|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
দিশার সন্ধানে বিজেপি |
উদ্ভ্রান্ত নবকুমারকে দেখিয়া কপালকুণ্ডলা যে প্রশ্ন করিয়াছিল, বিজেপি নেতৃত্বের হাবভাব দেখিলেও সেই প্রশ্নই করিতে ইচ্ছা যায়-- ভারতীয় রাজনীতির জাতীয় সড়ক হইতে বিচ্যুত হইয়া তাহারা কি পথ হারাইয়াছে? অন্যথায় দলের এই বিভ্রান্ত দশা কেন? কেন দুর্নীতির মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নেও বিজেপি নেতৃত্ব নিজস্ব কোনও আন্দোলন গড়িয়া তোলার পরিবর্তে বাবা রামদেবের রামলীলা ময়দানের কর্মকাণ্ডের সমর্থনে বিবৃতি জারি করিতেছে? কর্নাটকে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং তাহার ভিতর লোকসভা ও রাজ্যসভায় দলের দুই পরিষদীয় নেতার দুই বিরোধী পক্ষে জড়াইয়া পড়াও সর্বসমক্ষে দৃশ্যমান। উত্তরপ্রদেশে জমি-হারা কৃষকদের আন্দোলনে বাহির হইতে সমর্থন জোগাইয়া রাহুল গাঁধী যতটা রাজনৈতিক ফসল কুড়াইলেন, রাজনাথ সিংহ, কলরাজ মিশ্র, লালজি টন্ডন ও কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর মতো ‘প্রভাবশালী’ রাজ্য নেতাদের সে তুলনায় নিষ্প্রভ দেখাইল। অথচ আগামী বছরেই রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন।
এই প্রেক্ষিতেই লখনউয়ে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হইয়া গেল। এবং সেই বৈঠকেও বিজেপি নেতৃত্বের তরফে দিশানির্ণয়ের কোনও সদর্থক উদ্যোগ দেখা যায় নাই। বরং দলের সভাপতি নীতিন গডকড়ীকে নূতন করিয়া অশীতিপর এবং সক্রিয় রাজনীতি হইতে অবসৃত অটলবিহারী বাজপেয়ীর শাসনকালের স্মৃতি পুনরুদ্ধার করিতে দেখা গেল। বাজপেয়ীর ‘সুশাসন’-এর সুখস্মৃতি কি ভারতীয় ভোটদাতারা এখনও সযত্নে লালন করিতেছেন? বাজপেয়ী বলিয়াছিলেন, দিল্লি পৌঁছানোর সংক্ষিপ্ততম পথ লখনউ হইয়াই গিয়াছে। দীর্ঘ দশ বছর তিনি লখনউয়ের নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন এবং তাঁহার আমলেই রাজ্যের ৮৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ৬০টি দখল করিয়াছিল। কিন্তু তাহাতে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির গণভিত্তি দৃঢ় হয় নাই। বরং মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহ যাদবের তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনও এক পক্ষকে সমর্থন করিয়াই ক্রমশ তৃতীয় শক্তিতে পরিণত হওয়া বিজেপি আপন অস্তিত্ব ঠিকাইয়া রাখিতেছিল। রাহুল গাঁধীর উত্তরপ্রদেশ অভিযান দানা বাধিবার পর সেই শক্তি চতুর্থ স্থানে নামিয়া গিয়াছে।
২০১৪ সালে কেন্দ্রে পুনরায় ‘শাসন পরিচালনার স্বাভাবিক দল’ হিসাবে অভিষিক্ত হইতে গেলে বিজেপিকে সর্বাগ্রে উত্তরপ্রদেশে ২০১২-র বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করিতে হইবে। কিন্তু বাজপেয়ীর রচনাবলি ছাপাইয়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিতরণ করিলে সেই অসাধ্য সাধন করা কঠিন। সে জন্যই হয়তো গডকড়ী জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে রাম-মন্দির বানাইবার প্রসঙ্গও ছুঁইয়া গেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই ইতিপূর্বে একাধিক বার স্বীকার করিয়াছেন, রাম-মন্দিরের বিষয়টিকে তাঁহারা আর নির্বাচনী প্রচারের উপজীব্য করিবেন না। সে ক্ষেত্রে হাতে কী রহিল? কেবল বাজপেয়ী রচনাবলির পেন্সিল? এই বিজেপিকে দেখিলে সত্যই মায়া হয়। ইহা সাবেক বিজেপির, এমনকী সাবেক জনসংঘেরও ছায়ামাত্র। ক্রমাগত আর এস এসের হুকুম তামিল করিতে গিয়া দল তাহার ভাবমূর্তিসম্পন্ন নেতাদের কোণঠাসা করিয়াছে। পরবর্তী প্রজন্মের নেতানেত্রীদের না আছে পূর্বসূরিদের জনসমর্থন, না রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। ইউ পি এ-র বিকল্প হইয়া উঠিবে কি, নেতৃত্ব নিজেদের ঘরই ঠিকমতো গুছাইতে পারিতেছে না। বিজেপিকে আত্মসমীক্ষা করিতে হইবে। চিন্তন-বৈঠকের লোকদেখানো আত্মসমীক্ষা নয়, উদ্দেশ্যমুখী, একাগ্র আত্মসমীক্ষা। |
|
|
|
|
|