প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিন প্রতিমন্ত্রী ও বোর্ড কর্তাদের জরুরি বৈঠকে রেলের বেহাল আর্থিক অবস্থার ছবিটিই উঠে এল। আর এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় বেসরকারি লগ্নি টানার দাওয়াই-ই বাতলালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই লগ্নি কী ভাবে আসতে পারে, অবিলম্বে তার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে বোর্ড কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্তফা দেওয়ার পরে রেল মন্ত্রক এখন প্রধানমন্ত্রীরই হাতে। আজ নিজের বাসভবনে মন্ত্রকের তিন প্রতিমন্ত্রী ও বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে রেলের যে আর্থিক চিত্রটি তুলে ধরা হয়, তা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। মন্ত্রক সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম দু’মাসে রেলের প্রায় হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। বেড়েছে অপারেটিং রেশিও। তাঁকে জানানো হয়, বতর্মানে রেলের হাতে ২৬টি বড় প্রকল্প রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সেগুলির খরচ ধার্য করা হয়েছিল ৩৫,৫৭৩.৯২ কোটি টাকা। কিন্তু দেরি ও অন্যান্য কারণে ওই প্রকল্পগুলির খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১,৬২৬.৮৪ কোটি টাকায়। ওই প্রকল্পগুলিতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ২২,৬৫৮.৫৭ কোটি টাকা, যার সিংহ ভাগই করেছে রেল মন্ত্রক তথা সরকার।
গত তিনটি বাজেটে মমতা যে ক’টি বড় মাপের রেল কারখানার কথা ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলির সবই বেসরকারি লগ্নিতে গড়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনও বেসরকারি সংস্থাই সে ভাবে রেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেনি। রেল বোর্ডের কর্তারা আজ প্রধানমন্ত্রীকে জানান, পরিস্থিতি বিচার করে রেলের পিপিপি মডেলে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, এক মাত্র বেসরকারি লগ্নি এলে তবেই এই সব প্রকল্প রূপায়িত হতে পারবে। তাই এ বিষয়েই সব চেয়ে জোর দিতে হবে। এক রেল কর্তা বলেন, “বেসরকারি লগ্নি টানতে প্রয়োজনে পিপিপি মডেলকে আরও সরল ও আকর্ষণীয় করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।” রেলমন্ত্রী হয়ে মমতা সংসদে যে ‘ভিশন ২০২০’ পেশ করেছিলেন, রেল সেই পথ ধরে এগোচ্ছে কি না, সে বিষয়েও সবিস্তার জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া যাত্রী পরিষেবা কী ভাবে উন্নত করা যায়, সে দিকেও তিনি বাড়তি নজর দিতে বলেন।
তবে রেল কর্তাদের দাবি, আর্থিক অনটন সাময়িক। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, বাজেটের আগে রেলের তরফ থেকে প্রায় সমস্ত বিল মেটানো স্থগিত রাখা হয়েছিল। এখন সেই পাওনা মেটানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সমস্ত জেনারেল ম্যানেজারকে ফের ব্যয় সংকোচের পথে হাঁটার উপর জোর দিচ্ছে রেল মন্ত্রক।
চলতি মাসের শুরুতে মন্ত্রিসভায় রদবদল হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগে যে ভাবে আজ প্রধানমন্ত্রী রেল মন্ত্রকের তিন প্রতিমন্ত্রী ও বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করলেন, তাতে গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, আগামী দিনে রেল নিজের হাতেই রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী? যদিও রেল প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায় এই জল্পনাকে আমল দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রীই এখন রেলমন্ত্রী। নিজের দফতরের প্রতিমন্ত্রী ও কর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন, এ তো স্বাভাবিক ব্যাপার!
মুকুলবাবু এ কথা বললেও রাজনৈতিক সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন হাতছাড়া রেল মন্ত্রক নিজেদের হাতে রাখতে ঝাঁপাতে চাইছে কংগ্রেস। তার জন্য রেলের বেহাল আর্থিক ছবিটিই যুক্তি হিসাবে তুলে ধরা হতে পারে। |