নেমে গেল প্রথম বারের চ্যাম্পিয়ন
দুই শহরের নাটকে ইস্টবেঙ্গল রানার্স
ইস্টবেঙ্গল-২ (সুশান্ত,অর্ণ ব-আত্মঘাতী)
চিরাগ ইউনাইটেড-১ (সুনীল)
খালি গায়ের মেহতাব হোসেন দৌড়তে দৌড়তে মাঠে ঢুকে গেলেন। ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে সামান্য একটা জয়ধ্বনি উঠেই থেমে গেল। অন্যরা নির্বিকার। মর্গ্যান হাঁটা লাগালেন ড্রেসিংরুমের দিকে।
গুপী-বাঘার পাতে আকাশ থেকে মণ্ডা বৃষ্টির মতো রানার্স খেতাবটা ঝুপ করে ইস্টবেঙ্গলের থালায়। তার জয়োৎসব এত রং হীন?
হাজার মাইল দূরের দুটো শহর, মারগাও এবং ফাগোয়ারার দুটো ছবি বরং অনেক হৃদয়স্পর্শী। আরও নাটকীয়। বুধবার ভারতীয় ফুটবলের দক্ষিণ দিকে সূর্যোদয়, উত্তর দিকে সূর্যাস্ত।
মারগাওতে হ্যাল ফুটবলাররা অনেকটা শ্মশানযাত্রা থেকে বেঁচে উঠলেন ডেম্পোকে ৪-২ অবাক হারিয়ে। কাঁদছিলেন আনন্দে।
ইস্টবেঙ্গলের হয়ে শেষ ম্যাচ? নবি যেন বিদায় জানাচ্ছেন সমর্থকদের। -শঙ্কর নাগ দাস

ফাগোয়ারায় সুখবিন্দর সিংহ তাঁর ফুটবলারদের নিয়ে বসেছিলেন একসঙ্গে। টিভিতে ম্যাচ দেখাচ্ছে না। শুধু মোবাইলে কান মারগাওয়ের ম্যাচের খবর পেতে। শুধু অঙ্ক আর হিসেব নিকেশ। হ্যালের অবিশ্বাস্য জয়ের পরে শোকস্তব্ধ সুখবিন্দরের বিশ্বাস হচ্ছিল না, তাঁরা প্রথম বার আই লিগ থেকে অবনমনে।
ভারতীয় ফুটবল মানচিত্রের উত্তর দিকটা একেবারে মুছেই গেল। প্রথম লিগজয়ীদের বিদায়ে আর পঞ্জাব বলে কিছু রইল না আই লিগে। এমনিতেই ফেডারেশনের সৌজন্যে আই লিগ মানে ছটা রাজ্যের লিগ! মাঝে সেটা দাঁড়াত তিন রাজ্যের লিগবাংলা, গোয়া, পঞ্জাব। সেই পঞ্জাব রইল না।
স্রেফ গোলপার্থক্য দেখলে অবনমনে যাওয়ার কথা আসলে এয়ার ইন্ডিয়া এবং হ্যালের। কিন্তু সুখবিন্দররা কেউ খেয়ালই করেননি, আই লিগের নিয়ম অন্য। স্পেনের লা লিগার নিয়ম সেখানে। চারটে দলের পয়েন্ট সমান হলে তাদের নিজেদের খেলাগুলো নিয়ে আর একটা ছোট লিগের হিসাব দেখা হবে। সেখানে পয়েন্টে কপাল পুড়ল লিগের অভিজ্ঞতম কোচ ও পুরনো স্পনসর ওএনজিসি-র। “খেয়ালই করিনি নিয়মটা। আর বুঝতেও পারিনি, যে ডেম্পো আগের দিন ১৪ গোল দিল, তারা এ বার নিজেদের মাঠে হ্যালের কাছে ৪ গোল খাবে।” সদা হাস্যময় সুখি তাঁর ম্যাচ চলাকালীনও কথা বলেন সাংবাদিকদের ফোন পেলে। এ দিন সেই মুখে শব্দ নেই।

আই লিগের চূড়ান্ত ছবি

  খেলা জয় হার গোল পয়েন্ট
সালগাওকর ২৬ ১৮ ৫৮-২৭ ৫৬
ইস্টবেঙ্গল ২৬ ১৫ ৪৪-২১ ৫১
ডেম্পো ২৬ ১৫ ৬৩-৩৪ ৫০
চার্চিল ব্রাদার্স ২৬ ১৪ ৫৭-৩১ ৫০
পুণে এফ সি ২৬ ৩২-২৭ ৩৬
মোহনবাগান ২৬ ১০ ৩৪-৩২ ৩৪
মুম্বই এফ সি ২৬ ১০ ২৪-২৮ ৩৪
চিরাগ ইউনাইটেড ২৬ ১৪ ৩১-৩৬ ২৯
ইন্ডিয়ান অ্যারোজ ২৬ ১১ ৩১-৪৯ ২৯
ভিভা কেরল ২৬ ১১ ৩০-৩৬ ২৭
এয়ার ইন্ডিয়া ২৬ ১২ ২৫-৫৭ ২৪
হ্যাল ২৬ ১৪ ১৮-৪০ ২৪
ওএনজিসি ২৬ ১২ ২৫-৩৬ ২৪
জেসিটি ২৬ ১৪ ১৭-৩৫ ২৪

