পরিবেশ চেতনায় ‘বদল’, বোঝাল উদ্যাপন |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² কলকাতা |
পরিবেশ উন্নয়নে নতুন সরকার কতটা পরিবর্তন আনতে পারবে তা অবশ্যই সময় বলবে। কিন্তু রাজ্য পরিবেশ দফতর রবিবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপনের যে বিপুল আয়োজন করেছিল তা নিঃসন্দেহে একটা বড় ‘পরিবর্তন’-এর সূচক।
প্রায় আড়াই হাজার মানুষের এক বর্ণাঢ্য মিছিল এ দিন দেশপ্রিয় পার্ক থেকে রবীন্দ্র সরোবর পর্যন্ত যায়। পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা নিয়ে অনেকগুলি ট্যাবলো ছিল মিছিলে। পোস্টার হাতে নানা সাজের অন্তত এগারোটি স্কুলের ছেলেমেয়ে ছাড়াও মিছিলে ছিলেন বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য-কর্মীরা। কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশ তাদের ব্যান্ড নিয়ে মিছিলে যোগ দেয়।
মিছিলের শেষে নজরুল মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “কলকাতায় বায়ুদূষণ ভয়ানক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। এই দূষণের জন্যই ক্যানসারের মতো মারণ রোগ বেড়ে যাচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এই ব্যাপারে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা নিতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হবে। তাঁদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করব।” জলের দূষণ এবং মাটির নীচের ফুরিয়ে আসা জলের বিপদ নিয়েও মন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজ্যে জিন পরিবর্তিত ফসলের পরীক্ষামূলক চাষের সম্ভাব্য বিপদের কথাও এ দিন পরিবেশ মন্ত্রীর কথায় উঠে আসে। এই সব কাজই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করতে চান বলে মন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন। |
|
...আরো দাও প্রাণ: তব ভুবনে: বিশ্ব পরিবেশ দিবসে অঙ্গীকার। পদযাত্রায় সামিল স্কুলছাত্রীরা। রবিবার, দেশপ্রিয় পার্কে। বিশ্বনাথ বণিক |
ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন নদী ও ভূজল বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। কল্যাণবাবু বলেন, “রাজ্যের সমস্ত নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে জলের হাহাকার। অথচ ফি বছর বর্ষায় বিপুল পরিমাণ জল স্রেফ বয়ে যায়, ব্যবহার করা যায় না। উল্টে সেই জন্য বন্যা হয়। আমাদের নতুন মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেই বর্ষার বাড়তি জল ধরে তা ব্যবহার করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এই উদ্যোগ সত্যিই আশা জাগায়।” পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন সরকারের কাছে তাঁর বিপুল প্রত্যাশার কথা জ্ঞাপন করেন কল্যাণবাবু। এ দিন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপন করে কলকাতায় বহু সংগঠন। দক্ষিণ কলকাতায় ‘ক্যালকাটা বিবেক’ নামে একটি সংগঠন কলকাতা পুরসভার সহযোগিতায় বৃক্ষরোপণ করে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে এই দিনটি স্মরণ করতে ‘পরিবেশ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন হয়। সেখানে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো এই অসামান্য সুন্দর সৌধটি পরিবেশ দূষণের স্বীকার।” তিনি গঙ্গার দূষণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় এবং পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার।
কিন্তু এত সব আয়োজন এবং পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়, যখন দেখা যায় অনুষ্ঠানের বক্তা এবং মান্য শ্রোতারা একেবারে ভিক্টোরিয়ার চত্বরের মধ্যে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সেখানে এ দিন অন্তত কুড়িটি গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। পরিবেশ দফতরের মিছিলের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অন্তত দশটি বাস এ দিন ঢুকে পড়ে দেশপ্রিয় পার্কের ভিতরে। সবুজ মাঠে দাঁড় করানো ছিল বাসগুলি। |
|