প্রোমোটার খুনের ঘটনার পরে ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জানা যায়নি খুনের কারণও। তবে আসানসোলের ছাঁট লোহা মাফিয়া ইমতিয়াজ খানকে অন্য একটি খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য দাবি করেছেন, তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে। দ্রুত ঘটনার কিনারা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ আসানসোলের জনবহুল কোর্ট মোড় এলাকায় নির্মীয়মাণ বহুতলে খুন হন প্রোমোটার রামলক্ষ্মণ যাদব। নিহত হন তাঁর আরও দুই সঙ্গী। তদন্তে নেমে পুলিশ ১৫ জনকে আটক করে। পরে তাঁদের বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ জনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ ইমতিয়াজকে দশ দিন নিজেদের হেফাজতে রাখার জন্য এসিজেএমের কাছে আবেদন জানায়। বিচারক অবশ্য তাঁর চার দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপার বলেন, “তদন্তের কাজ এগোচ্ছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক সূত্র মিলেছে।” রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মলয় ঘটক বলেন, “পুলিশ দ্রুত তদন্ত করছে। শীঘ্রই সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১০-এ বার্নপুরের হুসেননগরের বাসিন্দা ওয়াসিম হাসান রাজা হাবিবিকে খুনে মূল অভিযুক্ত ইমতিয়াজ। ওয়াসিম ছিলেন ইমতিয়াজের বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গী। নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় খুন হতে হয় তাঁকে। জামুড়িয়া থানার রাঙ্গা কোলিয়ারির একটি পরিত্যক্ত খাদে ওয়াসিমের দেহ উদ্ধার হয়। নিহতের পরিবারের তরফে থানায় যে অভিযোগ দায়ের হয়, তাতে ইমতিয়াজ ছিলেন মূল অভিযুক্ত। এত দিন ইমতিয়াজকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। তাই তাকে ধরা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রামলক্ষ্মণ যাদব খুনের ঘটনার পরেই প্রাথমিক সন্দেহের তির ছিল ইমতিয়াজের দিকে। কারণ, ইস্কোর বাতিল লোহা কেনাবেচা ও লোহা আকরের গুঁড়ো পরিবহণের কারবারে জড়িত ছিলেন রামলক্ষ্মণ। সম্প্রতি এই কারবারের বরাত পাওয়ার চেষ্টা করেন ইমতিয়াজ। কিন্তু রামলক্ষ্মণের আধিপত্যে তা তাঁর পক্ষে সহজ হচ্ছিল না। খুনের পিছনে এই ঘটনার কোনও ভূমিকা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইমতিয়াজকে হিরাপুর থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোটা এলাকায় ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারা রয়েছে হিরাপুর থানায়।
এ দিকে, পুলিশের অনুমান, এই খুনের ঘটনায় রামলক্ষ্মণের কাছের কেউ বা কয়েক জন জড়িত থাকতে পারে। কারণ, যেখানে তিনি খুন হয়েছেন সেখানে তিনি সচরাচর যেতেন না। সব সময় অন্তত ১০-১২ জনের একটি দল তাঁর সঙ্গে থাকত। কিন্তু ঘটনার দিন এত জন তাঁর সঙ্গে ছিল না। সে দিন যে তিনি ওই সময়ে অল্প সঙ্গীকে নিয়ে সেখানে যাবেন, তা তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ আততায়ীদের দিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের। ঘটনার দিন যে গাড়িতে চেপে রামলক্ষ্মণ সেখানে গিয়েছিলেন তার চালক দিলীপ সিংহকেও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সে দিন গুলিতে জখম মুকেশ সিংহ দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। তাঁর কাছ থেকেও কিছু সূত্র মিলতে পারে বলে আশা করছে পুলিশ। |