সিঙ্গুর প্রকল্পের ৪০০ একর জমি ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার রাস্তা বের করতে বুধবার থেকে মহাকরণে জোরদার প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হল।
মঙ্গলবার ওই প্রকল্প-এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের কাছে বুধবার সবিস্তার রিপোর্ট জমা দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবু পরে বলেন, “রিপোর্ট জমা দিয়ে গেলাম। এ বার মুখ্যমন্ত্রীই সিঙ্গুরের প্রকল্প সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
রাজ্যের নতুন জমি-নীতি তৈরি করতে মুখ্যমন্ত্রীর গঠিত কমিটির সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই মহাকরণে আসেন। জমি-নীতি তৈরি সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া ছাড়াও সিঙ্গুরের ৪০০ একর জমি ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের কী ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে ভূমি দফতরের শীর্ষ স্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন তিনি। বৈঠকে ডেকে নেওয়া হয় হুগলির জেলা শাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজনকেও। জেলা শাসককে বলা হয়েছে, সিঙ্গুরের প্রকল্প এলাকার ঠিক কোথায় কোথায় ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের ঠিক কত পরিমাণ জমি ছিল, নাম ধরে ধরে সেই তথ্য ফের যাচাই করে দ্রুত তা মহাকরণে পাঠাতে। বিকেলে মহাকরণ ছেড়ে বেরোনোর সময় দেবব্রতবাবু বলেন, পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। ওই জমি নিয়ে টাটা মোটরসের সঙ্গে আগের সরকারের চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনগত দিক নিয়ে কমিটির অন্য সদস্য, কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী সৌমেন্দ্র নাথ বসুর সঙ্গে আলাদা ভাবে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর পার্থবাবু বলেন, “জমি ফেলে রাখা যাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি মতো ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের ৪০০ একর জমি ফেরত দেওয়া প্রধান কাজ।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, জমি ফেলে রাখা যাবে না বলছেন। তা হলে কি টাটাদের সঙ্গে কথা বলবেন? জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “কথা তো হবেই। টাটারা যদি করতে চান, কারখানা করুন। তবে আগেও বলেছি, এখনও বলছি জমি এ ভাবে ফেলে রাখা যাবে না।”
সিঙ্গুর প্রকল্পে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরতের বিষয়ে পাঁচ দিন ধরে শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিল্পমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, “যা বুঝেছি তাতে বলতে পারি, জমি ফেরত দেওয়া যায়। চাই শুধু হৃদয় এবং সদিচ্ছা। এখন মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত কত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত করা যায়, সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।” কৃষি ও শিল্প পাশাপাশি গড়ে তোলার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “শিল্প হোক, আমরাও চাই। তবে, অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দিয়েই কারখানা গড়তে হবে। আমরা হাসি এবং খুশি দু’টোই চাই।” এ দিন সকালে মহাকরণে ভূমি দফতরের কমিশনার জেনারেলের ঘরে এসে বসেন দেবব্রতবাবু। সেখানেই ডেকে নেন দফতরের আধিকারিকদের। রাজ্যের নতুন জমি-নীতি তৈরির কাজও এ দিন থেকেই শুরু হয়েছে। দেবব্রতবাবুর পরামর্শে ভূমি সংস্কার দফতরের সচিব আর ডি মিনা এ দিন রাজ্যের সব দফতরকে বলেছেন, ৮ জুনের মধ্যে জমি-নীতি সম্পর্কে তাদের মতামত ভূমি দফতরের যুগ্ম-সচিব দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠাতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা থেকে শুরু করে হিডকো-র মতো যে-সব সরকারি সংস্থাকে জমি নিয়ে কাজ করতে হয়, সেগুলোকেও একই সময়সীমার মধ্যে মত জানাতে বলা হয়েছে। |