ভারতীয় ফুটবলে দু’কোটির ঐতিহাসিক চুক্তি
দশ নম্বর জার্সি ব্যারেটোকে ছেড়ে দিলেন ওডাফা
নস্রোতে ভাসতে ভাসতে মোহনবাগান তাঁবুতে ঢুকে ওডাফা ওনিয়েকা ওকোলি বলে দিলেন, “অনেক অনেক ট্রফি দিতেই আমি এখানে এসেছি।”
চাতক পাখির মতো দুপুর থেকে অপেক্ষা করে থাকা ট্রফিহীন হাজার খানেক সবুজ-মেরুন জনতার হৃদয়ে যেন ‘পরিবর্তনের ঝড়’ উঠল। হাততালিতে উদ্বেল হয়ে উঠল গোটা চত্বর। ভারতীয় ফুটবলের ‘গোল মেশিন’-এর লাল-চুল ওয়ালা মুখটা যেন হাজার ওয়াটের উজ্জ্বল আলোয় আরও উদ্ভাসিত হল। ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা উপরের দিকে তুললেন ভারতে সর্বকালের অন্যতম সেরা বিদেশি স্ট্রাইকার।
সবুজ-মেরুন জার্সিতে ওডাফা। বুধবার মোহনবাগান তাঁবুতে। -উৎপল সরকার।

“ঈশ্বর কখনও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। চার্চিলে তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন। মোহনবাগানেও তিনি থাকবেন আশাকরি। আর সেটা থাকলেই গোল করে ট্রফি এনে দিতে পারব। এই নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েই এখানে খেলতে এসেছি। চার্চিলে আমি ভালই ছিলাম। কিন্তু কখনও কখনও নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। টাকা সবসময় কিন্তু ফ্যাক্টর হয় না।” যে কলকাতার অলিগলিতে একসময় ‘খেপ’ খেলেছেন। পিয়ারলেস, মহমেডান থেকে বাতিল হয়ে শহর ছেড়েছেন দশ বছর আগে। সেই শহরের একটি ক্লাবে ঢোকার মুখেই বিশাল ফেস্টুনে তাঁর আবাহনের বিশেষণ লেখা হয়েছে, ‘মোহনবাগানে এ বার ব্ল্যাক কোবরা।’ এ সব দেখেই সম্ভবত কিছুটা আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন পেশাদার নাইজিরিয়ান। ছয় বছর পর চার্চিল ব্রাদার্সের জার্সি খুলে রাখছেন। পরছেন নতুন জার্সি। বারবার হাত বোলাচ্ছিলেন সদ্য পরা সবুজ-মেরুন জার্সিতে আর গলায় ঝোলানো উত্তরীয়তে।
মোহনবাগানে খেলা প্রথম বিদেশি ফুটবলার এবং এজেন্ট চিমা ওকোরির হাত ধরে সবুজ-মেরুনে আসার পথে ওডাফা তছনছ করে দিলেন ভারতীয় ফুটবলের যাবতীয় আর্থিক রেকর্ড। ক্লাব সূত্রের খবর, ওডাফার পিছনে মোহনবাগান কর্তারা খরচ করছেন প্রায় দু’কোটি টাকা। দেড় কোটি টাকা আর্থিক চুক্তির সঙ্গে হাইল্যান্ড পার্ক বা সাউথ সিটিতে বিশাল ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থা। পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে বিলাসবহুল গাড়ি। সঙ্গে তেলের খরচও। এ ছাড়াও পরিবার নিয়ে দু’বার লাগোসে বাড়ি যাওয়ার বিমান খরচ। যা স্বয়ং চিমা কেন, হোসে ব্যারেটো, বেটো বা ইয়াকুবুর মতো এদেশে খেলা কোনও সফল বিদেশি পাননি।
