|
|
|
|
পুলিশের উদ্যোগেই পরিণতি পেল প্রেম |
প্রকাশ পাল ² শ্রীরামপুর
|
ছেলের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তাই মেয়ের পরিজনেরা অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করছিলেন। প্রেম বাঁচাতে প্রেমিককে নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই তরুণী। শেষমেশ পুলিশের সহায়তাতেই প্রণয়ীর সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়লেন সীমা। বিয়ের আয়োজন করলেন পুলিশকর্মীরা। থানার ব্যারাকের ঘর খালি করে নব দম্পতিকে রাখার বন্দোবস্ত করা হল। বিয়েকে কেন্দ্র করে আনন্দে মাতল শ্রীরামপুর থানা। ‘সমাজের কাছে উপকার পেয়ে’ স্বেচ্ছায় রক্তদান করে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করলেন নবদম্পতি।
পাত্র নাম সঞ্জয় ধক পুলিশের গাড়ি চালান। বাড়ি বৈদ্যবাটি পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাশমলপাড়ায়। বছর চারেক আগে ওই এলাকারই চাতরা মান্নাপাড়ার তরুণী সীমা ধাড়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়। সীমার বয়স ২১ বছর। তিনি জানান, কিছুদিন আগে তাঁর বাড়ির লোকজন বিয়ের কথাবার্তা বলতে সঞ্জয়ের বাড়ি যান। কিন্তু, সঞ্জয়দের পারিবারিক অবস্থা দেখে শেষপর্যন্ত বিয়েতে রাজি হননি তাঁরা। উপরন্তু অন্যত্র তাঁর বিয়ের বন্দোবস্ত করা হচ্ছিল। বেগতিক বুঝে গত শুক্রবার সন্ধেয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সঞ্জয়কে নিয়ে শেওড়াফুলি ফাঁড়িতে পৌঁছন ওই তরুণী। পুলিশকে সব খুলে বলেন। শেওড়াফুলি ফাঁড়ির পুলিশ দু’জনকে শ্রীরামপুর থানায় নিয়ে আসে। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে। রাতেই তিনি দুই বাড়ির লোককে ডেকে পাঠান। তাঁদের বোঝান। ছেলের বাড়ি বিয়েতে অসম্মত না হলেও, বেঁকে বসেন সীমার পরিজনেরা। শনিবার বিয়ের দিন ঠিক করে পুলিশই। শুক্রবার রাতে থানার ব্যারাকের দু’টি ঘরে দু’জনকে রাখা হয়। শনিবার সকালে মেয়ের বাড়ির লোকজন ফের আইসি-র কাছে আসেন। আইসি ফের তাঁদের বোঝান। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের বিয়ে সংক্রান্ত আইনের দিকটিও ব্যখ্যা করেন। শেষ পর্যন্ত, সীমার ইচ্ছেকেই মেনে নেন তাঁর বাড়ির লোক। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
ততক্ষণে অবশ্য বিয়ের আয়োজন প্রায় সেরে ফেলেছেন পুলিশকর্মীরা। সীমার জন্য এসেছে বেনারসি, সঞ্জয়ের জন্য ধুতি-পাঞ্জাবি। ফুল, মিষ্টি কিছুই বাদ ছিল না। শনিবার সন্ধেয় মহিলা পুলিশকর্মীরাই সীমাকে কণের বেশে সাজিয়ে দেন। থানার গাড়িতে চেপেই দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয় শেওড়াফুলির নিস্তারিনী কালীবাড়িতে। সেখানেই দু’জনের বিয়ে হয়। দুই বাড়ির লোকেরাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। মেয়েকে সম্প্রদান করেন সীমার বাবা-ই। আইসি-সহ থানার অনেক অফিসারই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এখানেই অবশ্য বিয়ের পর্ব শেষ হয়নি। রবিবার স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগী আয়োজিত রক্তদান শিবিরে নবদম্পতিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বর-কনের পোশাকেই দু’জনে রক্তদান করেন। থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় পরীক্ষার জন্যও রক্ত দেন। নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেন শ্রীরামপুরের এসডিপিও কঙ্করপ্রসাদ বাড়ুই এবং তথাগতবাবু। দু’জনেই বলেন, “ওদের জীবন সুখের হোক।” গোটা বিষয়টিতে বর-কনে দু’জনেই দৃশ্যতই আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। সঞ্জয়ের কথায়, “গতানুগতিক বিয়ে অনেক দেখেছি। কিন্তু প্রকৃত সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে যে ভাবে আমাদের বিয়ে হল, তা ভেবে ভীষণ ভাল লাগছে।” আর সীমার প্রতিক্রিয়া, “দু’দিন আগেও কী হবে ভেবে পাচ্ছিলাম না। এখন খুব ভাল লাগছে।” |
|
|
|
|
|