কেরল ছেড়ে বাংলার হারই নজর কাড়বে হায়দরাবাদে

হায়দরাবাদে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরুর আগেই কেরলে বামেদের হার নিয়ে আলোচনার কার্যত নিষ্পত্তি করে দিলেন পিনারাই বিজয়ন।
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু যখন রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকে হারের কারণ খুঁজতে ব্যস্ত, তখন কেরলের রাজ্য সম্পাদক জানিয়ে দিলেন, কেরলে বাম-জোট হেরেছে ঠিকই, কিন্তু আসলে তাঁর রাজ্যে বামেদের রাজনৈতিক ভিত্তি আরও প্রসারিত হয়েছে। তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে পরিসংখ্যান-সহ যুক্তিও পেশ করেছেন বিজয়ন। আলিমুদ্দিনের আশঙ্কা, এর ফলে হায়দরাবাদে তিন দিনের আলোচনা তাই পশ্চিমবঙ্গের হারের ময়নাতদন্তেই পর্যবসিত হবে এবং নানা রকম অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে রাজ্য নেতৃত্বকে। এর আগে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজয়ওয়াড়ায় বর্ধিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও কেরলকে বাদ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বাম-দুর্গ রক্ষা করার বিষয়টিই প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছিল।
আগামী ১০-১২ জুন হায়দরাবাদে সিপিএমের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আলোচনা হবে। তার আগেই কেরলের রাজ্য সম্পাদক যে ভাবে নিজের ঢোল পিটিয়েছেন, তাতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তাঁদের বক্তব্য, দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার আগে কেরলের রাজ্য সম্পাদক নিজের মত জাহির না করলেই পারতেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিজয়নের এই বক্তব্যে কার্যত সিলমোহর বসিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই। একেজি ভবন থেকে প্রকাশিত দলীয় মুখপত্রে কেরলের ফলাফল নিয়ে বিজয়নের নিবন্ধটি ছাপা হয়েছে।
দলের মধ্যে কেরল পার্টিকে এত দিন একটি কারণেই বারবার সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তা হল বিজয়নের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এ বার নির্বাচনের সময় সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেক কম ছিল বলে পলিটব্যুরো বৈঠকেই শংসাপত্র দিয়ে দিয়েছিলেন প্রকাশ কারাট। আর এখন বিজয়ন নিজেই বলছেন, “বাম জোট প্রশ্নাতীত ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে লড়াই করেছে।” নির্বাচনে ভাল ফলের জন্য অচ্যুতানন্দন-সরকারের কাজকর্মেরও ঢালাও প্রশংসাও করেছেন বিজয়ন। সিপিএম সূত্রের খবর, হায়দরাবাদে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কেরল থেকে যে রিপোর্ট দেওয়া হবে, তাতেও বাম-জোট সরকারের কাজকর্মের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অচ্যুতানন্দনের ভূমিকার আলাদা করে উল্লেখ থাকবে। গত সপ্তাহে কেরলে রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট নিজে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভোটের ফলাফল নিয়ে কী বলছেন পিনারাই বিজয়ন?
তাঁর যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনে কেরলে বামেদের ভোট ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে আরও আধ শতাংশ বেড়েছিল। এ বার বিধানসভায় তা বেড়ে ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনের ভরাডুবি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভোট ৩ শতাংশেরও বেশি বাড়াতে পেরেছে বাম-জোট । বিজয়ন আরও বলেছেন, “আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, বিরোধীর আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিলেও নির্বাচনে সিপিএম একক ভাবে বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে।” তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস ও বাম-জোটের মধ্যে ব্যবধান মাত্র চারটি আসনের। আর মোট ভোটের হিসেবে দু’পক্ষের ব্যবধান মাত্র লাখ দেড়েক ভোটের। বিজয়ন না বললেও, পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু লোকসভার তুলনায় বামেদের ভোটের হার কমেছে। একক দল হিসেবেও তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে সিপিএম।
এই তুলনামূলক হিসেব থেকে একেজি ভবনের নেতারা মনে করছেন, ভোটের ফলাফল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নানা রকম অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। তখন আলিমুদ্দিন স্ট্রিট চাইলেও প্রকাশ কারাটের নিজের রাজ্য নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলা মুশকিল। তবে বিজয়নের জেলা কান্নুর ও কারাটের এলাকা পালাক্কড়ে লাল দুর্গ বলে পরিচিত বেশ কিছু আসনে হেরেছে দল। এক মাত্র তা নিয়েই বিজয়নকে প্রশ্নের মুখে ফেলা যেতে পারে।

Previous Story Desh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.