জোর করে শ্রমিকদের তৃণমূল ও কংগ্রেসে যোগ দেওয়ানোর চেষ্টা করলে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ করবে সিটু। বুধবার শিলিগুড়িতে এ কথা জানিয়ে দিলেন সিটুর রাজ্য সম্পাদক কালী ঘোষ। শিলিগুড়ির অনিল বিশ্বাস ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি অভিযোগ করেন, অসংগঠিত ক্ষেত্রে তৃণমূলের হামলা বেশি হচ্ছে। বিভিন্ন ট্যাক্সি চালক সংগঠন, ট্রাক চালক সংগঠনের সদস্যদের ভয় দেখিয়ে নিজেদের দিকে টানছে তৃণমূল। কারখানাগুলিতে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের দলে টানা হচ্ছে। না হলে মারধরের ঘটনা এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ওই সমস্ত ঘটনাকে আমাদের একপেশে প্রচার বলায় উদ্বিগ্ন বোধ করছি। প্রথমটায় একে সাময়িক উচ্ছ্বাস ভেবেছিলাম। কিন্তু দিনের পর দিন সংগঠিত ভাবে আক্রমণ হচ্ছে। আশা করছি শুভবুদ্ধি আসবে। না হলে মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে এর প্রতিরোধ করবে।” এ দিন অনিল বিশ্বাস ভবনে বিভিন্ন শাখা সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন কালী ঘোষ, প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী অনাদি সাহু জেলা নেতারা। সেখানে আগামী দিনের আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের চা শ্রমিকদের মজুরি দিন প্রতি ১৬৫ টাকা করার দাবি করেন সিটু নেতৃত্ব। বৈঠকের পরে রাজ্যের নয়া সরকারের প্রতি সিটুর রাজ্য সম্পাদকের পরামর্শ, “আমরা চাই নতুন সরকার শ্রমিক কল্যাণে কাজ করুন। আমরা সহযোগিতা করব।” ভয় দেখিয়ে সিটু সমর্থকদের তাঁদের শ্রমিক সংগঠনে যোগ দিতে বাধ্য করার ব্যাপারে বামেদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল। পাশাপাশি, সিটু ছেড়ে কংগ্রেস কিংবা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ঘটনা জারি ছিল বুধবারও। এ দিনও শিলিগুড়ির বাগডোগরায় প্রায় দেড়শো ছোট গাড়ির চালক সিটু ছেড়ে আইএনটিইউসিতে যোগ দেন। মাটিগাড়ার ট্রাকচালকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আইএনটিইউসিতে যোগ দেন। মাটিগাড়ার খাপরাইল মোড়ে মিরিক রোডের উপরে থানা সিটু অনুমোদিত ট্রাক চালক সংগঠনের অফিসটিও আইএনটিইউসি দখল করে নেয় বলে অভিযোগ। মাটিগাড়ার কংগ্রেস নেতা নান্টু বিশ্বাস বলেন, “সিটুর ওই সংগঠনের সমস্ত সদস্যরাই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। ওরাই ওই অফিসে নতুন বোর্ড এবং ঝাণ্ডা লাগিয়েছেন।” এর আগে সিটু ছেড়ে কংগ্রেস-তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনে যাওয়ার ঘটনা ঘটে শিলিগুড়ির পানিট্যাঙ্কি ও নকশালবাড়িতে। দলত্যাগীরাই সিটু নেতাদের বিরুদ্ধে ইউনিয়নের নামে জোর করে টাকা আদায়-সহ নানা অভিযোগ করেছেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্ট্যান্ড থেকে পানিট্যাঙ্কি রুটে সিটু নেতারা রোজ ৯৫ টাকা করে আদায় করেন বলে বাগডোগরার দলত্যাগীরা অভিযোগ করেন। সেই টাকার হিসাব পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। সিটুর পক্ষ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সিপিএমের নকশালবাড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক শীতল দত্ত দাবি করেন, “ছোট গাড়ি চালকদের নিয়ে বাগডোগরায় কখনই আমরা কোনও ইউনিয়ন তৈরি করিনি।” বাগডোগরার অঞ্চল কংগ্রেস সভাপতি অমিতাভ সরকার বলেন, “অভিযুক্ত সিটু নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তখনই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।” এসিটুর দার্জিলিং জেলা নেতা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “অসংগঠিত ওই শ্রমিকদের একটা অংশকে ভয় দেখিয়ে সংগঠন বদলাতে বাধ্য করেছে কংগ্রেস। সংগঠনের অফিসটিও দখল করে নিয়েছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। এখন আমরা কিছু বলব না। কয়েক মাসের মধ্যে ওই অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে আশা করছি।” |