চা পাতা ও বাগানের গাছ চুরির মামলায় ধৃত আদিবাসী বিকাশ পরিষদের এক নেতা তথা শিক্ষক পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার গভীর রাতে ডুয়ার্সের ফালাকাটা থানায় ঘটনাটি ঘটেছে। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে বুধবার কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে একজন অফিসার সহ ২ জন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেন, “শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে ধৃত ব্যক্তি পালিয়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই ঘটনায় কর্তব্যরত পুলিশ অপিসার ও পাহারায় থাকায় কনস্টেবলের গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে। দুজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ফেরার অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।”
পুলিশ জানায়, ধৃত পরিষদ নেতা তথা শিক্ষকের নাম বৈরাগী মিন্জ। তিনি পরিষদের ফালাকাটা ব্লকের সভাপতি। গত ২৯ মে ময়রাডাঙা চা বাগানের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানানো হয়, বৈরাগীবাবু সহ কয়েকজন চা পাতা ও বাগানের ছায়াগাছ চুরি করেছেন। পরদিন মাঝরাতে বৈরাগীবাবুকে তাঁর রায়চেঙ্গা গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ওই শিক্ষককে থানায় নেওয়া হলে তিনি লকআপে না-রাখার অনুরোধ করেন। সেই কারণে তাঁকে ডিউটি অফিসারের সামনে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। রাত ১টা নাগাদ বৈরাগীবাবু শোচাগারে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে যান বলে পুলিশের অভিযোগ। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের নেতাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে বলেন, “২০ বছর আগে আদিবাসীদের জমি নানাভাবে নিয়ে চা বাগানটি তৈরি হয়। বঞ্চিত আদিবাসীদের জমি পুনরুদ্ধারের জন্য বৈরাগীবাবু আন্দোলনে নামেন। কিছু জমি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন বাগান কর্তৃপক্ষ।” রাজ্য সভাপতির অভিযোগ, “নিজেদের বেআইনি কাজ ঢাকতে নিরীহ প্রাথমিক শিক্ষককে চা পাতা ও গাছ চুরির মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সমস্ত কিছু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করব।” ওই বাগানের মালিক ওমরাওমল গোয়েল অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে জমি দখলের মিথ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, “সরকারের কাছ থেকে ৩০ বছরের জন্য জমি লিজ নেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি, তাঁর অভিযোগ, বৈরাগীবাবু সহ ৪ জন বাগানের গাছ কাটছিলেন বলেই পুলিশকে জানানো হয়। অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রী সুনু দেবী বলেন, “সোমবার রাতে দেওয়াল টপকে পুলিশ আমার স্বামীকে থানায় নিয়ে যায়। কেন গ্রেফতার করা হয়েছে তা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করা হলেও বলেনি। পরে শুনি চা পাতা চুরির মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। উনি বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ। এখন তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা জানি না। দুশ্চিন্তায় রয়েছি।” |