অসংগঠিত ক্ষেত্রের নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য কাজ শুরু করে দিল নতুন সরকার। আগামিকাল, শুক্রবার ভোর ৬টায় উল্টোডাঙায় শ্রম দফতরের অফিসাররা রীতিমতো শিবির করে ওই কাজ শুরু করবেন।
নির্মাণ শ্রমিক, চলতি কথায় যাঁদের ‘রাজমিস্ত্রি’ বলা হয়, তাঁদের কী কী সরকারি সুযোগসুবিধা প্রাপ্য, শ্রম দফতরের অফিসাররা সরাসরি গিয়ে তাঁদের তা বোঝাবেন। প্রয়োজনে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে তাঁদের নামও নথিভুক্ত করবেন। উল্টোডাঙার পরে চলতি মাসেই শহরের আরও চার জায়গায় এমনই শিবির করা হবে। কাজের আশায় সকালবেলা শহরের যে সব জায়গায় রাজমিস্ত্রিরা এসে জড়ো হন শিবির হবে সেখানেই।
নতুন সরকারের নীতি হচ্ছে ‘শ্রমিক যদি সরকারের কাছে যেতে না পারে, তাহলে সরকারই শ্রমিকের কাছে যাবে’। সেই লক্ষ্যেই প্রথা ভেঙে এ ভাবে সরকারি অফিসারদের সরাসরি শ্রমিকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। এতদিন দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য নির্মাণ শ্রমিকদেরই সরকারের অফিসারদের কাছে যেতে হত। মন্ত্রী হওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যেই সরকার আর নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে ‘ব্যবধান’ মুছতে উদ্যোগী হয়েছেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তিনি শ্রম দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন, কাজের ধরন বদলাতে হবে। উল্টোডাঙার পরে বেহালার জোকা, বাইপাসের উপর পরমা আইল্যান্ড-সায়েন্স সিটি, ধর্মতলা এবং রাজাবাজারে শিবির করা হবে। প্রাথমিক ভাবে এই পাঁচ জায়গায় করার পরে শহরের আরও অন্যত্র শিবির করা হবে।
সারা রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা কম-বেশি ১০ লক্ষ। বামফ্রন্টের আমলে নির্মাণ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য আইন পাস হয়েছিল। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিকদের সিংহভাগই যেহেতু শ্রমিক সংগঠন করেন না, তাই তাঁদের স্বাস্থ্য বিমা, পেনশন বা দুর্ঘটনা বিমার ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট, বিশেষত সিপিএম জোরদার ভাবে উদ্যোগী হয়নি। যেমন উদ্যোগী হয়েছিল পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। ফলে নির্মাণ শ্রমিকদের বড় অংশই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন। কেবল তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও প্রচার না-থাকায় বেশির ভাগ নির্মাণ শ্রমিক জানেনই না, সরকার তাঁদের জন্য কী কী সুযোগ-সুবিধা চালু করেছে।
নির্মাণ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে সরকার ‘সেস’ নেয়। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের হাল ভাঁড়ে মা ভবানী হলেও পূর্ণেন্দুবাবু দায়িত্ব নিয়েই দেখতে পান, এই খাতে ২১৮ কোটি টাকা সরকারের ঘরে জমা আছে। অর্থাৎ বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার টাকা নিলেও তা কাজে লাগায়নি। দ্রুত সেই টাকা নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য কাজে লাগাতে শ্রম দফতরের অফিসারদের নির্দেশ দেন শ্রমমন্ত্রী। এজন্য প্রয়োজন নির্মাণ শ্রমিকদের সিংহভাগের নাম সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনা। সে কাজে যেমন শ্রম দফতরের অফিসারদের বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ণেন্দুবাবু, তেমনই সরাসরি তাঁদের কাছে গিয়েও প্রচার করা এবং নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যেহেতু নির্মাণ শ্রমিকদের কোনও স্থায়ী ঠিকানা থাকে না, তাই তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা একটি বড় সমস্যা। সে জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নির্মাণ শ্রমিকদের একটি সাধারণ কোড নম্বর দেওয়ার কথা ভাবছে শ্রম দফতর।
পূর্ণেন্দুবাবুর ধারণা, এক দিকে সরকারি উদ্যোগ, অন্য দিকে নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে নিয়মিত প্রচার করতে পারলে এই প্রকল্পে সাফল্য আসতে বাধ্য। কলকাতার পাশপাশি জেলা শহরগুলিতেও শিবির করা হবে। তার জন্য জেলার শ্রম দফতরগুলিকেও ‘সক্রিয়’ হতে বলেছেন পূর্ণেন্দুবাবু। |