এত দিন নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। উন্নয়নের কাজ কার্যত শিকেয় উঠেছিল। এ বার নির্বাচনের ক্লান্তি কাটিয়ে নিয়মিত কাজে ফিরতে শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ২০ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীরাও শপথ নিয়ে নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী থেকে অন্যান্য মন্ত্রী--যে কোনও সময় প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখতে আসতে পারেন। ফোনেও তথ্য জানতে পারেন। তখন যদি ঠিকমতো জবাব না-দেওয়া যায়, তা হলে বিড়ম্বনার একশেষ হতে হবে। তাই জেলা প্রশাসন সতর্ক। গত কয়েক দিনে তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো।
নির্বাচনের আগে নানা ধরনের উন্নয়নের কাজ চলছিল জেলায়। সাধারণ কাজের পাশাপাশি ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ (আইএপি) রূপায়ণের কাজও। মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার উন্নয়নে এই অর্থ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যে অর্থে রাস্তা তৈরি, পুকুর কাটা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল তৈরি-সহ নানা উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুত এই প্রকল্পের অর্থ খরচ করতে পারলে পরের ধাপের টাকাও মিলবে তাড়াতাড়ি। ‘পিছিয়ে পড়া’ জেলার উন্নয়নে রাজ্যের নতুন সরকার বেশি গুরুত্বও দিতে চাইছে। তাই ইতিমধ্যেই আইএপি নিয়ে এক দফা বৈঠক হয়ে গিয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে। কোথায় কোন প্রকল্পে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, কাজ কতটা এগিয়েছিল, এ বার কী ভাবে দ্রুত তা ফের চালু করা যাবে--এ সব নিয়েই মূলত আলোচনা হয়। প্রকল্পের কাজ নিয়ে রিপোর্টও ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
অন্য দিকে, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের হাল হকিকত কী, একশো দিনের কাজের অবস্থা কেমন, কোথায় কোন কাজ অসমাপ্ত থেকে গিয়েছে, প্রয়োজনীয় টাকা রয়েছে কি না--এ সব নিয়েও বৈঠক হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ভাবনা, নতুন মুখ্যমন্ত্রী হয়তো প্রথমেই বিস্তারিত জানতে চাইবেন না। কিন্তু এক নজরে জেলার পরিস্থিতি যে কোনও সময়েই জানতে চাইতে পারেন। সে জন্যই বৈঠক করে সমস্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর এমনিতেই ‘স্পর্শকাতর’। এই জেলাতে আদিবাসী মানুষের বসবাস বেশি। আবার এখানেই মাওবাদী সমস্যাও রয়েছে। জেলার ২৯টি ব্লকের ১৮টিই ‘পিছিয়ে পড়া’। ওই ব্লকগুলি আবার পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অন্তর্গত। নতুন মুখ্যমন্ত্রীর পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে নজর বেশি থাকবে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের অনুমান। কারণ, এই জেলা ছিল সিপিএমের দুর্গ। এই জেলাতেই রয়েছে কেশপুর-গড়বেতা। ‘পিছিয়ে পড়া’ বলে মাওবাদী তৎপরতারও আঁতুড়ঘর। এক সময়ের সিপিএম দুর্গে এ বার বিধানসভা ভোটে ভাল রকম ফাটল ধরাতে পেরেছে তৃণমূল। জেলার ১৯টি আসনের মধ্যে ১০টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। বাকি কয়েকটি আসনে খুব কম ভোটে পরাজিত হয়েছে।
সব দিক থেকেই জেলা প্রশাসনের অনুমান, এই জেলার উপর নতুন সরকারের ‘বিশেষ’ নজর থাকবে। এক দিকে উন্নয়ন ও অন্য দিকে শান্তি বজায় রাখাই হতে চলেছে নতুন সরকারের লক্ষ্য। জেলা প্রশাসনও আগে থেকেই নিজেদের তৈরি রাখতে চাইছে। হাতের কাছে কাজের পরিসংখ্যান ও উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি রাখতে চাইছে। নতুন সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেলেই যাতে দ্রুত উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়।
|