|
|
|
|
ভক্তদের মধ্যে ঝাঁপ মেরে পরে ফেললেন মেয়েদের পোশাক |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²নয়াদিল্লি |
রামলীলা ময়দানের মধ্যরাতের নাটক রামদেবকে ভবিষ্যতে কতটা অক্সিজেন দেবে? রাজধানীর অলিন্দে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নটাই।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, রামদেবকে এ বারের মতো হরিদ্বারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হলেও এই নাটকের পরিণতি কিন্তু সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে। হরিদ্বারে দফায় দফায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বাবা জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করেছে কংগ্রেস সরকার। তাঁকে ‘খুন করতে চেয়েছিল পুলিশ’। রামদেবের কথায়, ‘‘আমি মরতে ভয় পাই না। কিন্তু এমন বর্বর আক্রমণে মরতে চাই না।” তিনি হুমকিও দিয়ে বলেছেন, ‘সঠিক সময়ে’ সব ‘ষড়যন্ত্র’ই ফাঁস করে দেবেন। রামদেবের দাবি, “এই পুলিশি বর্বরতা জালিয়ানওয়ালাবাগ বা জরুরি অবস্থার সময়কে মনে পড়িয়ে দিয়েছে।” যদিও পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, রামদেবকে তুলে নিয়ে না গেলেই বরং তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। নির্দিষ্ট খবর ছিল বলেই পুলিশকে সক্রিয় হতে হয়েছে। |
|
নতুন বেশেহরিদ্বারের আশ্রমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি। রবিবার। এ পি |
প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার সাম্রাজ্যের মালিক রামদেব দেশের এক বিরাট অংশের কাছে কিংবদন্তির মতো। শুধু দেশেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর অসংখ্য অনাবাসী ভারতীয় ভক্ত। ২০ লক্ষ পাউন্ড দিয়ে তিনি কিনে রেখেছেন পশ্চিম স্কটল্যান্ডের নিকটবর্তী একটি দ্বীপ! যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রবল গ্ররম এবং পুলিশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রামলীলায় এক দিনেই জমায়েত হয়েছিলেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। রামলীলা ময়দান থেকে বলপূর্বক নিয়ে যাওয়ার সময় রামদেব তাঁর ভক্তদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন, আন্দোলন চালিয়ে যেতে। তাঁর পতঞ্জলি যোগপীঠের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পূর্ণানন্দ বলেন, “আমাদের উনি বলে গিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে। পুলিশের বর্বরতার প্রতিবাদ করতে। কেন রাত একটার সময় নিরীহ মানুষদের উপর লাঠি চালানো হল, এই প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন বাবা।”
শুধু সম্পূর্ণানন্দকে বলে যাওয়াই নয়, হরিদ্বারে পৌঁছেও চুপ করে বসে থাকেননি বাবা। দফায় দফায় সাংবাদিক সম্মেলন করে আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে। এই হেনস্থায় আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে তাঁর ভাবমূর্তি যাতে কোনও ভাবে টাল না খায়, তা নিশ্চিত করতে মরিয়া বাবা রামদেব। তাঁর প্রবল প্রতিপত্তি এবং প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন এমন একটি জল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই রামদেবকে নিয়ে চলছে। এ ব্যাপারে তিনি প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষত রামলীলা ময়দানের ঘটনার পর তাঁর বিশাল ভক্তমহলের সমবেদনার ঢেউ তাঁর দিকে। সংবাদমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ।
গত কালও গোটা দেশের নজর ছিল শুধু রামদেবের উপর। মধ্যরাতে যা ‘ক্লাইম্যাক্সে’ ওঠে। ঘড়ির কাঁটা তখন একটা পেরিয়েছে। রামলীলা ময়দান গুলজার করে চলছে দেশাত্মবোধক গান, বক্তৃতা, বাদ্য। হঠাৎই কাঁদানে গ্যাসে অন্ধকার হয়ে গেল গোটা এলাকা। পরিস্থিতি আঁচ করে উঠে দাঁড়ালেন গৈরিক বসন পরিহিত বাবা। যেন বা তাঁরই কোনও যোগাসনের ঢংয়ে হাত দু’টি সোজা করলেন! এবং সটান ঝাঁপ দিলেন মঞ্চের সামনে ভক্তসমুদ্রে।
আসলে, রাতে ময়দানে পুলিশ ঢোকার মুহূর্তেই সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন রামদেব। তখনই তিনি চিৎকার করে ওঠেন ‘বন্দে মাতরম’ বলে। উদ্দেশ্য, গোটা দিনের ধকলে ক্লান্ত ভক্তবৃন্দের ঝিমিয়ে পড়া স্নায়ুকে চাঙ্গা করে দেওয়া। এর পর লাঠি ও বন্দুকধারী পুলিশ যখন মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করছে, তখন কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই তিন মিটার উঁচু থেকে সটান ঝাঁপ দেন ৪৬ বছরের রামদেব। তার পরেই দৌড়ে যান একটি ঘেরা জায়গার দিকে, যেখানে রয়েছেন মহিলা ভক্তেরা। এর পরেই শুরু হয় তুমুল হট্টগোল, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ এবং রামদেবের সঙ্গে পুলিশের কার্যত লুকোচুরি খেলা। বাবা তত ক্ষণে দ্রুত পরে নিয়েছেন মহিলাদের সাদা কাপড়, দোপাট্টায় ঢেকে নিয়েছেন তাঁর বিস্তৃত শ্মশ্রু। ফলে বাবাকে গ্রেফতার করার আগে মহিলাদের হাতে ব্যাপক হেনস্থা হল পুলিশ কর্তাদের। শেষ পর্যন্ত মহিলা পুলিশ গিয়ে অবস্থা সামাল দেয়।
|
রাম কাহিনি |
l ১ জুন, রামদেবের সঙ্গে কথা বলতে দিল্লি বিমানবন্দরে চার মন্ত্রী।
l ২ জুন, রামলীলা ময়দানে অনশনের প্রস্তুতি। সরকারের আর্জি, এখনই অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন না।
l ৩ জুন, সরকারের সঙ্গে কথার পর রামদেব: পর দিন থেকে অনশন।
l ৪ জুন, সকাল, রামলীলা ময়দানে অনশন শুরু।
l বিকেল, কপিল সিব্বল বলেন, অনশন করবেন না, আশ্বাস দিয়েছেন রামদেব। দেখান রামদেবের সম্মতিপত্রও।
l সন্ধে, সিব্বল তাঁর চিঠি ফাঁস করায় ফের বেঁকে বসেন রামদেব।
l রাত ১টা, রামলীলা ময়দান ঘিরে ফেলে ৬০০ পুলিশ।
l রাত ২টো, ৫০-৬০ হাজার ভক্তকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস।
l ভোর ৪টে, রামদেবকে বিমানবন্দরে এনে পাঠানো হয় দেরাদুনে।
l ৫ জুন, হরিদ্বারের রামদেব জানান, অনশন সত্যাগ্রহ জারি থাকছে। |
|
ছবি-পি টি আই
|
|
|
|
|
|