সম্পাদকীয় ২...
ঐতিহ্য অতি বিষম বস্তু

ন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের পরিচালক-গোষ্ঠী সম্ভবত মানেন না যে তাঁহারা স্থিতিজাড্যের শিকার। প্রতিষ্ঠানটির জন্ম ব্রিটন উড সম্মেলনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সেই জন্মলগ্নে বিশ্ব-অর্থনীতির ক্ষমতাবিন্যাস ভিন্ন ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন উদিত শক্তি, আর ইউরোপের অর্থনীতি যুদ্ধের ধাক্কা সামলাইয়াও সম্পূর্ণ অস্তমিত হয় নাই। সেই সময় ব্রেটন উডস-এ যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির জন্ম হইয়াছিল, সেগুলির নিয়ন্ত্রণক্ষমতা স্বভাবতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপ ভাগ করিয়া লইয়াছিল। কোনও লিখিত আইন নাই, কিন্তু অলিখিত প্রথা হইল, বিশ্বব্যাঙ্কের প্রধান পদে কোনও মার্কিন নাগরিক থাকিবেন, আর আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের প্রধান পদে কোনও ইউরোপীয়। তাহার পর আটলান্টিকে বহু জল বহিয়া গিয়াছে, শীতল যুদ্ধ শুরু হইয়া শেষও হইয়া গিয়াছে, বিশ্ব-অর্থনীতির মঞ্চে চিন আর ভারত নামক দুইটি শক্তির উদয় ঘটিয়াছে তবু আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের প্রধান পদে আসীন হইবার শর্তটি বদলায় নাই। ভাণ্ডারটি প্রতিষ্ঠার সময় তাহার সদস্য দেশের সংখ্যা ছিল ২৯, আর এখন তাহা ১৮৭। কিন্তু, অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাবিন্যাসটি এখনও সেই ইতিহাসের বোঝা বহন করিয়া চলিতেছে। ডমিনিক স্ট্রস কান-এর নাটকীয় বিদায়ের পর ভাণ্ডারের নূতন ম্যানেজিং ডিরেক্টরও খুব সম্ভবত ইউরোপ হইতেই নির্বাচিত হইবেন। ঐতিহাসিক জাড্য ভিন্ন এই সিদ্ধান্তের আর কোনও কারণ থাকিতে পারে না। বিশেষত, বিশ্ব-অর্থনীতির ক্ষমতাপটে ইউরোপ এখন আর বিশেষ কোনও আসন দাবি করিবার অবস্থায় নাই। গ্রিস, পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি, আয়ার্ল্যান্ড ইউরোপের আর্থিক অসুস্থতার তালিকাটি দীর্ঘ।
কেন আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের প্রধান পদে কোনও অ-ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধি প্রয়োজন, সেই কারণের তালিকাটি দীর্ঘ। প্রথম কারণ, সংস্থাটির পরিচালনায় ইউরোপের ব্যর্থতা প্রশ্নাতীত। ১৯৯৭ সালের পূর্ব-এশীয় আর্থিক সংকটই হউক বা ২০০৮ সালের মন্দা, অথবা ইউরোপের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি ভাণ্ডার কোনওটিরই আগাম আঁচ পায় নাই। ফলে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সামর্থ্যও তাহার হয় নাই। শুধুমাত্র এই কারণেই ইউরোপের এই বার বলা উচিত ঘাট হইয়াছে, এই গুরুদায়িত্ব বহনে আমরা অসমর্থ, অন্য কোনও দেশ দায়িত্ব লউক। ইউরোপ কথাটি বলিয়া উঠিতে পারে নাই। দ্বিতীয় কারণ, আর্থিক সংকটে পড়া কোনও দেশকে ঋণ দেওয়ার সময় অর্থ ভাণ্ডার এমনই কঠোর শর্তাবলি আরোপ করে যে তাহা সেই দেশকে সংকট হইতে উদ্ধার না করিয়া গভীরতর সংকটে নিক্ষেপ করিতে পারে। এই প্রবণতার সাম্প্রতিকতম উদাহরণটির নাম গ্রিস।
অর্থ ভাণ্ডারের নীতিটি সহজ সব দেশের জন্যই এক নিয়ম। এই নীতিটি যে কত বড় ভুল, সে বিষয়ে সংশয়ের আর অবকাশ নাই। তৃতীয় কারণ, অর্থ ভাণ্ডারের সাহায্য যে দেশগুলির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাহাদের অর্থনীতি বিষয়ে সম্যক ধারণা ইউরোপীয় কর্তাদের নাই বলিলেই চলে। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁহারা সমস্যার চরিত্র বুঝিতে ব্যর্থ হন, ফলে তাঁহাদের চিকিৎসাও ভুল পথে চলে। চতুর্থ কারণ, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের ন্যায় তাৎপর্যপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের পদে প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়াটিতে বিশ্ব-অর্থনীতির ক্ষমতাবিন্যাসের সম্যক প্রতিফলন হওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক কালে ভাণ্ডারের আর্থিক জোগানে চিনের ভূমিকা ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় ঢের বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধান পদটিতেই বা কেন সেই তাৎপর্যের ছাপ থাকিবে না?

Previous Item Editorial Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.