|
|
|
|
শিশুর জন্মের পরেই শংসাপত্র পাবেন বাবা-মা |
প্রশান্ত পাল ² পুরুলিয়া |
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ, হাল ফেরাতে হবে হাসপাতালের। সরকারি পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষের হয়রানি যাতে বন্ধ হয়, সে ব্যাপারও নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কার্যত নিঃশব্দে সে-রকমই এক অভিনব ‘বদল’ ঘটে গেল পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে। এত দিন এই হাসপাতালে জন্মানো নবজাতকদের জন্মের শংসাপত্র সংগ্রহ করতে হত পুরসভা থেকে। তাতে শিশুর পরিবারের হয়রানি বাড়ত, সময়ও লাগত বেশি। এ বার ঠিক হয়েছে, নবজাতক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময়েই অভিভাবকদের হাতে জন্মের শংসাপত্র তুলে দিতে হবে। বুধবার থেকে কার্যকরী হল এই ব্যবস্থা। যার পোশাকি নাম, ‘অনলাইন ডিস্ট্রিবিউশন অফ বার্থ অ্যান্ড ডেথ সার্টিফিকেট’। এই সদর্থক উদ্যোগের নেপথ্যে যিনি, তিনি হলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ।
জেলাশাসক বলেন, “আমি দিন কয়েক আগে সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি, একটি ঘরের দরজা বন্ধ। বাইরে অনেক লোকজন অপেক্ষা করছে। তাঁরা আমাকে জানালেন, সদ্যোজাতদের জন্মের শংসাপত্র নিতে এসে বারবার তাঁদের ফিরে যেতে হচ্ছে। প্রচণ্ড হয়রানি হচ্ছে।” এর পরেই জেলাশাসক খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সদর হাসপাতাল থেকে নবজাতকদের জন্ম সংক্রান্ত তথ্য পুরসভায় পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে জন্ম-শংসাপত্র দেওয়া হয়। জেলাশাসকের কথায়, “দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ‘বার্থ সার্টিফিকেটের’ জন্য আসছেন আর ফিরে যাচ্ছেন। এটা জেনে ঠিক করলাম, প্রযুক্তির সাহায্যে প্রসবের পরে প্রসূতি হাসপাতাল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে শংসাপত্র পান, তা দেখতে হবে। তার পরেই আমরা এ কাজের জন্য একটা কম্পিউটার সফ্টঅয়্যার তৈরি করি। সেই সফ্টঅয়্যার ব্যবহার করেই ওই শংসাপত্র শিশুদের অভিভাবককে দেওয়া হবে।” |
|
ছবি: প্রদীপ মাহাতো। |
এ দিনই সেই কম্পিউটারচালিত ব্যবস্থার উদ্বোধন করে হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করা দুই নবজাতকের মা, পুঞ্চার নোয়ান্ডি গ্রামের শম্পা দত্ত এবং বাঘমুণ্ডির শিরকাডি গ্রামের সন্তোষী কুমারের হাতে জন্ম-শংসাপত্র তুলে দেন জেলাশাসক। দুই প্রসূতিই বললেন, “এমনিতে জন্মের শংসাপত্র পেতে অনেক সময় লাগে। পুরসভা থেকে তা পেতে বেশ কয়েকবার সদরে আসতে হয়। আজই আমরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলাম শংসাপত্র-সহ। খুব ভাল লাগছে। এতে অনেকের হয়রানি কমবে।”
অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “এই ব্যবস্থা চালু করার আগে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি। তিনি আমাকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন।” তিনি জানিয়েছেন, একই ভাবে কোনও রোগীর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারের লোকজনকেও সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে মৃত্যু-শংসাপত্র দেওয়া হবে। সদর হাসপাতালের সুপার স্বপন সরকার বলেন, “ওই কম্পিউটারটি এ দিন থেকেই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে থাকবে। অভিভাবকেরা তাঁদের নবজাতকদের নাম ঠিক করতে পারলে নাম-সহ শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হবে। আর নাম না ঠিক করতে পারলে পরে অভিভাবকেরা পরে পুরসভায় এসে শংসাপত্রের ক্রমিক নম্বর-সহ আবেদন করলে ওই নম্বর ও শিশুর নাম হাসপাতাল ও পুরসভার কম্পিউটারে লোড করে নেওয়া হবে। ওই শংসাপত্রে শিশুর নামও ছাপা হবে।”
জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্তের কথায়, “আমরা বাবা-মাকে বলব, যাতে জন্মের পরেই শিশুর নামকরণ করে নেন। যাতে নাম-সহ শংসাপত্র একবারে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া যায়।” রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মানবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “পরবর্তীকালে অন্য জেলা সদর হাসপাতাল এবং গ্রামীণ হাসপাতালেও কম্পিউটারচালিত এই ব্যবস্থা চালু করব।” |
|
|
|
|
|