২০০৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্টার-সহ উত্তীর্ণ হয়েছিল শ্যামপুরের ডিঙাখোলা গ্রামের কুন্তল বেরা। কিন্তু টাকার অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সে লেগে গিয়েছিল চাষের কাজে। সে ছিল গুজারপুর শিবগঞ্জ বিশালাক্ষ্মী হাইস্কুলের ছাত্র। কিছু দিন চাষের কাজ করার পরে সে নজরে আসে তারই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোজিৎকুমার দত্তের। তিনিই হাত ধরে তাকে ফিরিয়ে আনেন লেখাপড়ার জগতে। ফের পুরনো স্কুলে একাদশ শ্রেণিতেই ভর্তি হয় সে। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কুন্তল নজরকাড়া ফল করেছে। বাংলা, ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান এবং অঙ্কে পেয়েছে যথাক্রমে ৮০, ৮১, ৯২, ৯৩ এবং ৯৮ নম্বর। মোট প্রাপ্ত নম্বর ৪৪৪।
কুন্তল ছাড়াও এ রকম আরও সাত মেধাবী ছাত্রকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে খুঁজে এনে মনোজিৎবাবু এই স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। তারা সকলেই কোনও না কোনও সময়ে টাকার অভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও পড়া ছেড়ে দিয়েছিল।
তাদের শুধু স্কুলে ভর্তি করানোই নয়, এখানকার হস্টেলে রেখে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন মনোজিৎবাবু। এমনকী তাদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখা, বই কেনা সবই করেছেন তিনি। ফলও ফলেছে হাতেনাতে। আট জনের মধ্যে সাত জন এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্টার-সহ উত্তীর্ণ হয়েছে।
ডিঙেখোলা গ্রামেরই প্রসেনজিৎ পড়িয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে ইট ভাটায় কাজ করত। এই গ্রামেরই রবিরাম পাঁজার কথা ধরা যাক। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে চাষের কাজ করত ও নদীতে নেমে মিন ধরত সে। কিন্তু মনোজিৎবাবুই পাল্টে দেন তাদের জীবনধারা। প্রত্যেকেই ফিরে এসেছে পড়াশোনার জগতে। কুন্তল, প্রসেনজিৎ এবং রবিরামের বক্তব্য, “মনোজিৎবাবু না-থাকলে আমাদের কাজই করতে হত। পড়াশোনা করতে পারতাম না।” এই স্কুল থেকে আড়াই বছর আগে অবসর নিয়েছেন মনোজিৎবাবু। তবুও স্কুলছুটদের ফিরিয়ে আনার কাজে ক্লান্তি নেই। বললেন, “পেনশনের টাকা আর মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে এই কাজ করি। এটা আমার কাছে নেশার মতো। স্কুলের বর্তমান প্রধানশিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষকেরাও আমাকে সহায়তা করেন।” |