অভাবী মেধাবী

কটাই কুপি কিনে দিয়েছিলেন বাবা। সেই আলোয় পড়তে বসত দিদি ও দুই বোন। ওরা চিৎকার করে পড়তে অভ্যস্ত। তাই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকা রাইমোহন মোহিনীমোহন বিদ্যাপীঠের ছাত্র অরবিন্দ সাহা নিরিবিলি পরিবেশে পড়ার জন্য বেছে নেয় বাড়ির পাশের দুর্গামন্দির। রাত ৮টা পর্যন্ত সন্ধ্যা আরতির পরে মন্দির কমিটিকে বলে সেখানে রাত জেগে পড়ে এ বার ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। তবে পরীক্ষার ফলাফল জানার পরে সাময়িক আনন্দ হলেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অরবিন্দ। ওই পড়ুয়ার ইচ্ছা বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হবে। কিন্তু অভাবের সংসারে সাধ জাগলেও সাধ্য কোথায়! মাধ্যমিকে খাতা কলমের খরচ জোটাতে বাবার ভ্যান নিয়ে বার হতে হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও গৃহ শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে পারেনি। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে গেলে গৃহশিক্ষক ছাড়া চলবে না। ওই টাকা কেমন করে জোটাবে এখন সেই চিন্তা কুরে খাচ্ছে অরবিন্দকে। ছেলের ফল জানার পরে কিছুটা দিশেহারা বাবা সুখচাঁদ সাহাও। তাঁর দুই মেয়ে তিন ছেলের প্রত্যেকে মেধাবী। ছেলেমেয়েদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে দিন ফুরিয়ে যায় তাঁর। লেখাপড়ার বাড়তি খরচ জোটাবেন কেমন করে! বাড়তি পরিশ্রমের ক্ষমতাও কমেছে। তাই খুশি নেই মনে। ছেলের স্বপ্ন পূরণ কেমন করে সম্ভব হবে সেই চিন্তায় তাঁর ঘুম উবে গিয়েছে। ভালুকা বাজার এলাকায় বাড়ি অরবিন্দদের। বাড়ি বলতে মাটির ভাঙাচোরা একটি ঘর। ছাদের খানিকটা টালি। বাকিটা ত্রিপলে ছাওয়া। বাসিন্দারা ওই বাড়িকে ‘রত্নগৃহ’ বলে জানেন। বাড়ির বড় ছেলে শ্রীকান্ত টিউশন পড়িয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছে। বড় মেয়ে পুষ্পলতা গত মাধ্যমিকে ভাল ফল করে স্থানীয় স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া শোভা এবং চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া ভুবনেশ্বরীও মেধাবী। ভ্যান চালক বাবার কষ্টের কথা ভেবে পড়াশোনার জন্য বাড়তি কুপির আবদার করতে মন সায় দেয়নি ছেলেমেয়েদের। কারণ শুধু কুপি কিনলেই তো হবে না! নিয়মিত কেরোসিন তেলের ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলেমেয়েরা জানে বাবা সেটা পারবেন না। অনেক ভেবে অরবিন্দ পড়ার জন্য নিজের মতো করে বেছে নেয় মন্দিরের আলো। সেখানে বসে পড়ে মাধ্যমিকে ৬৩৭ নম্বর পেয়েছে সে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর এ রকমবাংলায় ১৪৯, ইংরেজিতে ৭৫, অঙ্কে ৯২, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৮৩, ইতিহাসে ৬১ এবং ভূগোলে ৮০। ওই পড়ুয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্তোষকুমার পাল বলেন, “অরবিন্দ মেধাবী ছাত্র। ওর ভাইবোনরাও মেধাবী। স্কুলের তরফে ওদের সাধ্য মতো সাহায্য করা হত।” অরবিন্দর বাবা সুখচাঁদবাবু বলেন, “ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে বুক ফেটে যায়। ওদের পেটপুরে খাবারটুকু দিতে পারি না। আধপেটা খেয়ে কষ্ট সহ্য করে ওরা নিজেদের চেষ্টায় পড়ছে।”

Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.