল্ম সিটি প্রকল্পের ব্যাপারে তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন, মেয়র হিসেবে শুধু সেটুকুই পালন করেছি।” |
|
|
|
|
|