কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদী সংস্কার প্রকল্প নিয়ে সর্বদল বৈঠক করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। শনিবার তমলুকে জেলা প্রশাসনিক ভবনের এই বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ছাড়াও ছিলেন সভাধিপতি গান্ধী হাজরা, জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা, সেচ দফতরের আধিকারিকরা। এই প্রকল্পে যে সব এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, তা নিয়ে কথা হয়। তবে জমি অধিগ্রহণে তাড়াহুড়ো করা হবে না বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
এই প্রকল্পের জন্য দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে রয়েছে ১৬০ হেক্টর, বাকি ৩৪০ হেক্টর জমি পশ্চিমে। মোট ৬৫০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকার এই প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্য সেচ দফতর দুই জেলায় প্রশাসনিক স্তরে আলোচনায় উদ্যোগী হয়েছে। শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর এই প্রকল্পের মধ্যে বারচৌকা বেসিন সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। চণ্ডীপুরের বিধায়ক অমিয় ভট্টাচার্য জানান, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদী সংস্কার হলে ওই সব নদীর জল হলদি দিয়ে বেরোবে। অথচ প্রকল্পে হলদি নদীর মাত্র ১ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। হলদি নদী পুরো সংস্কারের দাবি জানান অমিয়বাবু। জেলা প্রশাসন ও সেচ দফতরের আধিকারিকরা বিভিন্ন প্রস্তাব রাজ্য সেচ দফতরে জানানোর আশ্বাস দেন।
|
সিপিএম ও সমাজবাদী পার্টির ছয় নেতার ‘স্বীকারোক্তি’ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পটাশপুর ২ ব্লকের আড়গোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার দিনভর সিঁয়ারি, কালীরবাজার, জাবদা, সাতশতমাল, মন্দলপুর ও বাবুইদাঁড়ি শ্মশানমোড় এলাকায় ছোট ছোট সভা করে মাইকে ওই ছ’জন অতীতে মারধর, লুঠপাট, সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, জমি দখল, নারী নির্যাতন-সহ নানা ঘটনায় দলের হয়ে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীর কাছে আবেদন করেছেন, তাঁদেরকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তাঁরা আর পূর্বতন দলের সঙ্গে কোনও যোগ রাখবেন না। সিপিএমের তরফে এই ঘটনায় সরাসরি অভিযোগ করা না হলেও বিষয়টির পেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভূমিকা রয়েছে বলে খবর। সিপিএমের প্রতাপদিঘি জোনাল কমিটির সম্পাদক কালীপদ দাস মহাপাত্র বলেন, “এমন ঘটনার কথা জানা নেই। দলের কেউ এ নিয়ে অভিযোগও করেনি।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা অপরেশ দাসের অবশ্য বক্তব্য, “এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কারও যোগ নেই। ওঁরাই হয়তো ভুল বুঝতে পেরে দোষ স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করছেন।” পুলিশ সূত্রের খবর, ওই নেতারা যে সব ঘটনায় অভিযুক্ত, সেই সব মামলায় ইতিমধ্যেই তাঁরা জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
|
সদ্য চালু কাঁথির দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়ে অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা ঘিরে তুলকালাম বাধে শনিবার। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করেই পছন্দসই লোকজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য গোপনে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তৃণমূল। ছিলেন চাকুরি প্রার্থীরাও। বিক্ষোভের জেরে কলেজ কর্তৃপক্ষ মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত রাখতে বাধ্য হন। কলেজের ৭টি অশিক্ষক কর্মী পদে নিয়োগের জন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ দিন কয়েকজনকে ইন্টারভিউয়ে ডাকেন কর্তৃপক্ষ। ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন কলেজ অর্গানাইজিং কমিটির সভাপতি প্রাক্তন কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ, সম্পাদক দীপক তামিলি, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বলরাম বন্দ্যোপাধ্যায়। দীপকবাবু বলেন, “লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নামের তালিকা প্রকাশ না করেই ৪২ জনকে ইন্টারভিউয়ে ডেকেছিলাম। ৩টি পদের জন্য ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে। যে ৪টি পদের জন্য হয়নি, পরে সেগুলি নেওয়া হবে।” তবে তৃণমূল নেতা মামুদ হোসেনের দাবি, “নতুন কমিটি গড়ে ফের ওই ৭টি পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা নিতে হবে।”
|
গরিব বাড়ির ছেলে তাপস সাউ। পটাশপুরের চকমহম্মদ গ্রামে বাড়ি। বাবা বাসুদেববাবু ও মা কল্পনাদেবী দিনমজুরি করে সংসার চালান। এই প্রতিকূলতা জয় করেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৪৫ নম্বর পেয়ে কৃতী চন্দনপুর আনন্দ ইনস্টিটিউশনের এই ছাত্র। বিজ্ঞানবিভাগে পড়ত সে। জয়েন্টে সফল হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে রয়েছে তাপসের। কিন্তু ইচ্ছেপূরণের পথে বাধা তো অর্থাভাব। কৃতী সন্তানের বাবা-মায়ের অসহায় স্বীকারোক্তি, “দিনমজুরি করে আর আত্মীয়-শিক্ষকদের থেকে চেয়েচিন্তে এতদিন ছেলেকে পড়িয়েছি। কিন্তু এ বার অথৈ জলে পড়লাম।” মনের জোরেই লড়ে গিয়েছে তাপস। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্তকুমার আচার্য বলেন, “তাপসকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। জেদ করেই এত দূর এসেছে ও। বাবা-মায়ের সঙ্গে দিনমজুরিও করেছে।” আর তাপসের বক্তব্য, “পড়ার সুযোগ পেলে আমি অনেক দূর যেতে পারব।”
|
রাজ্যে পালাবদলের পরে সুবর্ণরেখা বাঁধ প্রকল্প নিয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু হল। রবিবার কেশিয়াড়িতে হয় সর্বদল বৈঠক। ছিলেন খড়গপুরের মহকুমাশাসক সুদত্ত চৌধুরী-সহ সেচ দফতরের আধিকারিকরা। বৈঠকে জমি অধিগ্রহণ নিয়েই মূলত আলোচনা হয়। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নিজের বক্তব্য পেশ করেন। ভূমি রক্ষা কমিটির প্রতিনিধিও এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্প রূপায়ণে সকলের কাছেই সহযোগিতা চান আধিকারিকরা। তবে আশঙ্কা কাটেনি। কমিটির প্রতিনিধি জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন। জানান, প্রকল্পের জন্য নতুন করে সমীক্ষা করা জরুরি। আগের পরিকল্পনা মাফিক প্রকল্প রূপায়ণ করা হলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অনেকে জমিহারা হবেন। প্রশাসনিক আধিকারিকরা অবশ্য প্রতিশ্রুতি দেন, জমি নিলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণই দেওয়া হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রকল্পের নকশা সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রশাসনের বক্তব্য, নতুন করে আর সমীক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তবে প্রয়োজনে কিছু হেরফের করা যেতে পারে। মহকুমাশাসক জানান, এ দিনের বৈঠক ফলপ্রসূই হয়েছে। এই প্রকল্প নিয়ে ফের বৈঠক হবে। |