উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হাসপাতাল পরিদর্শন করে পরিষেবার হাল ফেরাতে সুপারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাতে হাল ফেরা তো দূরের কথা, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের পরিষেবা সেই তিমিরেই যে রয়ে গিয়েছে তা ফের স্পষ্ট হল এক সদ্যোজাতের মৃত্যু ঘটনায়। বুধবার দুপুরে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে হাসপাতালের নার্সরা প্রসব করানোর কিছুক্ষণ পরেই ওই সদ্যোজাতের মৃতু হয়। অথচ চিকিৎসক রাত আটটার সময় হাসপাতালে এলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রোগীর লোকেরা চিকিৎসককে ঘেরাও করে রাখেন। পুলিশ যায়। হাসপাতাল সুপার লিখিত ভাবে তদন্তের আশ্বাস দিলে ঘন্টা তিনেক পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৭ টা নাগাদ শিলিগুড়ির আদর্শনগর এলাকার বাসিন্দা প্রসূতি রত্না দত্তকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সে সময় চিকিৎসক শম্ভু রানা তাঁকে দেখে বলে গিয়েছিলেন। গর্ভস্থ সন্তান উল্টো অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি সন্দেহ করেন। সেই মতো নার্সদের নির্দেশও দিয়ে যান অলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে। তা দেখেই তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ, এর পর বেলা ৩ টা নাগাদ প্রসবযন্ত্রণা শুরু হলে নার্সরা চিকিৎসককে না ডেকে নিজেরাই প্রসব করান। সদ্যোজাত অসুস্থ হয়ে পড়লে অক্সিজেন দেওয়া হয়। অথচ বাচ্চা হয়েছে বলে বাড়ির লোকেরা তখনও জানতেন না। এর পর পরিবারের লোকদের ডেকে জানানো হয় সদ্যোজাত পুত্র সন্তান গুরুতর অসুস্থ রয়েছে। তা দেখে চিকিৎসকের সঙ্গে পরিবারের লোকেরা যোগাযোগ করতে চাইলে জানতে পারেন চিকিৎসক ছাড়াই বাচ্চা প্রসব করানো হয়েছে। বিকেল ৪ টার সময় নার্সরা জানান সদ্যোজাত শিশুটি মারা গিয়েছে। তা জেনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাড়ির লোকেরা। চিকিৎসক শম্ভুবাবু বলেন, “রত্নাদেবীকে প্রসব করানোর সময় হাসপাতাল থেকে আমাকে কোনও কল-বুক দেওয়া হয়নি। নার্সরাই প্রসব করিয়েছেন। তাঁরাই সাধারণত প্রসব করান। সমস্যা হলে চিকিৎকদের খবর দেন। সন্ধ্যায় রাউন্ড দিতে এসেই রত্নাদেবীর বিষয়টি জানতে পারি।” হাসপাতালের সুপার সুশান্ত সরকার জানান, রোগীর পরিবারের তরফে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত কমিটি গড়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়াই হাসপাতালের নার্সরা কী ভাবে প্রসব করান তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আদর্শনগরের বাসিন্দা রত্নাদেবীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর স্বপন চন্দ। হাসপাতালে গিয়ে তিনি ঘটনার তদন্ত করে ওই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। প্রসূতি রত্নাদেবীর স্বামী পিন্টুবাবু বলেন, “এমন হলে হাসপাতালের ওপর আমাদের মতো বাসিন্দা ভরসা করবেন কী করে। জন্মের পর শিশুটি অসুস্থ হলেও যে চিকিৎসক দেখছিলেন তিনি আসেননি। অন্য চিকিৎসকও দেখেন কি না স্পষ্ট বুঝতে পারছি না। হাসপাতালের গাফিলতিতেই আমার সর্বনাশ হল।” |