মেয়ের ‘খোঁজ’ মেলেনি, ওঝাকে কুপিয়ে খুন
‘ঘর পালানো’ মেয়েদের ঠিক ফিরিয়ে দেবেন তিনি। প্রতিশ্রুতি ছিল এমনই। কিন্তু সব ‘হিসেব’ কি মেলে? ওঝা দম্পতির সেই নিদানও মেলেনি।
আর, সেই রোষেই খুন হলেন আবু সাদের শেখ (৪০) নামে এলাকার ডাকসাইটে এক ওঝা। তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ বুধবার সকালে মিলল নাকাশিপাড়ার কাছেই ঘুনি এলাকায়। পাশেই পড়ে ছিলেন তাঁর স্ত্রী মেছু বিবি। এলাকায় তাঁরও পরিচয় গুণিন হিসেবেই। তাঁরও সারা শরীরে অজস্র ধারালো অস্ত্রের কোপ। কব্জি থেকে ছিন্ন বাঁ হাতটিও। তবে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি মেছু বিবি এখনও বেঁচে রয়েছেন। সেখানেই চিকিৎসকদের তিনি জানান, গ্রামেরই কিছু লোক তাঁকে কুপিয়েছে। কেন? সে জবাব আর পাওয়া যায়নি ওই মহিলার কাছে। এ ব্যাপারে দু জনকে আটক করে জেরা শুরু করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “ওই দম্পতি গুণিন ছিলেন। ঝাড়ফুঁক করে গ্রামের লোকের বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন বলে শুনেছি। সে কাজেই এসেছিলেন। কিন্তু কোনও পুরনো রোষের জেরেই খুন হয়েছেন। অভিযুক্তরা পালিয়েছে। তবে তল্লাশি চলছে।”
হাসপাতালে মেছু বিবি। নিজস্ব চিত্র।
তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে পুলিশ, ঘুনি গ্রামে প্রায়ই ‘চিকিৎসা’ করতে যেতেন ওই দম্পতি। সেখানেই গফুর শেখের পরিবারে তাঁদের যাতায়াত ছিল প্রায় নিয়মিত। গফুরের হারানো মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়ে আগ্রিমও নিয়েছিলেন আবু। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও সেই মেয়ে আর ফেরেনি। মঙ্গলবার রাতে ওই গ্রামে ফের ‘কল’ পেয়ে একটি পরিবারে বান মারতে গিয়েছিলেন ওই দম্পতি। কিন্তু গাড়ি থেকে নামতেই গফুর তার ভাই শাহজাহান এবং তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা এলোপাথারি কোপাতে থাকে ওই ওঝা দম্পতিকে। টেনে হিঁচড়ে গ্রামের বাইরে নিয়ে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে আসে। ওই দম্পতির চিৎকারে গ্রামবাসীরা ছুটে এলেও অস্ত্র ঘোরাতে ঘোরাতে গফুর তাদের এগোতে বারণ করে। আতঙ্কে পিছু হটে যান গ্রামবাসীরা। পর দিন গ্রামের পাট খেতে তাঁদের দেহ মেলে। সকালে খবর পেয়েই আসে পুলিশ। ততক্ষণে মারা গিয়েছেন আবু। রক্তাক্ত মেছু তখনও ধুঁকছেন। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে নিয়ে ছোটে বেথুয়াডহরি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় শক্তিনগর হাসপাতালে।
গ্রামবাসীরা জানান, মাস কয়েক আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় গফুরের মধ্য কুড়ির তরুণী মেয়ে। এ ব্যাপারে হাতযশ রয়েছে আবু সাদেরের। এর আগেও এমনই বেশ কয়েক জনের ‘ঘর পালানো’ মেয়ের খোঁজ এনে দিতে পেরেছিলেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তাই আবুর ভরসাতেই বুক বেঁধেছিলেম গফুর। কিন্তু মাস তিনেক পেরিয়ে গেলেও সে ণেয়েকে আর ফিরিয়ে দিতে পারেননি আবু সাদের।
মঙ্গলবার রাতে ওই গ্রামেই গোবর দাসের বাড়িতে হারানো মেয়ের খোঁজ দিতেই এসেছিলেন আবু। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, সব সময়ের সঙ্গী মেছু বিবিও। পসার বেশ ভালই ওই ওঝা দম্পতির। তাই এলাকায় ‘কল’ পেলে তাঁরা কাঁঠালবেড়িয়া গ্রাম থেকে গাড়িতেই যাতায়াত করতেন। এ দিন গোবরের বাড়িতেও তাঁরা মারুতি ভ্যান-এ চেপেই ‘ভিজিট’ করেছিলেন। কিন্তু গাড়ি থেকে ওই বাড়ির উঠোন পর্যন্তও পৌঁছতে পারেননি আবু। তার আগেই রীতিমতো ছিনতাই করে তাঁদের কোপাতে থাকে গফুর। চিৎকার করে বলতে থাকে, “আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছিস। কোথায় রেখেছিস তাকে বল?” ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আবু কিছু বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে আর হয়ে ওঠেনি। উঠোনের মধ্যেই কোপাতে তাকে ওই দম্পতিকে। তারপরে গ্রামের বাইরে তাঁদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় তারা।
গ্রামের রশিদ শেখ বলেন, “চিৎকার শুনে সকলেই ছুটে এসেছিল। কিন্তু ওদের সকলের হাতেই ছিল ধারাল অস্ত্র। কাছে গেলেই কুপিয়ে দেবে বলে শাসাতে থাকে। তাই আর ও দিকে যাইনি।” চোখের সামনেই গফুরের লোকজন ওঁদের টানতে টানতে নিয়ে যায় মাঠের দিকে।
First Page Murshidabad Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.