অস্ত্র উদ্ধার, বাড়ল ১৪৪ ধারার মেয়াদ
ত অস্ত্র ছিল এখানে?
গত এক-দেড় সপ্তাহে কোতুলপুর এবং লাগোয়া জয়পুর থানা এলাকা থেকে যে পরিমাণ বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তাতে এলাকার মানুষের মনে এখন এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাগাতার তল্লাশি-অভিযানে এত অস্ত্র মিলেছে যে, তা থেকে স্পষ্ট, কেন এই সব এলাকা এত দিন ধরে ‘সন্ত্রাস-দীর্ণ’ তকমা পেয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর বা হুগলির মতোই বাঁকুড়ার এই সব অঞ্চলেও সিপিএমের পার্টি অফিস থেকে বেশ কয়েকবার অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস ও তৃণমূল বলছে, এই সব হাতিয়ারের সাহায্যেই সিপিএম এখানে এত দিন ‘সন্ত্রাস’ চালিয়ে এসেছে। সিপিএমের পাল্টা দাবি, তৃণমূলই ওই সব অস্ত্র রেখে পুলিশকে ডেকে এনে ‘নাটক’ করছে।
বস্তুত, কোতুলপুর আর ‘সন্ত্রাস’ শব্দটা এক সময় ছিল সমার্থক। ২০০৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোতুলপুর ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪৫টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি এবং জেলা পরিষদের ২টি আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি কংগ্রেস, বিজেপি বা তৃণমূল। ওই বছর ব্লকে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সব ক’টি আসনে বিনা প্রতিন্দ্বিতায় জিতেছিল সিপিএম। বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, বোমা-গুলি-বন্দুক নিয়ে সিপিএম লাগাতার ‘সন্ত্রাস’ চালানোয় তাঁরা প্রার্থী দেওয়ার ‘সাহস’ পাননি। এ বার বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর থেকেই লাগাতার পুলিশি অভিযানে মিলছে পর পর বেআইনি অস্ত্র। সিপিএমের কার্যালয়ের পাশাপাশি পুকুর, মাঠ থেকেও আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, গুলি উদ্ধার হচ্ছে।
গত ১৭ মে জয়পুর থানার উত্তরবাড় অঞ্চলের শালতোড়া গ্রামে সিপিএমের পার্টি অফিসের তালা ভেঙে জওয়ানরা ২টি একনলা বন্দুক ও ৩টি দোনলা বন্দুক উদ্ধার করে। একই দিনে কোতুলপুরের চাতরা কলেজ লাগোয়া একটি পরিত্যক্ত মন্দিরের পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার হয় ৩ বস্তা বোমা, ৩টি রাইফেল ও ১১টি কার্তুজ। আবার ১৯ মে জয়পুরের শালতোড়া গ্রামে সিপিএমের জয়পুর জোনাল কমিটির এক সদস্যের বাড়ির দাওয়ায় মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় ২টি রাইফেল, ১টি ওয়ান শটার, কিছু কার্তুজ। ওই দিন কোতুলপুরে সিপিএমের জলজলা শাখা কমিটির সম্পাদক আয়ুব নবি-সহ ওই শাখার সদস্য সুকুর আলিকে ২টি পিস্তল, কার্তুজ-সহ ধরে পুলিশ। ওই থানার কোনাপুর থেকে ৪টি বন্দুক, ১০টি বোমা, কিছু কার্তুজ উদ্ধার হয়।
ফাইল চিত্র।
বিষ্ণুপুরের এসডিপিও দিব্যজ্যোতি দাস জানিয়েছেন, ভোটের আগে ও পরে কোতুলপুর বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে উদ্ধার হয়েছে ৮০টিরও বেশি নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, প্রচুর বোমা ও কার্তুজ। এই পরিস্থিতির কারণে বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ইতিমধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেছে বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন। কোতুলপুর ও জয়পুরের পুরো ব্লকে এবং বিষ্ণুপুরের ৬টি অঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। তবে বুধবারই ছিল তার মেয়াদের শেষ দিন। মহকুমাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ১৪৪ ধারার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। চলছে আধা সামরিক বাহিনীর টহলও।”
অস্ত্র উদ্ধারে পিছিয়ে নেই জয়পুর ও রানিবাঁধ। আবার অস্ত্র উদ্ধারের নামে সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপরে হামলাও হয়েছে এই সব অঞ্চলে। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, “দীর্ঘদিন ধরে এই সব এলাকা অগ্নিগর্ভ। বহু খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবু প্রাশাসনিক নজরদারির অভাবে বছরের পর বছর বেআইনি অস্ত্র নজুত করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। যা দিয়ে শাসানি, চোখরাঙানি চলত। ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যবহার হত এই সব অস্ত্র। এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিত কড়া নিরাপত্তায় ভোট হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গিয়েছে।”
অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। তৃণমূলের কোতুলপুর ব্লক সভাপতি নিমাই ঘোষ বলেন, “নির্বাচন ও নিরাপত্তায় থাকা আধা সামরিক বাহিনীদের ধন্যবাদ। তাঁদের নিরপেক্ষতা ও কঠোরতার কাছে হার মেনেছে সিপিএমের সন্ত্রাস। যার জেরে মানুষ ভয় উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন।” অন্য দিকে, কোতুলপুরের সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়ক সৌমিত্র খাঁ ও তৃণমূলের জয়পুর ব্লক সভাপতি স্বপন কোলে পুলিশকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। যদিও বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “খবর পেলেই তল্লাশি হচ্ছে। বহু অস্ত্র উদ্ধারও হয়েছে।”
আর সিপিএমের কোতুলপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক গৌরহরি পাল এবং দলের জয়পুর জোনাল কমিটির সম্পাদক মদনমোহন পাত্রের পাল্টা অভিযোগ, “তৃণমূলই আমাদের কর্মীদের বাড়িতে ও পার্টি অফিসে অস্ত্র রেখে দিয়ে ফাঁসাচ্ছে। এমনকী অস্ত্র দেখিয়ে শাসানো বা ভয় দেখানোর যে অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে, তাও কংগ্রেস-তৃণমূলের বানানো গল্প।”
Previous Story Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.