|
|
|
|
হলদিয়ায় পুর-ক্ষমতা ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²হলদিয়া |
জমি-রাজনীতির নন্দীগ্রাম ২০০৭-এ সেই যে পায়ের তলা থেকে মাটি সরাতে শুরু করল সিপিএমের, পূর্ব মেদিনীপুরে এই ২০১১-য় এসেও সেই প্রবণতার বদল হল না।
২০০৮-এ পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯-এ লোকসভা ভোট, গত বছরের পুরভোটপরের পর বিপর্যয় দেখেছে বাম-শিবির। এ বার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র প্রবল আশাবাদ শোনা যাচ্ছিল সিপিএম নেতাদের মুখে। বিশেষত দু’টি কেন্দ্রখেজুরি আর হলদিয়ায় নিজেদের ‘দুর্গ’ রক্ষার ব্যাপারে ভোটের পরেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। ফলাফলে চুরমার হয়ে গিয়েছে সেই আশার প্রাসাদ। খেজুরি-হলদিয়া রক্ষা হয়নি। জেলার ১৬টি কেন্দ্রেই হার মানতে হয়েছে বাম-প্রার্থীদের। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে ‘খলনায়ক’ বনে যাওয়া লক্ষ্মণ শেঠকে তাঁর ‘গড়’ হলদিয়া-মহিষাদলেও বিপর্যস্ত করে দিয়ে গিয়েছে তৃণমূল-হাওয়া। হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে হেরেছেন সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মণের ‘ছায়া’ নিত্যানন্দ বেরা। আর মহিষাদলে স্বয়ং লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা পণ্ডাশেঠ। এই অবস্থায় সামনের বছরের হলদিয়া পুরভোট ঘিরে আশঙ্কার মেঘ জমছে বাম-শিবিরে। সূচনা-সময় সেই ১৯৯৭ থেকে টানা তিন দফায় পুরবোর্ড হাতে রাখা বাম নেতৃত্বকে ক্ষমতা খোওয়ানোর ‘ভয়’ দেখাচ্ছে বিধানসভা ভোটের বুথওয়াড়ি বিশ্লেষণ।
বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, পুর-এলাকার ২৬টি ওয়ার্ডের ১৫টিতেই এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ১১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থেকে সংখ্যালঘু হয়ে গিয়েছে বামেরা। ২০০৭-এর সর্বশেষ পুর-নির্বাচনে ১৯টি ওয়ার্ডে জিতেছিলেন বাম-প্রার্থীরা। মাত্র ৭টি ওয়ার্ডে বাম-বিরোধীরা। বিধানসভার ফলাফলে বামেরা তাদের দখলে থাকা ৮টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছে। বাম-বিরোধীরা এগিয়ে গিয়েছে সেই ৮ ওয়ার্ডে। অর্থাৎ বিধানসভা ভোটের ফলাফলকে ‘নিরিখ’ ধরলে হলদিয়া পুরবোর্ড হাতছাড়া হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছে বামফ্রন্ট। তাদের পক্ষে একমাত্র বলবার মতো তথ্য হল, পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও ৩৫৮ ভোটের ‘লিড’ ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু উপ-পুরপ্রধান নারায়ণ প্রামানিকের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে ৪৫৮ ভোটে। গ্রামীণ সুতাহাটার ৩ নম্বর ওয়ার্ড, দুর্গাচক এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ড, শিল্পতালুকের ১২নং ওয়ার্ড, উদ্বাস্তু কলোনি গাঁধীনগর-ক্ষুদিরামনগরের ২০নং ওয়ার্ড, বন্দর আবাসন এলাকার ২২ নম্বর ওয়ার্ড কিংবা ২৬নং ওয়ার্ডেও পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। পুর-শহরের বিভিন্ন বর্গের বসবাসের এলাকাতেই বামেদের ভোট কমেছে। সব মিলিয়ে বামেরা দখলে থাকা ৩, ৮, ৯, ১০, ১২, ২০, ২২ এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পিছিয়েছে। বাম-বিরোধীরা কিন্তু দখলে থাকা ১, ২, ৪, ৫, ৬, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ‘লিড’ ধরে রাখতে পেরেছে।
তৃণমূল নেতা তথা জেলা-পরিষদ সদস্য আনন্দময় অধিকারীর তাই দাবি, “২০০৯-এর লোকসভা ভোটের সময়েও আমরা মাত্র ৮টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিলাম। আমাদের কাউন্সিলর থাকা ৭টি ওয়ার্ডের থেকে মাত্র একটি বেশি। বিধানসভা ভোটের নিরিখে আমরা এগিয়ে গিয়েছি ১৫টি ওয়ার্ডে। এর থেকেই স্পষ্ট পুর-ক্ষমতায় পরিবর্তন শুধু সময়ের অপেক্ষা।” তাঁরা যে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন, সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে--তা স্বীকার করছেন টাউনশিপ এলাকার সিপিএম লোকাল কমিটির সম্পাদক অচিন্ত্য শাসমল থেকে শুরু করে সিটু নেতা সুদর্শন মান্নারা।
সুদর্শনবাবুর অভিযোগ, “বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে শিল্প-শহরে সন্ত্রাস শুরু করেছে তৃণমূল। আমাদের অন্তত ৮টি দলীয় কার্যালয় ও ১৫টি ইউনিয়ন অফিসে হামলা-লুঠপাট হয়েছে। কোথাও দলীয় অফিসে তালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পতাকা নামিয়ে নিজেদের পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। আমাদের অফিস জবরদখল হয়েছে।” পুলিশও সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএম নেতারা। এই সে-দিনও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রশাসনকেও এখন ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলছেন তাঁরা।
বাম-নেতাদের শরীরী-ভাষাতেও বিপন্নতাই প্রকট হচ্ছে শিল্পশহরে। |
|
|
|
|
|