|
|
|
|
একাই ‘মিনি কাজিরাঙা’ গড়েছেন প্রৌঢ় |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত ² গুয়াহাটি |
‘আরণ্যক’-এর যুগলপ্রসাদরা হারিয়ে যান না। লবটুলিয়া, নাঢ়া বইহার, সরস্বতী কুণ্ডে আপন উদ্যোগে গাছের চারা পুঁততেন যুগল। ভাগলপুর-পূর্ণিয়ার মাটির অনেক দূরে অসমে ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে দীর্ঘদিন ধরে সেটাই করে চলেছেন যাদব পায়েং। স্বঘোষিত সবুজ সেনানী।
মলোই ডাকনামেই সমধিক পরিচিত মিতভাষী এই মানুষটি কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে শুধু নিজের উদ্যোগে রুক্ষ বালুচরকে রূপান্তরিত করেছেন সবুজ দ্বীপে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস, সরকারি-বেসরকারি অরণ্যায়ন প্রকল্পের আড়ম্বর থেকে বহু দূরে এক প্রৌঢ় প্রায় তিন দশকের একক সাধনায় গড়ে ফেলেছেন একটা অভয়ারণ্য। তাঁর নামেই এখন সেই সবুজ দ্বীপের নাম ‘মলোই কাঠোনিবাড়ি’। ডাকনাম, ‘মিনি কাজিরাঙা’। |
মলোই পায়েং। নিজস্ব চিত্র |
এই অরণ্যে এখন প্রায় পুরোপুরি জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ। একে একে বাসা বেঁধেছে প্রথম তফসিলভুক্ত প্রাণীর দল। হাতি, বাঘ, নানা ধরনের হরিণের পরে সম্প্রতি এসে হাজির বুনো মোষেরাও। বাকি শুধু গন্ডার। তবে, সবুজ দ্বীপের স্রষ্টার আশঙ্কা, গন্ডার এলেই হানা দেবে চোরাশিকারির দল। তখন, একার হাতে কীভাবে বাঁচাবেন এই অরণ্য?
ছোট্টবেলা থেকে যোরহাটের উত্তর-পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্রের ধু ধু বালুচরে গরু চরাতে যেতেন মলোই। তাঁর কথায়, “দেখতাম, খাদ্যের সন্ধানে গবাদি পশুরা কী ভাবে চর থেকে চরে ঘুরে বেড়ায়। ওদের দেখে কষ্ট হত। একদিন ভাবলাম, পুরো বালিয়াড়ি যদি ঢেকে দিতে পারি গাছের ছায়ায় কেমন হয়?” |
|
তারপরই যখন যেখানে যা চারা বা বীজ পেয়েছেন, বালিয়াড়িতে পুঁতে দিয়েছেন। তিন দশক কেটে গিয়েছে। একাই বালিদ্বীপকে সবুজ দ্বীপ বানাতে পেরেছি। এক জীবনে, এটাই কী কম কথা?”
মলোইয়ের সাধের অরণ্য এখন ৩০০ হেক্টর জুড়ে ছড়িয়ে। ১৯৮১ সাল থেকে মলোই সপরিবারে আছেন দ্বীপ আঁকড়ে। হরিণ, বাঘ, হাতি, মোষ পোষায় আশপাশের গ্রামবাসীরা তাঁকে ‘ত্যাজ্য’ করেছেন। সম্মান বলতে জুটেছে শুধু যোরহাট অসম জাতীয় যুব ছাত্র পরিষদের সংবর্ধনা।
তবে এ সব নিয়ে মাথা ঘামান না এই সবুজ সেনানী। এমন কী, যে অরণ্য গড়তে প্রাণপাত করলেন জীবনভর, তার অধিকারও চান না। মলোই বলেন, “অরণ্য, বণ্যপ্রাণ সরকারের সম্পত্তি। আমি কেবল ভালবেসে দেখাশোনা করছি। কর্তাদের বলেছি, স্থায়ী নজরদারি চৌকি বসাতে। একা চোরাশিকারিদের সঙ্গে তো লড়তে পারব না।” |
|
|
|
|
|