ভোটপর্ব বিনা রক্তপাতে মিটলেও ফল প্রকাশের দু’ দিন পর থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে শুরু করেছে। ভোটের ফল ঘোষণার দু’ দিন পর ১৫ মে থেকে ২৬ মে, গত বারো দিনে মুর্শিদাবাদ জেলায় এক মহিলা-সহ মোট ৫ জন খুন হয়েছে। জখম হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।
মৃতদের মধ্যে ৩ জন সিপিএম সমর্থক। বাকি ২ জন কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী বলে ওই দুই রাজনৈতিক দলের দাবি। ঘরছাড়া হয়েছেন অন্তত ২০০ জন। প্রায় ২০০ বিঘা জমি জবরদখল করে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। ওই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে গত ২৫ মে সিপিএম মুর্শিদাবাদ জেলায় বনধের ডাক দেয়। একই দাবিতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপিও দেয় তারা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “খুন, জখম ও লুঠপাটের ঘটনায় বেশ কয়েক জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।”
ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছিল ১৩ মে শুক্রবার। তার দু’দিন পর রবিবার ১৫ মে সন্ধ্যায় মোটরবাইকে নিজের মেয়েকে নিয়ে বহরমপুর শহরের গোরাবাজারের জমিদারি এলাকায় বাড়ি ফিরছিলেন তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ (৪৭)। শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মোহনের মোড়ে দুষ্কৃতীরা বোমা ও গুলি ছুড়ে কামালকে খুন করে।
১৭ মে সন্ধ্যায় লালবাগ থেকে চিকিৎসা করিয়ে তাঁর ভাই-এর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন রানিনগর থানার এলাকার বছর কুড়ির তরুণী দিবারানি মণ্ডল। রানিনগর থানার চর বাথানপড়া এলাকায় সাইকেল থেকে তাঁকে নামিয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। দিবারানি সিপিএম সমর্থক ছিলেন বলে দাবি। গত ২৩ মে রাতে নিজের বাড়িতেই খুন হন বেলডাঙা থানার কাপাসডাঙা গ্রামের দুই সি পি এম সর্মথক বাবা মহবুল শেখ (৫৫) ও তাঁর ছেলে মাসারুল শেখ ওরফে নটবর (১৮)। তার তিন দিন পর ২৬ মে, রাতে কান্দি থানার হিজল এলাকার রানিপুর গ্রামে দুষ্কৃীদের ছোড়া বোমার আঘাতে খুন হন প্রৌঢ় কংগ্রেস কর্মী জাফর শেখ (৫৪)। তাঁর ছেলে মানিক শেখ গুরুতর জখম হন। প্রতিটি ঘটনার দায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির চাপান উতোর চলছেই।
২০০৬ সালে এ জেলার ১৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ১৪টি ও কংগ্রেস ৫টি দখল করেছিল। ২০১১ সালে এ জেলার ২২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ৭টি, কংগ্রেস ১৪টি এবং তৃণমূল কংগ্রেস ১টি আসন দখল করে। ওই নয়া বিন্যাসের কারণে জেলা জুড়ে তাঁদের সমর্থকরা আক্রন্ত হেচ্ছে বলে সিপিএমের জেলা সম্পাদকর নৃপেন চৌধুরীর দাবি। তিনি বলেন, “আসনের হিসাব যা-ই হোক, এ জেলায় কংগ্রেসের এ বার প্রাপ্তভোট প্রায় ১৫ লক্ষ। বামফ্রন্ট পেয়েছে তার থেকে কিছু কম। বামফ্রন্ট পেয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ ভোট। তবুও খুন হয়েছে, ধষির্ত হয়েছে, বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে সিপিএমের কর্মী-সর্মথকদেরই। ইসলামপুর থানার হুড়শি ও লোচনপুর এলাকার সিপিএমের সমর্থকদের পাট্টা পাওয়া ২০০ বিঘা জমি জবরদখল করেছে দুষ্কৃতীরা। রঘুনাথগঞ্জের গিরিয়া ও সেকেন্দ্রায় সি পি এমের সমর্থক শ’ দুয়েক পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। তাঁদের এক মাত্র অর্থকরী ফসল লিচু পেঁপে গাছেই নষ্ট হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা কংগ্রেস আশ্রিত।”
তাঁর অভিযোগ, “ভোটের ফল প্রকাশের পর পুলিশ প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করতে দ্বিধাগ্রস্থ। সম্ভবত উপরতলার বিশেষ নির্দেশের কারণে জেলা পুলিশের ওই দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থা।” অন্য দিকে জোট সরকারের ‘নিরপেক্ষতার’ নীতি মেনে রাজনৈতিক রঙ না দেখে প্রকৃত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “কি সিপিএম কি কংগ্রেসকোনও দলেরই শতকরা ১০০ ভাগ সর্মথক গঙ্গাজলে ধোয়া তুলসিপাতা নয়। পুলিশের উচিত প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দাবি, “নিরপেক্ষতার সঙ্গেই পুলিশি অভিযান চলছে।” |