|
|
|
|
কোমরে দড়ি দিয়ে ঘোরানো হল সিপিএম কর্মীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² বর্ধমান |
কথায় আর কাজে মিলছে না।
রাজ্যের নতুন কর্ণধারেরা যতই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানান, তাঁদেরই কিছু লোকজন কথায়-কথায় ‘পেশিশক্তি’ জাহির করছেন। শনিবার বর্ধমানে সেই ঘটনাই ফের ঘটল। আর্থিক তছরুপের অভিযোগে কোমরে দড়ি বেঁধে গ্রামে ঘোরানো হল গ্রামোন্নয়ন কমিটির সিপিএম সদস্যদের। চলল মারধর। অথচ স্রেফ ‘ভয়েই’ পুলিশে অভিযোগ করা হল না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার তৃণমূল কর্মীদের ‘সংযত’ এবং পুলিশকে ‘সক্রিয়’ হতে বলছেন। কিন্তু তাঁর সেই ‘বার্তা’ যে নিচুতলায় পৌঁছচ্ছে না, ঘাটালে ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধ সিপিএম নেতাকে মারধর বা আরামবাগে সিপিএম নেতা-কর্মীদের কান ধরানোয় তা স্পষ্ট। বাম কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ নিয়ে শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু তার পরেও এই ঘটনা।
ঘটনার সূত্রপাত সকাল ৯টা নাগাদ বর্ধমান সদর থানার সরাইটিকর গ্রামে। নানা উন্নয়ন প্রকল্পে আর্থিক তছরুপ হয়েছে অভিযোগ তুলে সিপিএমের প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শ্রীকান্ত ঘোষ, গ্রামোন্নয়ন কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক, অশ্বিনী মণ্ডল, সুকুমার প্রামাণিক, কার্তিক মণ্ডল ও সুনীল মল্লিককে ঘেরাও করেন বেশ কিছু লোকজন। মারধর ছাড়াও কোমরে দড়ি বেঁধে তাঁদের গ্রামে ঘোরানো হয়। পরে তাঁরা ‘মুচলেকা’ লিখে দেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ছ’লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এক মাসের ভিতরে সেই টাকা তাঁরা গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেবেন বলে চুক্তিপত্রও হয়েছে। ছ’জনই মুচলেকায় সই করেছেন। |
|
কোমরে দড়ি দিয়ে ঘোরানো হচ্ছে সিপিএম সদস্যদের। নিজস্ব চিত্র। |
গ্রামের প্রশান্ত রাজবংশী, শেখ জামির, বিকাশ মালিকেরা বলেন, “বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ কেন সম্পূর্ণ হয়নি তার খোঁজ নিতে গিয়ে আমরা দেখি, প্রকল্পের খরচ পঞ্চায়েত মিটিয়ে দিয়েছে। গ্রামোন্নয়ন কমিটির সদস্যদের কাছে হিসেব চাইলে ওঁরা ১৫ দিন সময় চান। শুক্রবার বিকেলে সময়সীমা শেষ হয়। এ দিন হিসেব চাইতেই তাঁরা টাকা আত্মসাতের কথা মেনে নেন।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ জামালের বক্তব্য, “সিপিএম পরিচালিত এই পঞ্চায়েতে উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করাটাই ছিল রেওয়াজ। গ্রামের মানুষ শান্তিপূর্ণ উপায়ে অর্থ তছরুপের হিসেব লিখিয়ে নিয়েছেন। কাউকে মারধর, এমনকী গালিগালাজও করা হয়নি।”
নিগৃহীতরা কেউ কথা বলতে চাননি। তবে সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ তা অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের কিছু লোক দলীয় কার্যালয়ে আমাদের দলের চার সদস্যকে আটকে রেখে মারধর করে। জোর করে অনেক কিছু লিখিয়েও নেওয়া হয়েছে। শ্রীকান্ত ঘোষকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।” তাঁরই দলের পঞ্চায়েতপ্রধান শেখ জিকরিয়া অবশ্য বলেন, “কয়েকটি প্রকল্পের খরচ নিয়ে অসঙ্গতি থাকায় গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়, টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। তবে এ দিন ঠিক কী ঘটেছে, সবটা জানি না।” খবর পেয়ে পুলিশ এ দিন গ্রামে গিয়েছিল। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার বলেন, ‘‘কয়েক জনকে আটকে স্থানীয় বাসিন্দারা উন্নয়ন প্রকল্পের হিসেব আদায় করেছেন বলে শুনেছি। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।”
বর্ধমান থানার আইসি শুভাশিস চৌধুরী বলেন, “পুলিশের কাছে কেউ মারধর বা কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানোর অভিযোগ করেননি।” সিপিএমের প্রদীপবাবুর মতে, “পুলিশে অভিযোগ করতে ওঁরা ভয় পাচ্ছেন। এর আগে পুলিশে জানানোয় কয়েক জনকে গ্রামছাড়া হতে হয়েছে।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “শুনেছি, গ্রামবাসীই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হিসেব চাইতে গিয়েছিলেন। কর্মীদের আমরা বারবার সংযত হতে বলছি। তবু এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে কেউ যদি নির্দিষ্ট অভিযোগ করেন, দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত কিছু দিন ধরে স্বপনবাবুরা এই একই কথা বলে আসছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে কই? |
|
|
|
|
|