সন্দীপদের স্বপ্নে কাঁটা সেই অনটন
দের দু’চোখে স্বপ্ন। স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা শেষে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। পরিজনেদের মুখে হাসি ফোটানো। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতা স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? স্বপ্নের সঙ্গেই তাই সংশয়। মেদিনীপুরের তেলিপাড়ায় বাড়ি পাপিয়া পালের। বাবা সুব্রত পাল জামাকাপড় সেলাই করেন। সুব্রতবাবুর দুই মেয়ে। পাপিয়া বড়। ছোট মেয়ে প্রিয়াঙ্কা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। পুরসভা থেকে বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে। সেই বাড়িতেই দোকান সুব্রতবাবুর। আয় সামান্যই। কষ্ট করে মেয়েদের পড়ার খরচ জুগিয়ে চলেছেন। অলিগঞ্জ গার্লস হাইস্কুলে কলাবিভাগে পড়ে সসম্মানে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে পাপিয়া ভূগোলে অনার্স পড়তে চায়। কিন্তু বাড়ির আর্থিক অবস্থা তার অজানা নয়। তাই উচ্চশিক্ষার খরচ কোত্থেকে আসবে, সেটাই তার ভাবনা। সুব্রতবাবু অবশ্য বলেন, “ও যতদূর পড়তে চাও তত দূরই পড়ানোর চেষ্টা করব।” বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায় পাপিয়া। বলে, “দুঃখ-লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি দেয় শিক্ষা। অনেকেই নানা কারণে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।”
সঙ্গতবাজারে বাড়ি সন্দীপ রায়ের। বাবা সোমনাথ রায় এক হার্ডওয়্যার দোকানে কাজ করেন। বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের (বালক) এই ছাত্র সাফল্যের সঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। জয়েন্টে ভাল র্যাঙ্ক না-হলে অঙ্কে অনার্স পড়বে। উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে অঙ্কেই। রসায়ন ও পদার্থবিদ্যাতেও ভাল ফল করেছে। সন্দীপের কথায়, “বাবা-মা, পরিজন-সহ স্কুলের সবাই পাশে না থাকলে কখনও এমন ফল হত না।”
পাপিয়া পাল সন্দীপ রায় সুতপা দে
মানিকপুরে বাড়ি সুতপা দে-র। অলিগঞ্জ গার্লসের এই ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে। অঙ্কেই সবচেয়ে ভাল ফল করেছে। রসায়ন ও পদার্থবিদ্যাতেও। সুতপা চিকিৎসক হতে চায়। জয়েন্টে ভাল র্যাঙ্ক না-হলে পদার্থবিদ্যায় অনার্স পড়বে। সুতপার বাবা শীতল দে অর্ডার মাফিক দোকানে দোকানে ওষুধ সাপ্লাই দেনা। কষ্ট করেই সংসার চলে। দুই মেয়ে। সুতপা বড়। পড়ার খরচ আসবে কোথা থেকে তা ভাবতে গিয়ে কূল-কিনারা পাচ্ছেন না মা শুক্লাদেবী। তাঁর কথায়, “এখন তো পড়াশোনার খরচ বেড়েই চলেছে। আশা করি, পরিজনেরা নিশ্চয়ই সুতপা-র পাশে থাকবেন।”
মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র অর্নিবাণ সামুইও অভাবের সংসারে বড় হয়েছে। বাবা আশিস সামুই চাষবাস করেন। সেই আয় থেকেই সংসার চলে। উচ্চ মাধ্যমিকে অনির্বাণ অঙ্ক, রসায়ন, পদার্থবিদ্যায় তাক লাগানো মার্কস পেয়েছে। বাড়ি চন্দ্রকোনার সেরবাজ গ্রামে। অবশ্য মেদিনীপুর শহরে থেকে পড়াশোনা করেছেন। অনির্বাণ ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। তার কথায়, “পড়াশোনার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যেই আর্থিক প্রতিকূলতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু পরিজন-পরিচিতেরা পাশে থাকায় শেষমেশ সেই প্রতিকূলতা পেরোনো সম্ভব হয়েছে।” স্কুলের শিক্ষকরাও সব সময়ে সাহায্য করেছেন জানিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের এই কৃতী ছাত্র বলেন, “আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।” এরই মধ্যে এআইইইই-র ফল প্রকাশিত হয়েছে। রাজ্যে অনির্বাণের র্যাঙ্ক হয়েছে ১৬২। তার আশা, জয়েন্টে আরও ভাল ফল হবে।

নিজস্ব চিত্র।
Previous Story Medinipur Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.