রামদেবের আন্দোলন ভাঙা নিয়ে বিজেপি ও অন্য বিরোধী দলগুলি যখন মনমোহন সরকারকে নিশানা করে আক্রমণ শানাচ্ছে, তখন বিষয়টি নিয়ে খানিকটা দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে সিপিএম। গত কাল মধ্যরাতে রামলীলা ময়দানে অনশনকারীদের উপরে পুলিশি অভিযানের নিন্দা করলেও, সরকারের সঙ্গে রামদেবের ‘গোপন রফা’ নিয়ে সিপিএম প্রশ্ন তুলেছে। রামদেবের মঞ্চে আরএসএস-এর মতো ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’-র উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। দলের পলিটব্যুরোর বক্তব্য, এ থেকে রামদেবের ‘আদর্শগত পক্ষপাত’ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে রামদেবের সুরেই সুর মিলিয়েছে সিপিএম।
রামদেবের সঙ্গে কমিউনিস্ট নেতাদের অম্লমধুর সম্পর্ক অবশ্য আজকের নয়। বছর পাঁচেক আগে দলের পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাট রামদেবের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, রামদেবের আশ্রমের ওষুধ সম্পূর্ণ ভেষজ বলে দাবি করা হলেও তাতে মানুষ ও পশুর হাড় ব্যবহার করা হয়। রামদেবের আশ্রমের নিজস্ব ফার্মাসির ওষুধের নমুনা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরীক্ষাগারে জমা দেন বৃন্দা। সেই পরীক্ষায় ওষুধের মধ্যে প্রাণিজ নমুনা পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে গোটা দলই বৃন্দার পিছনে রয়েছে বলে জানিয়ে দেন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও। শ্রম আইনের পরোয়া না করে রামদেবের ওই ফার্মাসির কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে, অভিযোগ তুলে সময় দলের শ্রমিক সংগঠন সিটু আন্দোলনে নেমেছিল।
রামদেবের বিরুদ্ধে দলের জেহাদ ঘোষণা অবশ্য দলের সব স্তরের নেতারা সমর্থন করেননি। অনেক নেতাই সে সময় ভোটের কথা মাথায় রেখে রামদেবের ভক্তদের চটাতে চাননি। প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী তখন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছিলেন, “ওষুধে হাড় থাকলে দোষের কী আছে? মানুষ তো কাঁচা মাংস খেয়েও হজম করে ফেলে।” সল্টলেক স্টেডিয়ামে রামদেবের শিবিরে হাজিরও হন তিনি। এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে সুভাষবাবু জানিয়েছিলেন, তিনি যোগাসনের শক্তি প্রত্যক্ষ করতে গিয়েছিলেন।
সে সময় দলের মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হলেও, আজ কংগ্রেসের শীর্ষনেতা দিগ্বিজয় সিংহ রামদেবের সমালোচনায় বৃন্দা কারাটের সেই পুরনো অভিযোগের প্রসঙ্গই টেনে এনেছেন। রামদেবের সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবারের আঁতাঁতের প্রমাণ দিতে গিয়ে দিগ্বিজয় মনে করিয়ে দিয়েছেন, বৃন্দার অভিযোগের পাল্টা জবাবে আরএসএস রামদেবের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল। রামলীলা ময়দানেও সাধ্বী ঋতাম্ভরা-সহ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-আরএসএস নেতাদের বসিয়েছিলেন রামদেব। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সিপিএমের পলিটব্যুরো আজ অভিযোগ তুলেছে, “সরকারের সঙ্গে রামদেবের দর কষাকষি, অনশন তুলে নেওয়ার গোপন রফা, তার পরে আবার কথার খেলাপ করে অনশনে বসা কালো টাকার মতো গুরুতর বিষয়টিকে প্রহসনে পরিণত করেছে।” |