যত কথা বরং ট্রেভর মর্গ্যানের। স্বীকার করলেন, রানার্স হওয়ার কথা একেবারে ভাবেনইনি। ভাবতে পারেননি ডেম্পো ৪ গোলে হেরে যাবে। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বেরনোর মুখে জানতে চাই, মরসুমে ইস্টবেঙ্গলকে দশের মধ্যে কত দেবেন? মুখ ভর্তি হাসি ছড়িয়ে অস্ট্রেলীয় কোচ বলে গেলেন, “দশের মধ্যে এগারো”।
বলেন কী? আই লিগ নেই। ডুরান্ড, শিল্ডে হার। তবু দশের মধ্যে এগারো বাড়াবাড়ি নয়, সাহেব? বরং ম্যাচটা দেখে ফেরার সময় ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন সহকারী কোচ বিকাশ পাঁজির মন্তব্যে বেশি বাস্তব। “পুরো দলটা দশে সাত পাবে। মেহতাব, ওপারা আর টোলগে দশে দশ।” পাঁচ বছর আগে শেষ যে বার ইস্টবেঙ্গল রানার্স হয়, সেই দলটার কোচও ছিলেন ভিআইপি বক্সে। ফিলিপ ডি’রাইডার বাড়ি ফেরার মুখে অকপট, “সে বারের থেকে এ বার ইস্টবেঙ্গল তো অনেক ভাল দল। সে বার আমার স্ট্রাইকারই ছিল না। গৌরাঙ্গ দত্তকে নিয়ে খেলতে হল।”
মর্গ্যান তা হলে চোখ টানলেন কোথায়? সাহসে। ২-০ এগিয়ে থাকার পরে সুনীল ছেত্রী দুর্দান্ত দূরপাল্লার শটে ১-২ করলেন। তার পরেও মর্গ্যান তুলে নিলেন টোলগে, মেহতাবকে। ওপারা এবং পেন তো প্রথম থেকেই ভিআইপি বক্সে খেলা দেখছেন। আর পেনের ডেম্পো যাওয়া নিয়ে রসিকতা করছেন। তবু মর্গ্যান পরপর তুলে নিলেন দুই সেরাকে। ভাগ্য এই সাহসকে কুর্নিশ করবে না?
মেহতাব-টোলগে-ওপারা-পেনহীন ইস্টবেঙ্গলকে পেয়েও চিরাগ অন্ধকারে ডুবে রইল। ইস্টবেঙ্গল খারাপ তো, চিরাগ কুৎসিত। সুশান্ত ম্যাথুর মতো সাধারণ মানের ফুটবলার ১৮ মিনিটে একটা বিশ্বমানের গোল করেছিলেন দূরপাল্লার শটে। সুনীল ছেত্রীদের সেটাও তাতাল না। বরং কাঁপল টোলগের দৌড়ে, মেহতাবের মাঝমাঠ দখলের মেহনতি ফুটবলে। টোলগের সেন্টার ক্লিয়ার করতে গিয়ে গোলেই ঢুকিয়ে দিলেন এই মুহূর্তে বাংলার অন্যতম সেরা স্টপার অর্ণব।
দাঁড়ান, আরও বলে নিই। সুনীল ১-২ করার সময় ২৭ মিনিট বাকি ছিল। তবু লালকমল, সুনীলদের দেখে মনে হল, দলবদলের ঘণ্টা শুনে আচ্ছন্ন। বাড়তি দৌড়ও হল না। দলটা যে কেন সবচেয়ে কম ম্যাচ (৫) জিতেছে, সবচেয়ে বেশি ড্র (১৪) করেছে বোঝা যাচ্ছিল।
আই লিগের রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে বিখ্যাত পাগড়ি আর পরের বার দেখা যাবে না। পনেরো বছর টানা থাকার পরে সুখবিন্দর সিংহ আর থাকছেন না। সুভাষ ভৌমিকও ব্যর্থতার পরে থাকেন কী করে? আর এক ‘সু’-- দীর্ঘ দিনের মুখ সুব্রত ভট্টাচার্য আপাতত থাকলেও তাঁর আসন টলমল। স্পনসর রাখতে চাইলেও ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে টরে টক্কা চলছে সব সময়।
সুভাষ ৬ নম্বর। সুব্রত ৮ নম্বর। সুখবিন্দর ১৪ নম্বর।
কে বলল সূর্যাস্ত শুধু উত্তর দিকেপঞ্জাব ফুটবলেই? আই লিগ সূর্যাস্ত আনল দীর্ঘদিনের ভারতীয় কোচিং মডেলেও। ‘সু’রা কেউ সুখে নেই! |