বুধবার এলেন ওডাফা। বৃহস্পতিবার বাগানে আসছেন রহিম নবি। বুধবার রাতে তাঁকে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা বাড়ি গিয়ে অনেক বোঝালেও রহিম নবির স্পষ্ট কথা, “সাত বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলেছি। প্রথম দিকে ওঁরা যখন গুরুত্ব দিচ্ছিল না, মোহনবাগান অনেক গুরুত্ব দিয়েছে।” বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই অঞ্জন মিত্র বলছিলেন, “পাঁচ বছর ধরে ওর পিছনে লেগে আছি আমরা। এত দিনে সফল হলাম।” এক মরসুমের জন্য ওডাফাকে সই করিয়ে মোহন-সচিবের গলায় অদ্ভুত স্বস্তি। যা মহীন্দ্রা থেকে ব্যারেটোকে ফিরিয়ে আনার সময়ও দেখা যায়নি। আসলে এগারো দিন আগে অঞ্জন ও অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত গোয়ায় গিয়ে কথাবার্তা পাকা করে আসার পরও সংশয়ে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত ওডাফা না পিছলে যান। গোয়ায় প্রচন্ড ক্ষমতাশালী চার্চিলের মন্ত্রী ভাইয়েরা না তাঁকে আটকে দেয়। সেই আশঙ্কা থেকেই মঙ্গলবার সকালে ওডাফার স্ত্রী, শ্যালিকা ও তিন ছেলে-মেয়েকে গোয়া থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন ক্লাব কর্তারা। রেখেছিলেন হাঙ্গার ফোর্ড স্ট্রিটে প্রেসিডেন্ট টুটু বসুর বাড়িতে। মঙ্গলবার পুণে-চার্চিল ম্যাচ ছিল পুণেতে। ওই ম্যাচে দুই গোল করে এ দিন বেঙ্গালুরু হয়ে বারোটা নাগাদ শহরে পৌঁছন আই লিগে গত তিনবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তাঁকে তড়িঘড়ি চুক্তিপত্রে সই করানোর পরই ক্লাব কর্তারা তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন তাঁবুতে। শুক্রবারই আবার লাগোস চলে যাচ্ছেন তিনি।
ওডাফা বলে দিলেন, “ক্লাব কর্তারা আমাকে কথা দিয়েছেন শক্তিশালী দলই গড়বেন। ওদের উপর আমার আস্থা আছে।” চিমা, ব্যারেটোর মতোই একই ক্লাবে খেলে দু’শোরও বেশি গোল করা বিদেশি এরপর যোগ করলেন, “চার্চিলের মতো মোহনবাগান কর্তারাও নিশ্চয়ই আমার প্রতি নজর রাখবেন।” ব্যারেটো যাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার দেখা ভারতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফরোয়ার্ড’, সেই ব্যারেটোর জন্য নিজের দশ নম্বর জার্সিটা ছেড়ে দিতে চান ওডাফা। বললেন, “ব্যারেটো পাশে থাকলে আমরা আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে। ব্যারেটো দশ নম্বর জার্সি পরবে। আমি ১০১।” আবার হাততালিতে ফেটে পড়ল তাঁবু।
ওডাফাকে হারিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন চার্চিল কর্তারা। এ দিনই তাঁরা বাতিল করে দিল তাদের বর্তমান কোচ মিমিচকে। গোয়া থেকে ফোনে চার্চিল আলেমাও বললেন, “আমরা পর্তুগাল থেকে একজন কোচ ও ফুটবলার আনছি। ওডাফার ক্ষতি আমরা পুষিয়ে দেব।” আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহনবাগান কর্তারা আরও কয়েকজন ফুটবলারের নাম জানাবেন। ক্লাব সূত্রের খবর, নবির সঙ্গে আরও কিছু চমক দিতে চান তাঁরা। সুনীল ছেত্রীও তাদের লক্ষ্য। কিন্তু চিরাগ ইউনাইটেডের স্পনসর কর্তা কৌস্তুভ রায় দাবি করলেন, “সুনীলের সঙ্গে আমাদের পাকা কথা হয়ে গেছে। ও ভারতে খেললে চিরাগেই খেলবে। সুব্রত ভট্টাচার্যও কোচ থাকছে।” এ দিকে চিডি এ দিনই সই করে দিলেন সালগাওকরে।

Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.