বিধায়কের সঙ্গে বিবাদ তৃণমূলের, সফর বাতিল
‘সন্ত্রাস’ দেখতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে বামদল
‘তৃণমূলের সন্ত্রাস কবলিত’ তালড্যাংরায় গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়ল বাঁকুড়া জেলা বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদল। তালড্যাংরার সিপিএম বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্রের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের তর্কাতর্কি বেধে যায়। পরিস্থিতি ‘বেগতিক’ বুঝে পুলিশ দশ সদস্যের বাম প্রতিনিধিদলকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
যে জেলা ছিল কিছু দিন আগেও সিপিএম তথা বামফ্রন্টের ‘দুর্ভেদ্য ঘাঁটি’, সেখানে বুধবার দুপুরের এই ঘটনার পরে পরিস্থিতি বুঝে বাম নেতারা ‘সন্ত্রাস কবলিত’ অন্য এলাকা পরিদর্শন বাতিল করেন। এর আগে এ দিন সকালে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের নেতৃত্বে বাম নেতারা পুলিশ সুপারের কাছে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’-এর বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দেন। দিনের শেষে অমিয়বাবু বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই তৃণমূল বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কর্মীদের মারধর, ঘরছাড়া করার পাশাপাশি পার্টি অফিস ভাঙচুর করছে। কিন্তু, এ দিন তালড্যাংরায় আমাদের সামনে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে যা ঘটল, তা ভয়ঙ্কর। আমরা চলে আসার পর এলাকায় আমাদের দুই কর্মীর উপরে হামলাও হয়েছে। তাই আমরা আপাতত অন্য এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছি।”
ক্ষোভের মুখে সিপিএম বিধায়ক।
এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছাড়াও যৌথবাহিনীর জনা দশেক জওয়ানকে নিয়ে বাম প্রতিনিধিরা প্রথমে যান পাঁচমুড়া লোকাল কমিটি কার্যালয়ে। ওই অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রতিনিধিদলে অমিয়বাবু ছাড়াও ছিলেন বিষ্ণুপুরের সিপিএম সাংসদ সুস্মিতা বাউরি, দুই প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম, উপেন কিস্কু, কৃষক সভার জেলা সম্পাদক নকুল মাহাতো, ফরোয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনাথ মল্ল, সিপিআইয়ের জেলা নেতা আনন্দ ঘোষ হাজরা, আরএসপি’র গঙ্গা গোস্বামী প্রমুখ। পরে বাম নেতারা দৌনি গ্রামে যান। সিপিএম সমর্থক মিথিলা রায়, শীলা রায়রা নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের হুমকিতে গ্রামের সিপিএম কর্মী-সমর্থক পুরুষরা অনেকেই গাঁ ছাড়া হয়েছেন। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।” বাম নেতারা তাঁদের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।
এর পরে প্রতিনিধিদল পাশের পারিডিহি গ্রামে ঢুকতেই ঝামেলার সূত্রপাত। সেখানে সিপিএম কর্মী তারাপদ দে নেতাদের কাছে পেয়ে বলেন, “তৃণমূলের লোকেরা মারধর করেছে হুমকি দিচ্ছে।” গ্রামের রাস্তায় জটলা ক্রমে বড় হচ্ছিল। হঠাৎ সেখানে হাজির হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা গণেশ গরাই। তিনি বলেন, “এখানে কোনও অশান্তি হচ্ছে না।” প্রতিবাদ করেন বাম নেতারা। এর পরেই বিধায়ক মনোরঞ্জনবাবু হয়ে যান ‘আক্রমণের লক্ষ’। গণেশের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত ভোটের সময় আপনিই এসে বলে গিয়েছিলেন আমাদের টুঁটি টিপে দেবেন। আর এখন আপনারাই এসে অশান্তি ছড়াতে চাইছেন।” মনোরঞ্জনবাবু তাঁকে বলেন, “গলা নামিয়ে কথা বল। আমি এসব কথা কখনওই বলিনি।”
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিচ্ছেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব।
অমিয়বাবু গণেশের পিঠে হাত দিয়ে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। বলেন, “তোমাকে আমরা কিছু জিজ্ঞাসা করতে আসিনি। এখন তর্ক করার সময় নয়।” তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টে গণেশের সঙ্গীরাও বাম নেতাদের সঙ্গে তুমুল তর্ক জুড়ে দেন। মনোরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীদেরই এক জন পাশের গাছের ডাল ভেঙে তাঁকে মারতে উদ্যত হন। এই অবস্থায় পুলিশ কর্মীরা তৎপর হয়ে বাম নেতাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। সেখানে ছিলেন এরপর বাম প্রতিনিধিদের গাড়ি কয়েকটি গ্রাম পেরিয়ে ময়রা গ্রামে যায়। সেখানে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা ফিরে যান। অমিয়বাবু পরে বলেন, “আরও কয়েকটি এলাকায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। এই ঘটনার পর তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি।”
তালড্যাংরা ব্লকের সাতমৌলি পঞ্চায়েতের অর্ন্তগত এই পারিডিহি গ্রাম পুনর্বিন্যাসের জেরে বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। আগে এটি তালড্যাংরা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিষ্ণুপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা বর্তমান আবাসন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
অমিয়বাবুর অভিযোগ, “জয়পুর, কোতুলপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র, বিষ্ণুপুর, তালড্যাংরা, সিমলাপাল এবং ওন্দা মিলিয়ে তৃণমূলের অত্যাচারে আমাদের অন্তত এক হাজার কর্মী ঘরছাড়া। প্রায় ১০০ জন নেতা-কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। জরিমানা করা হচ্ছে। চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। পার্টি অফিসগুলিও জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় ৯০টি পঞ্চায়েতের কাজকর্ম ওরা স্তব্ধ করেছে।” এ দিন পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপিতে তাঁদের দাবি, ঘরছাড়াদের ফেরানো ও পার্টি অফিসগুলি খোলার জন্য পুলিশি সহায়তা দিতে হবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে, পুলিশি সক্রিয়তা বাড়ানোর আর্জিও করেছেন বাম নেতারা।
পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “ওঁরা ঘরছাড়াদের নামের তালিকা আমাদের দিন। তাঁরা গ্রামে ফেরার পর আমরা নিরাপত্তা দেব। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সক্রিয়ভাবেই কাজ করছে।”

ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

First Page Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.