কোর্টের নির্দেশে বন্ধ পুকুর ভরাট
ঞ্চায়েত অফিসের নাকের ডগাতেই ছাই আর মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছিল পুকুর। গ্রামের কিছু বাসিন্দার বাধা এবং কলকাতার এক আইনজীবীর তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত তা আটকানো গিয়েছে। প্রশাসনের দাবি, পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। যদিও কিছু গ্রামবাসী তা মানতে চাননি।
রায়নার মহেশবাটি মৌজায় ২৪ শতকের ওই ‘খানা পুকুর’ বোজানো শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে। স্থানীয় একটি আশ্রমের উৎসবের অজুহাতে প্রথমে কালো ছাই এবং পরে বড় বড় এঁটেল মাটির চাঁই ভরাটের কাজ শুরু করেন পুকুরের দুই-তৃতীয়াংশের মালিক, পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক দিলীপকুমার দাস। ওই বছরই ২৩ ডিসেম্বর রায়না পঞ্চায়েত ও জেলা প্রশাসনের কাছে নালিশ জানান গ্রামের কিছু বাসিন্দা। সিপিএমের পঞ্চায়েত দিলীপবাবুকে চিঠি দিয়ে পুকুর বোজাতে বারণ করে। ব্যস, সেটুকুই। আর কোনও ব্যবস্থা কার্যত নেওয়া হয়নি।
ঘটনার মোড় ঘুরে যায় কলকাতার আইনজীবী বিমানকৃষ্ণ বসু এ বছরের গোড়ায় হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার পরে। বিমানবাবুর মামার বাড়ি মহেশবাটি গ্রামে। সেখানে গিয়েই তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি মামলা দায়ের করার পরে বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসককে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রায়না ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর হাইকোর্টে লিখিত ভাবে জানায়, মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে তদন্ত করে দেখা গিয়েছে, ১০০ ফুটের মত ভরাট করা অংশের মধ্যে ৭৫ ফুট জায়গা থেকেই মাটি ও ছাই তুলে ফেলা হয়েছে।
এই পুকুর নিয়েই টানাপোড়েন। নিজস্ব চিত্র।

পরে হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে বর্ধমান জেলা প্রশাসন জানায়, পুকুরের মাঝ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত যে জায়গা দিলীপবাবু ভরাট করেছিলেন, তার মধ্যে ৮৫ ফুট মুক্ত হয়েছে। ভরাট থাকা বাকি ১৫ ফুটের মধ্যে ১০ ফুট পুকুরের পাড় বলে চিহ্নিত। তার পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা গিয়েছে। রাস্তা সংলগ্ন ওই ১৫ ফুট অংশ থেকেও মাটি ও ছাই তুলে ফেলতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। শেষমেশ ৯ মার্চ হাইকোর্টে পেশ করা রিপোর্টে অতিরিক্তজেলাশাসক এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে জানানো হয়, পুকুরটি সম্পূর্ণ ভাবে আগের অবস্থায় ফিরেছে। পুকুরটির চরিত্র অপরিবর্তিত রাখার জন্য ১৭ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ জেলা প্রশাসন, মৎস্য দফতর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে নির্দেশ দেন।
দিলীপবাবুর দাবি, “হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার আগেই আমি পুকুরে ফেলা ছাই ও মাটি সরিয়ে ফেলেছি। ওই পুকুরের জলকর অংশ ১৬ শতক, তা এখন সম্পূর্ণ মুক্ত।” কিন্তু গ্রামবাসীর অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও পুকুর ভরাট করা আটকানো হল না কেন? সিপিএম নিয়ন্ত্রিত রায়না পঞ্চায়েতের প্রধান মাধবীলতা ধারা প্রথমে দাবি করেন, “ও সব ব্লক অফিস থেকে করা হয়।” কিন্তু রাজ্যের জলাভূমি রক্ষা আইনে যে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পুরসভাকে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে? এ বার প্রধান বলেন, “আমাদের না জানিয়েই ওই কাজ করা হয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। তিনি তা করেওছেন।”
স্থানীয় বাসিন্দা নন্দদুলাল সরকার, চৌধুরী হবিবুল মহসিনেরা অবশ্য অভিযোগ করেন, ওই পুকুরের কিছুটা এখনও ভরাট অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে। প্রধানের প্রতিক্রিয়া, “পুকুরের মাপ আমাদের কাছে নেই। তাই কোনও অংশ ভরাট অবস্থায় রয়ে গিয়েছে কি না, তা বলতে পারব না।”

Previous Story Jibjagat Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.