মমতা দেখুন: হাওড়া জেলা হাসপাতাল
অব্যবস্থায় মারা যাচ্ছে
সদ্যোজাত, কর্তৃপক্ষ দর্শক
²
হরাঞ্চলের অন্যতম নামী সরকারি হাসপাতালে বসে একটু-একটু করে চোখের সামনে সদ্যোজাত সন্তানকে নেতিয়ে পড়তে দেখছেন কৃষ্ণা পোড়েল। অসহায় ভাবে বলছেন, “বাচ্চাটা মরে যাচ্ছে। এক বার এখানে আসতে বলুন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। উনি যদি কিছু করতে পারেন!”
কৃষ্ণাদেবীর কথায় কান দেওয়ার মতো অবশ্য কেউ নেই। তাঁর এক দিনেরও কম বয়সী ছেলেকে বাঁচাতে যা যা দরকার, সেই রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার, ভেন্টিলেটর, ইনফিউশন পাম্প, পালস অক্সিমিটার, ফটো থেরাপি মেশিন বা ফিডিং টিউব, কিছুই তো নেই হাওড়া জেলা হাসপাতালের সদ্যোজাত বিভাগে। জেলার সব চেয়ে বড় হাসপাতাল অথচ নিওনেটাল কেয়ার বা সদ্যোজাতের যত্নের ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও সেখানে গড়ে তোলা হয়নি। কৃষ্ণাদেবীর শিশুর ওজন অত্যন্ত কম। দুর্বল হওয়ায় মায়ের দুধ টানতে পারছে না। জন্মের পর দশ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে, এক ফোঁটা খাবার পেটে যায়নি ছোট্ট শিশুর। দেহে জল ক্রমশ কমছে, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। একটু স্যালাইন চালানো বা টিউব দিয়ে খাওয়ানো পর্যন্ত হয়নি। এই শিশুদের দ্রুত সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সংক্রমণ আটকানোরও কোনও ব্যবস্থা নেই।
সদ্যোজাতকে নিয়ে হাওড়া হাসপাতালে কৃষ্ণা পোড়েল। - রণজিৎ নন্দী
শিশুটির অবস্থা খারাপ হচ্ছে দেখে শুধু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দায় সেরেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি ভাবে যে গাড়ি কৃষ্ণাকে দেওয়ার কথা, তা দিতে পারেননি। জননী সুরক্ষা যোজনার অন্তর্গত ওই গাড়ি নাকি এখনও কেনাই হয়নি! কৃষ্ণাদেবীকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই। তাঁর আর্থিক সঙ্গতিও নেই। শুক্রবার গভীর রাতে সন্তান জন্মেছে। শনিবার রাত পর্যন্ত সদ্যোজাত অসুস্থ সন্তান নিয়ে হাওড়া হাসপাতালের শয্যায় পড়ে রয়েছেন সদ্য-প্রসূতি।
শুক্রবার রাত ২টো নাগাদ হাওড়া হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন হাওড়ার সাঁকরাইল নিমতলা উত্তর পাঁচপাড়ার বাসিন্দা ১৯ বছরের কৃষ্ণা পোড়েল। সদ্যোজাতের ওজন মাত্র ১ কিলো ৭০০ গ্রাম (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আড়াই কিলোর কম ওজন হলেই শিশুর বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন)। কিন্তু হাওড়া হাসপাতালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সদ্যোজাতের শরীর গরম রাখতে ন্যূনতম বাল্বের ব্যবস্থাটুকুও নেই। তুলোর কম্বল দিয়েও কোনও নার্স শিশুটিকে জড়িয়ে রাখেননি। শনিবার বেলা একটাতেও কোনও চিকিৎসক শিশুকে দেখেননি, স্যালাইন চালাননি, টিউবে খাওয়ানো বা গা গরম রাখার ব্যবস্থা হয়নি। সাংবাদিক এসেছেন শুনে এক আয়া তাড়াতাড়ি বললেন, “ড্রপার দিয়ে দুধ খাইয়ে দিই।” আর এক জন বাধা দিয়ে বললেন, “না না। বাচ্চার খারাপ অবস্থা। দুধ খাওয়াতে গেলে দম আটকে যাবে। ও সবের মধ্যে থেকো না।”
শিশুকে বাঁচাতে মেডিক্যাল কলেজে চলে যেতে বলা হয়েছে কৃষ্ণাকে। তাঁর স্বামী প্রসেনজিৎ দিনমজুর। এক দিনের রোজগার নষ্ট হওয়ার ভয়ে স্ত্রী-সন্তানকে মেডিক্যালে নিয়ে যাননি। অন্য আত্মীয় স্বজনও নেই। ফলে কৃষ্ণা পড়ে আছেন। কিন্তু প্রসূতিদের জন্য নির্ধারিত যে সরকারি গাড়িতে নিখরচায় কৃষ্ণাকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার কথা, তার কী হল?
হাসপাতালের সুপার শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “দু’টো গাড়ি পাওয়ার কথা। একটাও এখনও কেনা হয়নি। নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট তৈরি সম্পূর্ণ হয়নি। যন্ত্রটন্ত্র তেমন নেই। অসুস্থ শিশুদের আপাতত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া গতি নেই।” রাজ্যের পরিবার কল্যাণ কমিশনার দিলীপ ঘোষের কথায়, “সব জায়গায় গাড়ি চালু হয়নি, সিক নিউবর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের ব্যবস্থাও হয়নি। আশা করছি এ বছরের শেষে হয়ে যাবে।”
কিন্তু তত দিন কৃষ্ণার সন্তানের মতো অনেকের কী হবে?
শুক্রবার গভীর রাতে ওই হাসপাতালে কৃষ্ণার পাশাপাশি ইশরাত পরভিন নামে এক জনেরও কম ওজনের বাচ্চা হয়। তাকেও মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছে। তার আগের দিন ফরিদা বেগম নামে এক প্রসূতি কম ওজনের শিশুর জন্ম দেন। ভেন্টিলেটর না-পেয়ে সেই শিশু মারা যায়।
এসএসকেএম হাসপাতালের নিওনেটাল বিভাগের প্রধান অরুণ সিংহ বা শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ কৃষ্ণার কথা শুনে আঁতকে উঠেছেন। জানিয়েছেন, এতটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এত কম ওজনের সদ্যোজাতকে ইনফিউশন পাম্প দিয়ে স্যালাইন না-দেওয়া, শরীর গরম করার চেষ্টা না-করা এবং শিশুকে শারীরিক ভাবে স্থিতিশীল না-করে অন্যত্র রেফার করা গর্হিত অপরাধ। এতে রাস্তাতেই সদ্যোজাতের মৃত্যু হতে পারে। তা ছাড়া, অন্য হাসপাতালে গেলেই যে সে ভর্তি হতে পারবে, সে নিশ্চয়তা তো কেউ দেয়নি। তখন কোথায় হবে শিশুর চিকিৎসা?
উত্তর মেলেনি।
First Page Swasth First Page


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.