সংস্কার হওয়া অংশে ফের বসছে ভেচাল, ব্যাহত হচ্ছে নদীর স্রোত
উঠল ইছামতীর উৎসমুখ সংস্কারের দাবি

গুরুত্বপূর্ণ ইছামতী নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার নদীপাড়ের মানুষজন। সেই দাবি মেনে কয়েকবার নদীর সংস্কার করা হলেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার অবশ্য হয়নি। অথার্ৎ নদীর উৎসমুখ থেকে সংস্কারের যে দাবি তুলেছিলেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা তা বারবারই উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে। সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের তরফে ইছামতী সংস্কার শুরু হওয়ার পরেও বার বার দাবি জানানো হলেও উৎসমুখ সংস্কার নিয়ে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। কমিশনের সিদ্ধান্তে মূলত সীমান্তের এপার এবং ওপারে পলি তোলার ব্যাপারেই বেশি আলোকপাত করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী কাজও চলছে। কিন্তু নদী সংলগ্ন এলাকার মানুষ মনে করেন, ইছামতীর উৎসমুখ থেকে সংস্কার করা না হলে শুধু মধ্যবর্তী এলাকায় সংস্কারের সুফল পাওয়া যাবে না। এ নিয়ে তাঁরা বহুবার আবেদন জানালেও তা কোনও কাজেই আসেনি। সম্প্রতি রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তৃমমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি নির্বাচনের আগে উত্তর ২৪ পরগনার যে দুই অংশ দিয়ে ইছামতী প্রবাহিত হয়েছে সেই বনগাঁ ও বসিরহাটের মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ইছামতীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের। আর তাই এখন নিজেদের দাবিপূরণের আশায় বুক বেঁধেছেন ইছামতীর দুই পারের মানুষ।

একদিকে নদীর বুক থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে পলি।

সোমবার নদীর উৎসমুখ সংস্কারের দাবি নিয়ে রাজ্যের সেচ ও জলপথ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডলের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটির তরফে। যাঁরা ১৯৯৭ সাল থেকে ইছামতীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। এ দিন সংগঠনের তরফে নদীর একটি বেসিন মানচিত্রও তৈরির দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে। শ্যামলবাবু বলেন, “ইছামতী নদীর উৎসমুখ সংস্কারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের করতেই হবে।” প্রসঙ্গত, নদিয়ার মাজদিয়ার পাবাখালি থেকে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ পর্যন্ত প্রায় ২০৮ কিলোমিটার ইছামতী নদী। পাবাখালিতে মাথাভাঙা নদী থেকে ইছামতীর সৃষ্টি হলেও বহুবছর ধরেই কার্যত ইছামতীর কোনও উৎসমুখ নেই। কমিটি এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাবাখালি থেকে স্থানীয় ভজনঘাট পর্যন্ত প্রায় নয় কিলোমিটার অংশে নদীতে জলের কোনও অস্তিত্ব নেই। চরা পড়ে যাওয়ায় তার উপর দিয়ে চলাচল করছেন ওই এলাকার মানুষজন। চলছে যানবাহন। এমনকী চাষবাসও।
কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৪০ সালে পাবাখালিতে রেলের একটি সেতু তৈরি হয়। ওই সময় নদীর মধ্যে লোহার পাত দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালে সেতুর উদ্বোধন হলেও সেই বাঁধ আর খুলে দেওয়া হয়নি। ফলে মাথাভাঙা নদী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইছামতী নদী।
কমিটির সম্পাদক সুভাষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নদীর মালিক রাজ্যের সেচ ও জলপথ দফতর। অতীতে বহুবার রাজ্যে সরকারের কাছে ইছামতী নদীর উৎসমুখ সংস্কারের দাবি জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। উৎসমুখ সংস্কার না করে বিক্ষিপ্ত ভাবে এখানে-ওখানে সংস্কার করা হলে অর্থেরই অপচয় হবে। সমস্যার কোনও সুরাহা হবে না। আমাদের আশা নতুন সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন।”
২০০৫ সালে রাজ্য সরকারের তরফে গাইগাটার কালাঞ্চি সেতু থেকে স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া সেতু পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদীপথের সংস্কার করা হয়। নদীর বুক থেকে পলি তুলে রাখা হয়েছিল নদীর পাড়েই। কিন্তু বর্ষায় সেই পলি ধুয়ে ফের নদীবক্ষে মিশে যায়। ফলে নদী সংস্কারের সুফল নিয়েই উঠে যায় প্রশ্ন। বর্তমানে ওই এলাকায় পলি জমে ফের নাব্যতা হারিয়েছে ইছামতী। সেই সুযোগে ফের নদীবক্ষে বসেছে ভেচাল।

পলি তোলা অংশে ফের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে মাছ ধরার ভেচাল।
২০১০ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের উদ্যোগে ফের সংস্কার শুরু হয় ইছামতীর। সেই কাজ এখনও চলছে। কিন্তু যে সব এলাকায় সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে সেখানে ফের নদীর বুকে মাছ ধরার জন্য বসানো হয়েছে ভেচাল। ফেলা হয়েছে গাছের ডালপালা। ফলে নদীর স্বাভাবিক স্রোত ব্যাহত হচ্ছে।
কেন এ সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না প্রশ্ন করা হলে বনগাঁর মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “নদী সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে না পারলে আইন করেও এ সব বন্ধ করা যাবে না। নদীপাড়ের বাসিন্দাদের এবং মৎস্যজীবীদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত ও জন প্রতিনিধিদের বলব।” বনগাঁর সাংসদ গোবিন্দ চন্দ্র নস্কর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী সলমন খুরশিদের কাছে ইচামতীর উৎসমুখ সংস্কারের জন্য দাবি জানানো হয়েছে। ওঁরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন এ ব্যাপারে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস বলেন, “নদী বাঁচাতে সংস্কার জরুরি। নদীর স্বাভাবিক স্রোত বজায় রাখতে নদীর বুকে ভেচাল বসানো বন্ধ হওয়া উচিত। আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করব। তবে মৎস্যজীবীদের দিকটিও দেখা দরকার।”
ইছামতীতে পার্থসারথি নন্দীর তোলা ছবি।
First Page Jibjagat Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.