কখনও পরিচারিকার, আবার কখনও বা সরকারি হাসপাতালে আয়ার কাজ করে ছেলেকে বড় করে তুলেছেন তিনি। পরবর্তী কালে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে ছেলেকে সেই কাজ জুটিয়ে দিয়েছেন। সেই ছেলের বিরুদ্ধেই এ বার নিগ্রহের অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এক স্বামীহারা মহিলা।
কসবার বোসপুকুর রোডের বাসিন্দা বুলা মান্না তাঁর একমাত্র ছেলে চন্দ্রনাথ মান্নার বিরুদ্ধে নিগ্রহের অভিযোগ এনে এবং মাসে পাঁচ হাজার টাকার খোরপোষ দাবি জানিয়ে আলিপুর আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। বুলাদেবীর দাবি, তাঁর ছেলের মাসিক রোজগার প্রায় ২০ হাজার টাকা। কিন্তু ছেলে তাঁকে খেতে-পরতে দেন না, উল্টে হেনস্থা করে। চন্দ্রনাথকে এ ব্যাপারে ১ জুলাই অষ্টম বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বৃদ্ধবৃদ্ধাদের নিগ্রহ, বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের হাতে বাবা-মায়ের লাঞ্ছনা রুখতে আইন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আদালতও নিগৃহীত মা-বাবার কাছে অত্যাচারী ছেলেমেয়ের ক্ষমা চাওয়ানোর ব্যবস্থা করে, কখনও বা রোজ সকালে বাবা-মাকে প্রণামের দাওয়াই দিয়ে পুরো পরিবারকে মিলিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু তাতে যে সন্তানদের হাতে বাবা-মায়ের নিগ্রহ বিশেষ কমেনি, কসবা-বোসপুকুরের বুলাদেবীর কাহিনিই তার প্রমাণ।
ওই নিগৃহীতা মায়ের আইনজীবী আদালতকে জানান, তাঁর মক্কেল বুলাদেবীর স্বামী জিতেন্দ্রনাথ মান্না ১৯৬৩ সালে কর্মরত অবস্থায় মারা যান। সাত, পাঁচ এবং এক বছর বয়সের তিনটি মেয়ে এবং তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে অকূলপাথারে পড়েন ওই বিধবা। নিরুপায় হয়ে তিনি বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ নেন। এ ভাবে কিছু দিন চলার পরে তিনি একটি সরকারি হাসপাতালে আয়ার কাজ পেয়ে যান। সেই রোজগারেই সংসার টেনে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেন।
মেয়েদের বিয়েও দেন। বুলাদেবী আদালতে জানান, তিনি ছেলে চন্দ্রনাথকে আইটিআই পড়িয়েছেন। তাঁর স্বামী যে-সংস্থায় কাজ করতেন, সেখানে মেকানিকের কাজও জোগাড় করে দেন ছেলেকে। তার পরে চন্দ্রনাথ বিয়ে করেন। তাঁর একটি ছেলেও হয়। পরবর্তী কালে ওই সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চন্দ্রনাথ ১০ লক্ষ টাকা পান। তখন বুলাদেবী তাঁর সরকারি হাসপাতালের কাজ থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন। ছেলে সেই কাজটি পায়। তার পরেই ছেলে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা।
বুলাদেবীর অভিযোগ, বাড়িটি তাঁর নামে লিখে দিতে হবে বলে দাবি জানাতে থাকেন ছেলে। তিনি সেই দাবি না-মানায় তাঁর উপরে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু করেন চন্দ্রনাথ। এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ভাড়া বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। সেখানেও চড়াও হন চন্দ্রনাথ। বুলাদেবীকে সেই বাড়ি থেকে বার করে দিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে বুলাদেবী তাঁর এক বিবাহিতা মেয়ের বড়িতে আশ্রয় নেন। বুলাদেবীর অভিযোগ, পুলিশকে সব কিছু জানানো সত্ত্বেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁর সমস্যারও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। |