|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
নির্বিকল্প |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিয়াছেন, অমর্ত্য সেনের কোনও বিকল্প হয় না। উপলক্ষ, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত মেন্টর গ্রুপ-এর মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন-এর নির্বাচন। এই নির্বাচন প্রমাণ করে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উৎকর্ষের দাবিকে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক যুক্তির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়াছেন। আরও জানা গিয়াছে, দুই বিশ্রুত অধ্যাপক অমর্ত্য সেন এবং সুগত বসু-ই ‘মেন্টর গ্রুপ’-এর বাকি সদস্যদের বাছিয়া লইবেন। সরকার ইহাতে কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করিবে না। লক্ষণটি শুভ। বঙ্গীয় শিক্ষাজগতের সাম্প্রতিক ধারার প্রেক্ষিতে নজিরবিহীনও বটে। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশকের বাম জমানায় উচ্চশিক্ষার ধারাটি রাজনীতির ক্রীড়নক হইয়া পড়িয়াছিল। ক্ষমতাশালী আলিমুদ্দিন স্ট্রিট পছন্দসই ব্যক্তিকে বিভিন্ন বিশিষ্ট পদে বসাইয়াছে। পাশাপাশি, তথাকথিত সাম্যবাদের ধ্বজা তুলিয়া প্রেসিডেন্সি কলেজের ন্যায় মান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষের হানি ঘটাইয়াছে। জনগণতন্ত্রের দোহাই দিয়া যে মেধার চর্চাকে ব্যাহত করিতে নাই, সেই প্রয়োজনীয় কথাটি গত প্রায় সাড়ে তিন দশক বিস্মৃতিতে পড়িয়া ছিল। নূতন সরকার যদি সেই সত্যটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিতে পারে, তাহাতে বঙ্গীয় শিক্ষা জগতেরই প্রভূত উপকার হইবে।
প্রশ্ন হইল, কী করিয়া কাজটি করা সম্ভব? যে সকল বিধি বর্তমানে কার্যকর, তাহা একান্ত ভাবেই নির্বাচন-সাপেক্ষ। অর্থাৎ, যে কোনও কাজই করিতে হইলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে ডাকিয়া আলোচনার ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এই পদ্ধতিতে ‘লোকাল কমিটি’-র ন্যায় রাজনৈতিক দলের পাড়া সংগঠন চলিতে পারে, একটি উৎকৃষ্ট শিক্ষাকেন্দ্র চালানো অসম্ভব। বিশ্ববিশ্রুত বিদ্বানেরা যদি দেখেন যে নির্বাচনে লড়িয়া তবে কোনও শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালন পর্ষদে আসিতে হইবে, তাঁহারা, সঙ্গত কারণেই, নিরুৎসাহিত হইতে পারেন। দুনিয়ার কোনও বিশ্রুত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানই ‘গণতন্ত্র’র এ হেন পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে না। তাহারা কীর্তিমানদের সসম্মানে আমন্ত্রণ জানায়। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কেও তাহাই করিতে হইবে। বর্তমান আইন যদি সেই পথে অন্তরায় হইয়া দাঁড়ায়, তখন আইন বদলাইতে হইবে। প্রয়োজনে তাহা সম্পূর্ণ বিসর্জন দিলেও ক্ষতি নাই। উৎকর্ষের সাধনা একটি অন্যতর মানসিকতা দাবি করে। সেই মনোভঙ্গিটি গ্রহণ করা জরুরি। তাহা হইলে উৎকর্ষমুখী নূতন আইনের পথ প্রশস্ত হইবে, চৌত্রিশ বৎসরের অনভ্যাস বাধা হইবে না। বাম জমানায় গণতন্ত্রের অছিলায় দলতন্ত্রটিকে দীর্ঘজীবী করিবার উদ্দেশ্যে সর্বস্তরে নির্বাচনী বন্দোবস্ত কায়েম হইয়াছিল। নূতন ভাবে শুরু করিতে হইলে সেই পদ্ধতিটি অবিলম্বে ছাড়িয়া দেওয়া জরুরি। সরকার এই কার্যে নিতান্তই সহায়কের ভূমিকা পালন করিতে পারে, অন্য কিছু নহে। সুখের কথা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার সেই মর্মে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত রাখিয়াছে। ‘আমরা-ওরা’ জাতীয় সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠিবার ইঙ্গিত। আশা করা চলে, অতঃপর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, এবং আরও বিভিন্ন শিক্ষায়তনের গতিও বিদ্যার যুক্তি দিয়াই চালিত হইবে, দলীয় স্বার্থে নহে। সেই ক্ষেত্রে রাজ্যের শিক্ষাজগতে একটি নূতন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হইতে পারে। প্রেসিডেন্সি-র পদাঙ্ক অনুসরণে অন্যত্রও শিক্ষার উৎকর্ষের ধারা বহিতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী যথার্থই বলিয়াছেন, অমর্ত্য সেনের কোনও বিকল্প নাই। কারণ, উৎকর্ষের কোনও বিকল্প হয় না। নূতন জমানায় পশ্চিমবঙ্গ যদি বিদ্যার নির্বিকল্প সাধনা প্রত্যক্ষ করে, তাহাতে শিক্ষার তো উন্নতি হইবেই, দলের গৌরবও কিছু কমিবে না। |
|
|
|
|
|