জীবনে একটি মাত্র ভুলও মানুষকে গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে। শিক্ষার মাধ্যমে সেই ভুলকে সংশোধন করে জীবনকে অন্য খাতে বইয়ে দেওয়ার স্বপ্নও দেখে কেউ কেউ। ত্রিপুরায় কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের তিন সাজাপ্রাপ্ত আবাসিক সেই কাজটি করতে গিয়েছিল। কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভুলে সব পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও তাদের ইতিহাস পরীক্ষায় ‘অনুপস্থিত’ বলে দেখানো হয়েছে। স্বভাবতই মনমরা এই তিন বন্দি পরীক্ষার্থী।
কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের তিন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বিশ্বজিৎ দে, গৌর আচার্য ও বিকাশ মজুমদার উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। এদের পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল প্রাচ্য ভারতী স্কুলে। এরা বাংলা, ইংরেজি ছাড়াও শিক্ষা, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দেয়। কিন্তু গত কাল যখন ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ৬১ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করে, তখন তিন জনের ক্ষেত্রে দেখা যায় ইতিহাস বিভাগে তারা অনুপস্থিত। কিন্তু তারা দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছে। কারাগার কর্তৃপক্ষের রেকর্ড বলছে, এই তিন জন কিন্তু সব বিষয়ের পরীক্ষাতেই উপস্থিত ছিল।
সংশোধনাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার বিজয় কুমার দাস বলেন, তিন জনের ইতিহাস পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে, তা সত্ত্বেও তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৫ শতাংশের উপর। তারা সঙ্গে সঙ্গে পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পর্ষদ থেকে তাদের বলা হয়েছে, মার্কশিটগুলি ঠিক করে দেওয়া হবে। পর্ষদের সভাপতি অমিতাভ দেবরায়কে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি ভুল মার্কশিটের ব্যাপারটি স্বীকার করেন। এই ভুলের জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি। অমিতাভবাবু জানান, যত শীঘ্র সম্ভব এইগুলি ঠিক করে দেওয়া হবে। ভুল মার্কশিটের ব্যাপারে পর্ষদের প্রত্যেক বছরের ভুলের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে পর্ষদ সভাপতি বলেন যে, এই বছর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের তিন জন ছাড়া আর কোনও নতুন করে লিখিত অভিযোগ মার্কশিটের ব্যাপারে ওদের কাছে জমা পড়েনি। তিনি আরও জানান, মার্কশিট নিয়ে অভিযোগগুলি পর্ষদ দ্রুত ঠিক করে দেবে।
বিশ্বজিৎ দে ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ২০০৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ছিল। সাত বছরের সাজা হয়েছিল তার। এ বছরের মার্চ মাসে ৫০০০০ টাকা জরিমানা দিয়ে আপাতত জামিনে সে শর্তাধীনে মুক্ত আছে। খুনের অভিযোগে গৌর আচার্য ও বিকাশ মজুমদার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আছে ২০০৯ সালের ৬ জুন ও এবং ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। ভুল মার্কশিট আসায় এই তিন জন তো বটেই, সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষও হতাশ। |