চিঠি এসেছে। উন্নয়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে লিখিত ভাবে। আর তাতেই আশায় বুক বাঁধছেন কেনারাম আর আরতি আড়ি। বলছেন, “এ বার বুঝি সুদিন আসবে। শুধু আমাদের নয়, গোটা গ্রামের, লোধা সম্প্রদায়ের সব মানুষেরই উন্নয়ন হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর ১ ব্লকের কুচলাতাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হতদরিদ্র আড়ি দম্পতি। গত ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসে পিছিয়ে পড়া লোধা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হয়েই তাঁরা গিয়েছিলেন নয়াদিল্লিতে, রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের সঙ্গে দেখা করতে। তখনই জানিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের এবং গোটা গ্রামের দুর্দশার কথা। সামগ্রিক ভাবে লোধা সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়ার কাহিনীও শুনিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতিকে। বলেছিলেন, “গ্রামে সজলধারা প্রকল্প নেই। বিশুদ্ধ পানীয় জল পাই না। একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পাই মেরেকেটে ৮-১০ দিন। বাকি সময়টা জঙ্গলের কাঠ-পাতা বিক্রি করে অনেক কষ্টে সংসার চলে।” তখনই আশ্বাস মিলেছিল দিন বদলাবে। |
তবু সংশয় ছিল। মুখের কথায় তো আর চিঁড়ে ভেজে না!
তবে এ বার আড়ি দম্পতির হাতে এসেছে লিখিত আশ্বাস। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের সহ-সচিব অতীন্দ্রনাথ দাসের চিঠি এসেছে কেনারামবাবুর কাছে। ইংরেজিতে লেখা চিঠি। তাই বুঝতে না পেরে চিঠি নিয়ে ছুটেছেন গ্রামের লেখাপড়া জানা লোকের কাছে। তারপরই জানতে পেরেছেন, লোধাদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার নানা ব্যবস্থা নেবে বলে ওই চিঠিতে লেখা রয়েছে। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক জ্যোতির্ময় তাঁতির কাছে এসেছিলেন কেনারামবাবু। সঙ্গে গ্রামেরই বাসিন্দা কার্তিক কোটাল। এক গাল হেসে চিঠিটি ধরিয়ে দিলেন জ্যোতির্ময়বাবুর হাতে। বললেন, “স্যার, এ বার বোধ হয় কাজ হবে, তাই না।” জ্যোতির্ময়বাবু কেনারামবাবুকে আশ্বস্ত করে বলেন, “নিশ্চয়ই হবে। আপনাদের গ্রামের সমস্যাগুলি বলুন।” রাস্তা নেই, ইন্দিরা আবাসের বাড়ি নেই, সেচের জল নেই, জমির পাট্টা নেই, একশো দিনের কাজ নেই দীর্ঘ তালিকা শুনিয়ে গেলেন কেনারামবাবু। আর তা লিপিবদ্ধ করে গেলেন সামনের চেয়ারে বসা আধিকারিক। সব শুনে বললেন, “নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে উন্নয়ন হবে। পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে সরকার জোর দিয়েছে।”
গত ১৫ মার্চ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে আড়ি দম্পতির সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। ইতিমধ্যে রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরই কেনারাম আড়ির হাতে লিখিত আশ্বাসের চিঠি পৌঁছেছে। এখন তাঁদের জীবনেও পরিবর্তন আসবে, আশাবাসী কেনারামবাবু। তাঁর কথায়, “আমি রাষ্ট্রপতির কাছে দুঃখের কথা জানাতে পেরেছি। এ বার রাজ্যেও সরকার বদলেছে। উন্নয়নের আশ্বাস দেওয়া চিঠি পেয়েছি। তাই আশা, এ বার হয়তো কিছু একটা হবে।” কুচলাতাড়ি গ্রামের সবাই সেই আশাতেই বুক বেঁধেছেন। |