|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রীর হঠাৎ-সফর |
হাসপাতালের ভগ্নস্বাস্থ্য দেখতে এ বার বাঘা যতীনে |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² কলকাতা |
বেলা বারোটাতেও আউটডোর চালু হয়নি। ঘরে ঘরে চিকিৎসক ও অন্য কর্মীদের গুলতানি চলছে। বাইরে ঠায় অপেক্ষায় রোগীরা। কখন ডাক্তারবাবুদের সময় হবে, কেউ জানেন না। এ নিয়ে তাঁদের কোনও অভিযোগও নেই। কারণ দিনের পর দিন এ ভাবে অপেক্ষা করতেই তাঁরা অভ্যস্ত। আচমকাই ছবিটা বদলে গেল বুধবার।
সওয়া বারোটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সামনে দাঁড়াতেই জোর শোরগোল। রোগীরা ঘিরে ধরলেন তাঁকে। কেউ প্রণাম করছেন, কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, কেউ আবার ক্ষোভে ফুঁসছেন, “দেখুন, আমাদের তো মানুষ বলেই মনে করে না এরা।”
এসএসকেএম, বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের পরে এ বার বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। আগাম না জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঝটিকা সফর। শহরের বড় হাসপাতালগুলো ছেড়ে এই তথাকথিত ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ হাসপাতালে যে তিনি আসবেন, তা বোধ হয় এখানকার কর্তারাও ভাবেননি। তাই আচমকা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তাদের ঘরে ঢুকে পড়ায় সকলে হতচকিত হয়ে পড়েন। দৃশ্যতই এতটা ঘাবড়ে যান তাঁরা যে, উঠে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাতেও ভুলে গিয়েছিলেন। আর তার পরে তো আক্ষরিক অর্থেই ‘র্যাপিড ফায়ার রাউন্ড’। |
|
আউটডোরে অপেক্ষারতদের সমস্যার কথা শুনছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
“আউটডোর ১২টায় চালু হচ্ছে কেন? দশটায় চালু করতে হবে। কেন করেননি সেটা? ডাক্তার এত কম কেন? কতগুলো বেড ভর্তি? সুপার ছুটিতে, তাঁর জায়গায় দায়িত্বে কে? কোথায় তিনি?” ঝড়ের মুখে চিকিৎসকেরা তখন রীতিমতো তোতলাচ্ছেন।
মিনিট কুড়ি হাসপাতাল প্রায় দাপিয়ে বেড়িয়ে, রোগীদের সঙ্গে কথা বলে, মায়ের কোলে থাকা একটি শিশুকে টেনে নিয়ে আদর করে মমতা যখন হাসপাতাল ছাড়ছেন, রোগীদের মুখে তখন ক্লান্তির আর কোনও চিহ্ন নেই। “এ বার সব ঠিক হয়ে যাবে!” চেঁচিয়ে বলে উঠলেন এক রোগী। ‘ঠিক’ কতটা হবে, তা পরের কথা। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তারা যে নড়েচড়ে বসেছেন, তার প্রমাণ মিলল অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই। স্বাস্থ্যসচিব মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নির্দেশে সহ-স্বাস্থ্য অধিকর্তা (পরিকল্পনা) সত্যপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং সহ-স্বাস্থ্য অধিকর্তা (যক্ষ্মা) রামমনোহর পারিয়া ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। স্বাস্থ্যসচিব জানান, কেন কলকাতার এমন একটি হাসপাতাল এ ভাবে অকেজো পড়ে রয়েছে সে বিষয়ে তাঁদের এ দিনই রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। সত্যপ্রিয়বাবুকে ১৫ দিন বাঘা যতীন হাসপাতালেই থাকতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন সকাল-বিকেলের রিপোর্ট তিনি স্বাস্থ্যভবনে জমা দেবেন।
পরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই তো হাসপাতালের হাল! এক জন মাত্র ডাক্তার! এ ভাবে চলতে পারে নাকি? এ বার এগুলোর পুনরুজ্জীবনের ব্যবস্থা করতে হবে।” |
|
হাসপাতালে আসা এক অসুস্থ শিশুকে মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহ-চুম্বন।
বুধবার, বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। |
কী বলছেন এখানকার চিকিৎসকেরা? এ দিন আউটডোরে ঢুকে সার্জেন স্বপন নায়েকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে স্বপনবাবু জানান, এ দিন আউটডোরে ভিড় একটু বেশিই ছিল। বহু রোগী অপেক্ষায় ছিলেন। রোগী দেখতে দেরি হচ্ছে কেন, মুখ্যমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করায় স্বপনবাবু তাঁকে বলেন, গোটা হাসপাতালে তিনিই একমাত্র সার্জেন। তাই এত রোগী সামলানো অসুবিধাজনক হয়ে যায়। এক জন মাত্র সার্জেন রয়েছেন শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বপনবাবুর কথায়, “মমতাদেবী আমাকে বলেন, ‘আপনি ছুটিতে থাকলে তো রোগী দেখা বন্ধ হয়ে যাবে।’ আমি তখন জানাই গত তিন-চার বছর ধরেই তো এই রকমই চলছে। কোনও সুরাহা হয়নি।”
হাসপাতালের সুপার বিকাশ মণ্ডল ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে ছিলেন মেডিক্যাল অফিসার রামজিৎ মূর্মূ। তিনি বলেন, “আমি তো ভিতরে ঢুকতেই পারলাম না। দূর থেকেই ওঁকে দেখলাম। সরাসরি কথা হলে চিকিৎসক-কর্মীর অভাব এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সমস্যার ব্যাপারটা ওঁকে জানাতাম।” কী ধরনের সমস্যা? বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মাত্র দু’জন ফিজিশিয়ান। তাঁদের মধ্যে এক জন ছুটিতে। তিনি কিছু দিনের মধ্যেই অবসর নেবেন। ফলে রাতে কেউ বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হলেও দেখার লোক নেই। হাসপাতালে কোনও ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার হয় না, কারণ সার্জেন মাত্র এক জন। রামজিৎবাবু আরও বলেন, “বিকেল চারটের পরে এখানে কোনও এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা প্যাথলজিক্যাল টেস্ট হয় না। গ্রুপ ডি, নার্স সবই কম। তাতে পরিষেবা চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।”
নিজস্ব চিত্র
|
|
|
|
|
|