যত কথা বরং ট্রেভর মর্গ্যানের। স্বীকার করলেন, রানার্স হওয়ার কথা একেবারে ভাবেনইনি। ভাবতে পারেননি ডেম্পো ৪ গোলে হেরে যাবে। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বেরনোর মুখে জানতে চাই, মরসুমে ইস্টবেঙ্গলকে দশের মধ্যে কত দেবেন? মুখ ভর্তি হাসি ছড়িয়ে অস্ট্রেলীয় কোচ বলে গেলেন, “দশের মধ্যে এগারো”।
বলেন কী? আই লিগ নেই। ডুরান্ড, শিল্ডে হার। তবু দশের মধ্যে এগারো বাড়াবাড়ি নয়, সাহেব? বরং ম্যাচটা দেখে ফেরার সময় ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন সহকারী কোচ বিকাশ পাঁজির মন্তব্যে বেশি বাস্তব। “পুরো দলটা দশে সাত পাবে। মেহতাব, ওপারা আর টোলগে দশে দশ।” পাঁচ বছর আগে শেষ যে বার ইস্টবেঙ্গল রানার্স হয়, সেই দলটার কোচও ছিলেন ভিআইপি বক্সে। ফিলিপ ডি’রাইডার বাড়ি ফেরার মুখে অকপট, “সে বারের থেকে এ বার ইস্টবেঙ্গল তো অনেক ভাল দল। সে বার আমার স্ট্রাইকারই ছিল না। গৌরাঙ্গ দত্তকে নিয়ে খেলতে হল।”
মর্গ্যান তা হলে চোখ টানলেন কোথায়? সাহসে। ২-০ এগিয়ে থাকার পরে সুনীল ছেত্রী দুর্দান্ত দূরপাল্লার শটে ১-২ করলেন। তার পরেও মর্গ্যান তুলে নিলেন টোলগে, মেহতাবকে। ওপারা এবং পেন তো প্রথম থেকেই ভিআইপি বক্সে খেলা দেখছেন। আর পেনের ডেম্পো যাওয়া নিয়ে রসিকতা করছেন। তবু মর্গ্যান পরপর তুলে নিলেন দুই সেরাকে। ভাগ্য এই সাহসকে কুর্নিশ করবে না?
মেহতাব-টোলগে-ওপারা-পেনহীন ইস্টবেঙ্গলকে পেয়েও চিরাগ অন্ধকারে ডুবে রইল। ইস্টবেঙ্গল খারাপ তো, চিরাগ কুৎসিত। সুশান্ত ম্যাথুর মতো সাধারণ মানের ফুটবলার ১৮ মিনিটে একটা বিশ্বমানের গোল করেছিলেন দূরপাল্লার শটে। সুনীল ছেত্রীদের সেটাও তাতাল না। বরং কাঁপল টোলগের দৌড়ে, মেহতাবের মাঝমাঠ দখলের মেহনতি ফুটবলে। টোলগের সেন্টার ক্লিয়ার করতে গিয়ে গোলেই ঢুকিয়ে দিলেন এই মুহূর্তে বাংলার অন্যতম সেরা স্টপার অর্ণব।
দাঁড়ান, আরও বলে নিই। সুনীল ১-২ করার সময় ২৭ মিনিট বাকি ছিল। তবু লালকমল, সুনীলদের দেখে মনে হল, দলবদলের ঘণ্টা শুনে আচ্ছন্ন। বাড়তি দৌড়ও হল না। দলটা যে কেন সবচেয়ে কম ম্যাচ (৫) জিতেছে, সবচেয়ে বেশি ড্র (১৪) করেছে বোঝা যাচ্ছিল।
আই লিগের রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে বিখ্যাত পাগড়ি আর পরের বার দেখা যাবে না। পনেরো  বছর টানা থাকার পরে সুখবিন্দর সিংহ আর থাকছেন না। সুভাষ ভৌমিকও ব্যর্থতার পরে থাকেন কী করে? আর এক ‘সু’-- দীর্ঘ দিনের মুখ সুব্রত ভট্টাচার্য আপাতত থাকলেও তাঁর আসন টলমল। স্পনসর রাখতে চাইলেও ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে টরে টক্কা চলছে সব সময়।
সুভাষ ৬ নম্বর। সুব্রত ৮ নম্বর। সুখবিন্দর ১৪ নম্বর।
কে বলল সূর্যাস্ত শুধু উত্তর দিকেপঞ্জাব ফুটবলেই? আই লিগ সূর্যাস্ত আনল দীর্ঘদিনের ভারতীয় কোচিং মডেলেও। ‘সু’রা কেউ সুখে নেই!

First Page Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.