একদা হত্যা ও সন্ত্রাসের জন্য কুখ্যাত অসমে ‘জল্লাদ’ মিলছে না! ফাঁসিবাজারেও নেই ফাঁসির ব্যবস্থা! ফাঁসির আদেশ চূড়ান্ত হওয়ার পরেও থমকে রয়েছে শাস্তিদান।
গত দু’দশকে এখানে ফাঁসি দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। ফলে পেশাদার জল্লাদেরও প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু দিন কয়েক আগে সেই প্রয়োজনই নতুন করে দেখা দিয়েছে। রাজ্যের জেল কর্তারা জল্লাদের খোঁজে হন্যে। কারণ ফাঁসি দিতে হবে মহেন্দ্রনাথ দাশকে। নিম্ন আদালত থেকে দেশের উচ্চতম আদালত, সকলেরই এক রায়-ফাঁসি। মহেন্দ্রনাথের শেষ ভরসা ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল। প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলেন তাঁর কাছে। গত ২৭ মে রাষ্ট্রপতি সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন। আর এরপরেই তৎপরতা শুরু হয়েছে জেল দফতরে। ফাঁসুড়ে চাই, ফাঁসুড়ে!
১৯৯৬ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৭টা নাগাদ, গুয়াহাটির ফ্যান্সিবাজার (ফাঁসিবাজারই লোকমুখে এখন ফ্যান্সিবাজার) ফাঁড়িতে ঢোকেন এক ব্যক্তি। তাঁর এক হাতে ছিল একটি কাটা মুণ্ড, অন্যহাতে রক্ত গড়ানো কাটারি। থানার বারান্দায় কাটা মুন্ডুটি নামিয়ে রাখেন তিনি। হতচকিত, সন্ত্রস্ত পুলিশকর্মীরা প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর পরে গ্রেফতার করে হত্যাকারীকে। সেই হত্যাকারীই মহেন্দ্রনাথ। নিহতের নাম হরকান্ত দাস।
গুয়াহাটি ট্রাক চালক সংগঠনের তদানীন্তন সম্পাদক হরকান্তবাবুকে ব্যস্ত রাস্তার চায়ের দোকানে আক্রমণ করেছিলেন মহেন্দ্রবাবু। প্রথমে হরকান্তবাবুর ডান হাত কেটে ফেলেন, পরে মাথা। হরকান্তবাবুর ছয় সঙ্গী ও রাস্তার বহু মানুষ ঘটনার সাক্ষী। কাটা মাথা-সহ পুলিশের কাছে সঙ্গে সঙ্গেই আত্মসমর্পণ করে মহেন্দ্রনাথ।
মহেন্দ্রবাবুকে কামরূপ দায়রা আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর ছেলের শাস্তির বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন মা, কুসুমবালা দাস। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে রায় বহাল থাকে। শেষ অবধি রাষ্ট্রপতি ৪৯ বছরের মহেন্দ্রনাথের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার পর একেবারেই শয্যাশায়ী ৭৪ বছরের কুসুমবালা। হরকান্তবাবুর ছেলে অমল দাস অবশ্য, রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তে খুশি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বাবার হত্যাকারীর ফাঁসির দিনের অপেক্ষায় রয়েছি। সেইদিন ন্যায়বিচার পূর্ণ হবে।”
কী ভাবছেন মহেন্দ্রনাথ নিজে? স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়েছিল তাঁকে। সেখানে তিনি বলেন, “হরকান্ত আমায় খুন করতে চেয়েছিল। নিজে বাঁচার জন্য ওকে মেরেছি। আমার কোনও অনুশোচনা নেই। তবে ইতিমধ্যেই আমি ১৪ বছর জেল খেটে ফেলেছি।” মহেন্দ্রনাথ দাসের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছে
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনের এশিয়া প্যাসিফিক অধিকর্তা স্যাম জারিফি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন,“সারা বিশ্বে যখন মৃত্যুদণ্ড যখন কমে আসার মুখে, তখন ভারতে এমন সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। প্রসঙ্গত ভারতে শেষ ফাঁসির ঘটনাটি ঘটে কলকাতায়। ২০০৪ সালে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি দিয়েছিলেন নাটা মল্লিক।
তবে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সমালোচনা থেকে দূরে, যোরহাটের জেলার বি দাস আপাতত ফাঁসুড়ের সন্ধানে ব্যস্ত। গুয়াহাটি কেন্দ্রীয় কারাগার যে এলাকায় অবস্থিত তা ফাঁসির জন্যই কুখ্যাত। তবে সেই ‘ফাঁসিবাজারে’-ও নেই ফাঁসির ব্যবস্থা। যোরহাটের জেলার জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই ফাঁসি দেওয়ার যোগাড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ফাঁসির মঞ্চটি বেশ কিছু পরিমাণ মাটি ফেলে উপযুক্ত করা হচ্ছে। চারদিকে পরিদর্শন মঞ্চও বানানো হচ্ছে। তবে কারাগার কর্তৃপক্ষ সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাজ্যে এই মুহূর্তে নিজস্ব ফাঁসুড়ে না থাকায় বিহার বা উত্তরপ্রদেশ থেকে ফাঁসুড়ে আনা হতে পারে। রাজ্য সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গের কাছেও ফাঁসুড়ে চেয়ে আবেদন করা হতে পারে।
যোরহাট জেলের প্রাক্তন জেলার বানীকান্ত বরুয়া রাজ্যের একমাত্র জেলার যাঁর আমলে ন’মাসের মধ্যে দুটি ফাঁসির ঘটনা ঘটে। ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর, তিনসুকিয়ার এক ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তানকে হত্যার জেরে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় হেনরি রবার্টকে। এরপর ১৯৯০ সালের জুলাই মাসে, ছ’জনের ব্যক্তির হত্যাকারী, কানপাই বুঢ়াগোহাইয়ের ফাঁসি হয়। দু’বারই ভিনরাজ্য থেকে ফাঁসুড়ে আনা হয়েছিল। |