|
|
|
|
আশ্বাস মতোই এলাকা পরিদর্শনে পশ্চিমাঞ্চল মন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা² ঝাড়গ্রাম |
মন্ত্রী হয়েই জানিয়েছিলেন এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে মানুষের সমস্যা বুঝে নিতে চান। বুধবার প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়েই এলাকা পরিদর্শন করলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা। এলাকাবাসীর দাবি মতো একটি রাস্তায় খালের উপর এক মাসের মধ্যে কালভার্ট তৈরির নির্দেশও দিলেন স্থানীয় প্রশাসনকে। ঘণ্টা দু’য়েকের সরেজমিন অনুসন্ধানে চষে বেড়ালেন প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকা। প্রায় এক দশক আগে ভেঙে পড়া একটি সেতুও দেখলেন সুকুমারবাবু। দেখলেন ভাঙাচোরা পথঘাট। বুঝলেন বাস্তব অনুন্নয়নের ছবিটা। তার আগে এ দিন সকালে আচমকা ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিসে পৌঁছে নিজে প্রতিটি দফতরের ঘরে-ঘরে গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে পরিচয়-পর্বও সারেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া অঞ্চলের কয়েকটি রাস্তায় অবিলম্বে কালভার্ট ও সেতু তৈরি করা জরুরি বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়েছিলেন মন্ত্রী। বর্ষার আগে বাঁধগোড়া অঞ্চলের শ্যামসুন্দপুরের বটডাঙাচকের রাস্তায় খালের উপর গার্ডওয়াল-সহ কালভার্ট তৈরি করা না হলে আসন্ন বর্ষায় রাস্তাটি ধুয়ে গিয়ে ঝাড়গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন |
|
বাঁধগোড়ার কাটচ্যাড়ায় ভাঙা সেতুর হাল দেখছেন সুকুমার হাঁসদা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। এ দিন সকাল সোয়া ১১টা নাগাদ প্রথমে ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিসে পৌঁছন সুকুমারবাবু। পুলিশের পাইলট গাড়ি ফিরিয়ে দেন তিনি। ব্লক অফিস প্রাঙ্গণে লালবাতি লাগানো সাদা গাড়ি থেকে ফেডেড ডেনিম জিনস্ প্যান্ট ও সাদা-আকাশি স্ট্রাইপ শার্ট পরা সুকুমারবাবুকে নামতে দেখে প্রথমে কেউ বুঝতেই পারেননি খোদ মন্ত্রী এসেছেন। বিডিও ছুটিতে থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়েন্ট বিডিও সপ্তর্ষি ঘোষ অভ্যর্থনা করে মন্ত্রীকে নিয়ে যান বিডিও-র চেম্বারে। সুকুমারবাবু প্রথমেই জানতে চান, ২০১০-১১ অর্থবর্ষে বিভিন্ন খাতে ঝাড়গ্রাম ব্লক কত টাকা পেয়েছে, সেই টাকার কতটা খরচ হয়েছে এবং কত টাকা পড়ে রয়েছে। জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ থেকে প্রাপ্ত ৬৫ লক্ষ ৪০ হাজার ২৯৭ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ৩১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৯৭ টাকা। পরিসংখ্যান নেওয়ার পর বিডিও-র ঘরেই জয়েন্ট বিডিও-সহ ব্লকের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করে সুকুমারবাবু জানিয়ে দেন, জোড়াতালি দিয়ে কাজ নয়, সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। বাঁধগোড়া অঞ্চলের শ্যামসুন্দরপুরের বটডাঙাচকের কাছে রাস্তায় বেহাল কালভার্টটি কেন নতুন করে তৈরি করা হয়নি সে ব্যাপারে জানতে চান মন্ত্রী। জয়েন্ট বিডিও নথিপত্র দেখে জানান, গত বছর ডিসেম্বরে নতুন করে গার্ডওয়াল সহ কালভার্টটি তৈরি করার জন্য প্ল্যান এস্টিমেট করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। সুকুমারবাবু বলেন, “আমি এলাকায় যাচ্ছি। আপনারাও আমার সঙ্গে চলুন। সরেজমিনে মানুষের সমস্যা বুঝে কাজ শুরু করতে হবে।”
বেরোনোর আগে ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বরিষ্ঠ করণিক বংশীমোহন প্রতিহারকে সঙ্গে নিয়ে ব্লক অফিসের বিভিন্ন দফতরের ঘরগুলি ঘুরে দেখেন সুকুমারবাবু। কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করেন। সমস্যার কথাও শোনেন। ১২টা নাগাদ বাঁধগোড়ার উদ্দেশে রওনা দেন মন্ত্রী। অন্য একটি গাড়িতে মন্ত্রীকে অনুসরণ করেন জয়েন্ট বিডিও সপ্তর্ষি ঘোষ, ব্লক পরিকল্পনা বিভাগের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অনুকূল ঘোষ, সহকারী পরিকল্পনা আধিকারিক অ্যান্টনি ঠঙ্গরাজ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কারিগরি সহায়ক চন্দ্রকান্ত হাটুই, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বরিষ্ঠ করণিক বংশীমোহনবাবু।
বটডাঙাচকের বাসিন্দা দিলীপ সাউ, নরেন বারিকরা মন্ত্রীকে জানান, ফি বর্ষায় খালের কাছে মাটি ধসে গিয়ে রাস্তাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এলাকাবাসীই কোনও মতে বাঁশের খুঁটি পুঁতে মাটির ধস ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। সেখান থেকেই জেলাশাসককে মোবাইল ফোনে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেন সুকুমারবাবু। এর পর স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকদের মন্ত্রী বলেন, ১৫ দিন পরে আপনাদের ফোন করে কাজের অগ্রগতি জানব। এক মাস পরে নিজে দেখতে আসব কেমন কাজ হয়েছে। বর্ষার আগে আমি এখানে কালভার্ট দেখতে চাই।
এ দিন বাঁধগোড়ার কাটচ্যাড়া ও দামোদরপুরের মধ্যে ভেঙে পড়া সেতুটি দেখে হতবাক হয়ে যান মন্ত্রী। বছর দশেক আগে হড়কাবানে খালের উপর ওই বড় সেতুটি ভেঙে যায়। কাটচ্যাড়ার রামসাই বেশরা, ধনঞ্জয় হাঁসদারা মন্ত্রীকে জানান, নিম্নমানের জিনিস দিয়ে সেতুটি করা হয়েছিল। সেতুটির অভাবে ঘুরপথে ঝাড়গ্রাম যেতে হয়। মন্ত্রী আশ্বাস দেন, “আমাকে সময় দিন, এখানে নতুন সেতু হবে। রাস্তাঘাট ও পানীয় জলেরও সুরাহা করব।” |
|
|
|
|
|