রামদেবের অনশন ভন্ডুল হয়ে যেতেই ফের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠতে নতুন উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ল বিজেপি। যোগগুরুর আপাতত ভেস্তে যাওয়া আন্দোলনে সওয়ার হয়েই নিজেদের সঙ্কট কাটাতে তৎপর লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ীরা আজ একযোগে আক্রমণ শানালেন সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি-দমন ও কালো টাকা উদ্ধার তো বটেই, রামদেবের ভক্তদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে আন্দোলনের রাশও নিজেদের হাতে তুলে নিতেই বিজেপি নেতৃত্ব আজ সন্ধ্যায় বিক্ষোভ দেখালেন রাজঘাটে গিয়ে।
আডবাণীর বক্তব্য, “গত কালের ঘটনা নগ্ন ফ্যাসিবাদ ছাড়া কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীকে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।” অন্য দিকে গডকড়ীর কটাক্ষ, “এ হল বিনাশকালে বুদ্ধিনাশের পরিস্থিতি। জরুরি অবস্থার অন্ধকার দিনগুলি ফিরে আসতে আর দেরি নেই।” এক ধাপ এগিয়ে দলের লোকসভা নেতা সুষমা স্বরাজের দাবি, কংগ্রেস সভানেত্রীর অনুমোদনেই মনমোহন সরকার এটা করেছে। রাষ্ট্রকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার পরেও সইদ আলি শাহ গিলানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না এই সরকার, রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ঠাঁই দেওয়া হয় সরকারি কমিটিতে (স্পষ্টতই ইঙ্গিতটা বিনায়ক সেনের দিকে), অথচ এক জন দেশপ্রেমিক সন্ন্যাসীর প্রতিবাদ করার অধিকার নেই। এটা গণতন্ত্র নয়।” সুষমা এ দিন ফোনে রামদেবের সঙ্গে কথাও বলেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। |
সঙ্ঘ ও বিজেপি বরাবরই আন্না হাজারে বা রামদেবের ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে এই আন্দোলনের রাশ হাতে নিতে পারছিল না। রামদেবকে কাল দিল্লি থেকে সরিয়ে দিতেই বিজেপি নেতৃত্ব সেই ‘শূন্যস্থান’ পূরণে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কাল মধ্যরাতেই দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে গডকড়ী স্থির করেন, রাজঘাট-সহ গোটা দেশে ২৪ ঘণ্টার সত্যাগ্রহ করা হবে। আজ সকালেই লখনউয়ে সেই ঘোষণা করেন তিনি। লখনউয়ে পদাধিকারীদের নির্ধারিত বৈঠকও তাই কাটছাঁট করে সব নেতাকে এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে রামদেবের আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চাইলেও যোগগুরুকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাইছে না বিজেপি। কারণ, কংগ্রেস ইতিমধ্যেই রামদেবকে ‘ঠগ’ বলতে শুরু করেছে। সরকারের সঙ্গে রামদেবের ‘গোপন’ সমঝোতার চিঠিও গত কাল ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, রামদেবের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতা দেখালে তার রাজনৈতিক খেসারতও দিতে হতে পারে। সে কারণে রামদেবকে পাশ কাটিয়েই তাঁর শুরু করা আন্দোলনকে পুঁজি করে মনমোহন-সনিয়াকে আক্রমণের কৌশল নিয়েছেন তাঁরা। আজ সকালে দলের রণনীতি ঘোষণার সময় গডকড়ী এক বারের জন্যও রামদেবের নাম উচ্চারণ করেননি।
লখনউয়ে চার দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পরে দলের উপলব্ধি, বিজেপি-তে এখনও সঙ্কট মেটেনি। দলে নেতৃত্বের সঙ্কট রয়েছে, একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেও ভাল ফল হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে রামদেবের তৈরি করা ভিতকে কাজে লাগিয়ে একজোট হয়ে ঝাঁপানোর সুযোগ এসেছে। তার ফলে দলের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটকেও মেটানো যাবে বলে মনে করছেন গডকড়ী।
বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “অনেক সাধু-সন্ত ও রামদেবের ভক্তদের উপরেও আক্রমণ হয়েছে, যেটি বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক। দুর্নীতি ও কালো টাকার প্রশ্নে রামদেব এমনিতেই কংগ্রেসকে কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছেন। এ বারে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন ও ভক্তদের উপরে অত্যাচারকে পুঁজি করে কংগ্রেসকে দু’দিক থেকে আক্রমণ করার সুযোগ এসেছে। রামদেবের অনুপস্থিতিতে, তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেও যোগগুরুর নৌকায় সওয়ার হওয়ার এটাই আদর্শ সময়।”
দলের নেতারাও তা-ই গত কালের ঘটনাকে জরুরি অবস্থা ও জালিয়ানওয়ালা বাগের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে আন্দোলনে নেমেছেন। লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেন, “১৯৭৫ সালে এই জুন মাসেই ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় আসার পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। আমাকে এক জ্যোতিষী সেই সময় বলেছিলেন, আমার বনবাস হবে। আমি তখন জ্যোতিষশাস্ত্রে তেমন বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু তার পর ২৫ জুন কারাবন্দি হলাম। সেই জুন মাসেই গণতন্ত্রের ইতিহাসে আর একটি কলঙ্ক লাগল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ভাবেই আন্দোলন করা হচ্ছিল। রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের উচিত অবিলম্বে সংসদের অধিবেশন ডাকা।” সুষমার সঙ্গে এক সুরে অরুণ জেটলিও বলেন, “বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও দিল্লিতে এসে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে যায়। তাতে মদত থাকে সরকারেরও। অথচ দেশভক্ত সন্ন্যাসী শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করলে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। ওসামা বিন লাদেনকেও কংগ্রেস শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। আর রামদেবকে বলছে ঠগ!” গডকড়ী দাবি করেন, “প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়া গাঁধীর উচিত, দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া। সরকার চালানোর সব অধিকার হারিয়েছে এই সরকার।” |