গরম পড়তেই পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়েছে রেলশহর খড়্গপুরে। শহরের বুলবুলচটি, কৌশল্যা, পাঁচবেড়িয়া-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জলের সমস্যা তীব্র হয়ে উঠেছে। এক বালতি জলের জন্য দীর্ঘক্ষণ রাস্তার কলের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে বচসাতেও জড়িয়ে পড়ছেন তাঁরা। খড়্গপুর পুর-শহরের জন্য শহরে আরও একটি জল প্রকল্প হওয়ার কথা। কিন্তু সেই প্রকল্প এখনও পরিকল্পনার স্তরেই রয়েছে। ফলে কাজ শুরু হতে আরও সময় লাগবে। তার আগে জলের সমস্যা মিটবে কী করে, এখন তাই ভাবাচ্ছে পুর-কর্তৃপক্ষকে।
দু’দিন আগেই খড়্গপুর পুরসভায় বোর্ড মিটিং হয়েছে। সেই মিটিংয়ে অবশ্য জলের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উঠে এসেছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জলের সমস্যা দূর করতে নতুন করে শহরে আপাতত আরও ১৬টি গভীর নলকূপ তৈরি করা হবে। পুরপ্রধান জহরলাল পালের বক্তব্য, “পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।” রেলশহরের কয়েকটি এলাকায় যে জলের সমস্যা রয়েছে, তা মেনে নিয়েই কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনেকে অবৈধ ভাবে বাড়ির জলাধারে জল তোলেন। আবার জল অপচয়ও করেন। অপচয় না-হলে শহরে জলের সমস্যা অনেকটাই কম হত বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। জল দফতরের ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান-পারিষদ সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরে আরও ১৬টি গভীর নলকূপ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শহরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। কোনও ভাবেই যেন জলের অপচয় না-হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে।”
গরম পড়লেই রেলশহরে জলকষ্ট দীর্ঘ দিনের। ট্যাপকলগুলোর মুখে বাসিন্দাদের দীর্ঘ লাইন পড়ে। এ বারও তাই হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, কয়েকটি এলাকায় জলকষ্ট শুরু হলেও এ বার জল সমস্যা অপেক্ষাকৃত কমই। অভিযোগ, পুরসভা শহরের বাড়িতে বাড়িতে যে নলবাহী পানীয় জল সরবরাহ করে সেই নলের মুখে পাইপ লাগিয়ে পাম্পে অনেকে জল জলাধারে তোলেন। এ ভাবেই জল ‘চুরি’ চলে খড়গপুরে। এর ফলে শহরের কিছু এলাকায় পর্যাপ্ত পানীয় জল এসে পৌঁছয় না। ফলে জল না-পেয়ে বাসিন্দাদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। কিন্তু সব জেনেবুঝেও দীর্ঘ দিন পুর-কর্তৃপক্ষ নীরব ছিলেন বলে অভিযোগ। শহরবাসীর মন পেতে গত বছর থেকে বাড়ি বাড়ি হানা দিতে শুরু করেন পুরকর্মীরা। বেশকিছু পাম্প বাজেয়াপ্তও করা হয়।
সদ্য-সমাপ্ত বোর্ড মিটিংয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। জল ‘চুরি’ ঠেকাতে কাউন্সিলরদের নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অবৈধ ভাবে জল তোলার খবর এলেই সংশ্লিষ্ট বাড়িতে হানা দেবেন পুর-কর্মীরা। পাম্প মেশিন বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি প্রয়োজনে ওই বাসিন্দার কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করা হবে। জল দফতরের পুরপ্রধান পারিষদ বলেন, “এক জনের জন্য দশ জন সমস্যায় পড়বেন, তা হয় না। অবৈধ ভাবে জল তোলার খবর এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, অপচয় আর এ ভাবে জল তোলা বন্ধ হলে শহরে জলের সমস্যা থাকবে না। পুরসভা সূত্রের খবর, কৌশল্যা এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে জলের সমস্যা রয়েছে। সমস্যা সমাধানে এখানে একটি গভীর নলকূপও তৈরি করা হয়েছে। এক সপ্তারের মধ্যেই এই নলকূপ চালু হয়ে যাবে। ফলে কৌশল্যা ও সংলগ্ন এলাকায় জলের সমস্যা থাকবে না। এর পরই শহরে আরও কয়েকটি গভীর নলকূপ তৈরির তৎপরতা শুরু হবে। |